শুক্রবার, 4 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

জুনে ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪% কম বৃষ্টি, মাসজুড়ে ভ্যাপসা গরম

গত জুন মাসে রাজধানী ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। মাসটিতে ২৪ দিন বৃষ্টি হওয়ার তথ্য রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু বেশিরভাগ দিনেই বৃষ্টির পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। বরং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় মাসজুড়ে ছিল ভ্যাপসা গরম।

ভ্যাপসা গরমে নগরজীবনে ছিল অস্বস্তি। দিনের পর দিন আকাশ মেঘলা থাকলেও তেমন করে ভিজেনি রাজধানী ঢাকা। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীরের ঘাম শুকাতে দেরি হয়েছে। এতে সত্যিকারের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ অনুভব করেছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ আর পথচারীরা। রাস্তায় বের হলেই শরীর ভিজে গেছে ঘামে, কিন্তু বাতাসে স্বস্তি ছিল না। শহরের ফুটপাত, রাস্তাঘাট কিংবা যানজটে থাকা মানুষদের কাছে এই গরম ছিল চরম অস্বস্তিকর। এতে প্রভাব পড়েছে আয়-রোজগারে।

 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক মো. মামুন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে রিকশা নিয়ে বের হই, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে জামা ভিজে যায়। রোদ না থাকলেও গরমটা শরীরের ভেতর ঢুকে যায় মনে হয়। শরীরের ঘাম শুকাতে না পেরে বুকে ঠান্ডা লেগে যায়। এত গরমে বেশিক্ষণ প্যাডেল ঘুরাতে পারি না। কিন্তু রিকশা না চালালে খাবার জোগাড় হয় না।’

জুন মাসেই শুরু হয় বর্ষা ঋতু। এবার ১৫ জুন ছিল আষাঢ়ের প্রথম দিন।

 

 

বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের মাস হলো জুন। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় জুলাই মাসে। কিন্তু সেই হিসাবে এবার জুন মাসে তেমন বৃষ্টি হয়নি দেশে। তবে এ বছর মে মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহওয়া অধিদপ্তর।

jagonews24

জুনে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, সাধারণত জুন মাসে রাজধানীতে গড়ে ৩২১.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বছরের জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৮০ মিলিমিটার। স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টি কম হয়েছে প্রায় ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

 

গত জুন মাসে বৃষ্টির দিন ছিল ২৪টি। কিন্তু বেশিরভাগ দিনেই বৃষ্টির পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় ১৭ জুন, ৩৬ মিলিমিটার।

jagonews24

এক বছরে বৃষ্টি কমেছে ৭৮ মিলিমিটার

২০২৪ সালের জুন মাসে রাজধানীতে মোট ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর বৃষ্টির দিন ছিল ২২টি। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে জুন মাসে বৃষ্টিপাত কমেছে ৭৮ মিলিমিটার। এর আগের বছরগুলোতে ২০২৩ সালে জুনে বৃষ্টিপাত ছিল ৪৫৪ মিলিমিটার, ২০২২ সালে ১৭৩ মিলিমিটার, ২০২১ সালে ৫৪৩ মিলিমিটার এবং ২০২০ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ২৭১ মিলিমিটার।

 

 

বৃষ্টি কমার কারণ

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর মৌসুমি বায়ু আগেভাগে প্রবেশ করলেও তা সক্রিয় ছিল না। ফলে বৃষ্টির পরিমাণ কম হয়েছে। এছাড়া বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের স্বল্পতাও বৃষ্টিপাতের ঘাটতির একটি কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘জুন মাসে স্ট্রং নিম্নচাপ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা হয়নি। ফলে বৃষ্টি কম হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো মৌসুমি বায়ু এবার এক সপ্তাহ আগেই দেশে প্রবেশ করেছে। ফলে মে মাসের শেষ দিকে আর জুনের শুরুতে বৃষ্টি বেশি ছিল। মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভের পর পরই বৃষ্টি কমে গেছে।’

