স্টাফ রিপোর্টার : সাভারে নিত্যপণ্যের বাজারের বেজায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। আসন্ন রমজানকে ঘিরে বাজার আরো উতপ্ত হচ্ছে।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে সাভার ও এর আশপাশের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা যায়।
সাভারের নবীনগর এলাকায় বাজার করতে আসা রাকিব হোসেন নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যারা মধ্যবিত্ত রয়েছি তাদের সুখ-দুঃখ অনেকটাই নির্ভর করে বাজারের জিনিসপত্রের দামের ওপর। বাজারে দাম কিছুটা কম থাকলে পরিবার নিয়ে দুটো ভালোমন্দ খাওয়া যায়। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম এতোটাই আকাশছোঁয়া যে ভালোমন্দ তো দূরের কথা তিনবেলার ভাতের যোগান দেয়াটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। মাসের শুরুর দিকে হাতে টাকা থাকলেও শেষের দিকে এসে ধারদেনা করে চলতে হয়।
পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক হালিমা আক্তার বলেন, আগে আমাগো গরিব মাইনষেরা যেডি খাইতাম সেগুলার দামও এখন ম্যালা বাড়ছে। ফার্মের মুরগি কন আর পাঙাশ সবকিছুর দামই এখন আগুন। বাজারভরা জিনিস কিন্তু দামের চোটে কিছুই কিনতে পারি না।
বাজারে আসা ক্রেতাদের দাবি বাজার মনিটরিংয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা উচিৎ।
এদিকে, আসছে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে যেন আরও লাফিয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের দামের কাটা। সপ্তাহ ব্যবধানে সাভারের সবচেয়ে বড় বাজার নামাবাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে দশ টাকা, সয়াবিন তেলও কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ৮০ টাকার আদা ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা কেজি, ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে সব ধরনের ফলের দামও। তবে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে ছোলা ও মুশুরির ডালের দাম ৫ টাকা কমে এখন প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা এবং ৯৫ টাকার মুশুরির ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে।
অপরদিকে, বাজারে মৌসুমের শেষে শীতের সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আর গ্রীষ্মের যে নতুন সবজি বাজারে এসেছে তা অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। প্রতিকেজি বেগুন ৬০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, পটল ১২০ টাকা, কচুরলতি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি হালি লেবু ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, প্রায় মাসখানেক ধরে অস্থির ব্রয়লার ও ডিমের দাম বেড়ে যাচ্ছে দফায় দফায়। বর্তমানে ২৬০ টাকা কেজির এসব মুরগির দাম সপ্তাহ খানেক আগে ছিল ২৪০ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হতো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে ডিমের দাম মাসের ব্যবধানে হালিতে প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড কাঁচা বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী মো. সবুজ বলেন, খামার পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মুরগীর সরবরাহ কম থাকায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। এতে ক্রেতাদের মতো আমরা যারা খুচরা বিক্রেতা তারাও বিপাকে পড়েছি। আগে এই সময়ে দৈনিক প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কেজি মুরগি বিক্রি করতাম আর এখন সেখানে প্রতিদিন বিক্রির পরিমাণ মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কেজি। মাছের বাজারও গরম তেলাপিয়া-পাঙাশের মতো চাষের মাছের কেজিও হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। অন্যান্য মাছের দামও কেজিপ্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দেখা গেছে। মাঝারি সাইজের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে, কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, শিং মাছ ৬০০ টাকা এবং ছোট ট্যাংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।আর গরুর মাংসের দাম বাজারভেদে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে না পারে।