‘কয়েক বছর ধরে ঢাকায় জুন-জুলাইতে অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হচ্ছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে গিয়ে বৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্লাইমেট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। এটার একমাত্র কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং।’

 

jagonews24

জুনের প্রথমার্ধে তাপপ্রবাহ

জুন মাসে তাপপ্রবাহ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এই সময়ে দেশে বৃষ্টির আভাস থাকলেও হয়েছে কম। অন্যদিকে হালকা বৃষ্টির পর ভ্যাপসা গরম আরও বেশি অনুভূত হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৭ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দেশে টানা ৮ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। এর মধ্যে ঢাকায় তাপপ্রবাহ ছিল দুদিন।

 

তাপপ্রবাহ কেটে যাওয়ার পরও মাসজুড়ে বাতাসে ছিল উচ্চমাত্রার আর্দ্রতা, যার কারণে ভ্যাপসা গরম থেকে মিলেনি কোনো স্বস্তি।

jagonews24

মাসজুড়ে ভ্যাপসা গরম

জুন মাসে ঢাকায় স্বাভাবিক আর্দ্রতা থাকার কথা ৮২ শতাংশ। গত মাসে তা ছিল ৭৪ শতাংশ।

আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপপ্রবাহের সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প কম ছিল বলে গড় হার কিছুটা কমেছে। তবে মাসের শেষদিকে আবার আর্দ্রতা বেড়ে যায়, যার কারণে গরম আরও বেশি অনুভূত হয়।

 

আবহাওয়াবিদদের মতে, আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। বাতাসে কতটা পানি (বাষ্প আকারে) মিশে আছে, সেটাই আর্দ্রতার পরিমাপ। আর বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে ঘাম শুকাতে পারে না, ফলে শরীর ঠান্ডা হতে পারে না। ভ্যাপসা গরম লাগে, কারণ শরীরের অতিরিক্ত তাপ ঘামের সাহায্যে বের হতে পারে না।

 

আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়া জুন মাসের শেষ ১০ দিনের সকাল বেলার আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২১ জুন সকালে ঢাকার আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ, ২২ জুন ৭৯ শতাংশ, ২৩ জুন ৬৪ শতাংশ, ২৪ জুন ৭৩ শতাংশ, ২৫ জুন ৭৬ শতাংশ, ২৬ জুন ৬৬ শতাংশ, ২৭ ও ২৮ জুন ৬৯ শতাংশ, ২৯ জুন ৭৬ শতাংশ এবং ৩০ জুন ৭৩ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, জুন মাসের প্রথমার্ধে তাপপ্রবাহ ছাড়া বাকি দিনগুলোতে তাপমাত্রা খুব বেশি ছিল না। মাসের শেষ ১৫ দিন ৩৩ থেকে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে ভ্যাপসা গরম ছিল। একটানা কিংবা ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে ভ্যাপসা গরম ভুগিয়েছে।

কাজী জেবুন্নেছা বলেন, জুন মাসে আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। প্রথম তাপপ্রবাহের সময় রোদের কারণে আর্দ্রতা বেশি ছিল না। কিন্তু শেষ দিকে বেড়ে গেছে। মেঘ ছিল আকাশে। বাতাস চলাচল করেনি। যে বাতাস ছিল তা মানুষের শরীর থেকে ঘাম শুকাতে পারেনি। এখন এত উঁচু উঁচু বিল্ডিং, গাছপালাও কম। ফলে বাতাসও কম।

jagonews24

বৃষ্টি কম হবে জুলাইয়েও

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি বছর মৌসুমি বায়ু স্বাভাবিক সময়ের কিছুটা আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। শুরুতে কিছু বৃষ্টি হলেও পরে বায়ুর প্রভাব কমে আসে। ফলে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যায়। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে রাজধানীতে।

 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ  বলেন, জুলাই মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়াটা কঠিন। হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কম বৃষ্টি হবে। ভ্যাপসা গরমও থাকবে।


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত