বৃহস্পতিবার, 3 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

সাভারে ঢাকা থেকে ‘নিখোঁজ’ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহিরা যেভাবে উদ্ধার হলো


স্টাফ রিপোর্টার : সাভার থেকে উদ্ধার হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহিরা বিনতে মারুফ পুলি। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। 


শিক্ষার্থী পুলিকে রোববার (২৯ জুন) রাত পৌনে ১০টারদিকে পথচারীরা সাভার নিউ মার্কেটের সামনে দেখতে পেয়ে তার কাছ থেেেক মোবাইল নম্বর নিয়ে আত্মীয় স্বজন ও র‌্যাব-৪ সাভার ক্যাম্পে ফোন করে র‌্যাবের হাতে সোপর্দ করে। 


রোববার রাত সোয়া ১০টারদিকে মাহিরা বিনতে মারুফ পুলির সাথে সাভার নিউ মার্কেটের সামনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় সে নিউ মার্কেটের মূল ফটকের ভেতরে মার্কেটের নিরাপত্তা রক্ষীদের তত্ত্বাবধানে স্টীলের একটি বেঞ্চিতে বসেছিলেন। মার্কেটটি তখন বন্ধ ছিলো। ১০/১২ জন দোকান কর্মী ও মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে একটি প্রতিষ্ঠানে জীম করতে আসা লোকজন পিউলির বাবা ও জাবিতে কর্মরত তার মামাসহ আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় র‌্যাবের এক কর্মকর্তা যুবকদের একজনের সাথে ফোনে একাধিকবার কথা বলেন। লোকজন এ প্রতিবেদককে চিনতে পেরে মেয়েটির নিকট নিয়ে যান। তখন মেয়েটির পরণে ছাই কালারের ডোরাকাটা প্যান্ট ও ঘিয়ে কালারের হাফ হাতা টি-শার্ট দেখে জানতে চাইলে তিনি জানান, সে যখন অপহৃত হয়েছিলেন তখন এ পোশাকে ছিলেন না। তখন ছিলেন কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত। কিভাবে এ ড্রেস তার পরণে এসেছে তা কিছুই জানেন না। তার পায়ে জুতা ছিল না। খালি পায়ে কাদা মাটি ছিল। তিনি জানান, অপহরণকারিগণ ভিন দেশের ভাষায় কথা বলেছেন। সম্ভবত তারা পাকিস্থানী। তিনি কিভাবে সাভার নিউ মার্কেটের সামনে আসলেন এবং তার কলেজ ড্রেস কিভাবে পরিবর্তন হলো কিছুই বলতে পারেননি।


এ সময় মাহিরা আরও জানান, বাসা থেকে বের হয়ে বাসে ওঠার পর তার আর কিছুই মনে নেই। সর্ব শেষ এক মহিলা তাকে ফলো করে তার সাথে কথা বলেছেন। তিনি আরও জানান, অপহরণের পর যে কক্ষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই কক্ষে তার সামনেই তার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে দেয়। এ সময় তারা বলেছেন তোর আর পড়ালেখা করার দরকার নেই। তোর পড়ালেখা এখানেই শেষ। সে সময় মেয়েটি বার বার উপস্থিত সবাইকে বলছিলেন কেউ যেন তার ছবি না তোলেন এবং ভিডিও না করেন। তার বাবা বরিশালে একটি কলেজের শিক্ষক। মামা জাহাঙ্গীরনগরে চাকুরি করেন বলে জানান। মেয়েটি কিভাবে সাভার নিউ মার্কেটের সামনে এসেছে জানতে চাইলে উপস্থিত ব্যক্তিদের একজন জানান, মেয়েটি রাত ১০টার দিকে মার্কেটের মূল ফটকের সামনে পথচারিদের নিকট মোবাইল ফোন চেয়ে কথা বলার চেষ্টা করে। তখন কেউ কেউ তাকে চিনতে পারেন। তারা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা ছবির সাথে তাকে মিলিয়ে নেয় এবং পরিবারের সাথে কথা বলিয়ে দেন।


এর আগে, রোববার (২৯ জুন) সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পরীক্ষা দিতে বের হয়েছিলেন পুলি। দুপুর ১ টায় পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। দীর্ঘ সময় তার খোঁজ না মেলায় উদ্বিগ্ন পরিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যোগাযোগ করে জানতে পারে, মাহিরা সেদিন কেন্দ্রেই উপস্থিত ছিলেন না। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মাহিরার পরিবার। এরপর থেকেই তার খোঁজে তৎপরতা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে মাহিরা বিনতে মারুফ পিউলির বরাত দিয়ে সোমবার র‌্যাব জানায়, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তার বসুন্ধরার বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। বাসা থেকে বের হওয়ার পরই একজন নারী মাহিরার নাকের সামনে চেতনানাশক কিছু ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর সে আর কিছু মনে করতে পারে না। জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটি রুমের ভেতর আবিষ্কার করে।


এ শিক্ষার্থীর বাসা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এবং তার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল মিরপুর কলেজ। সে পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশে গত রোববার সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ওইদিন দুপুর ১টার মধ্যে তার পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা পরীক্ষাকেন্দ্রে খোঁজ নিতে যান।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মাহিরার পরিবার জানতে পারে, মাহিরা রোববার পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হননি। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেও দিনভর মাহিরাকে না পেয়ে তার পরিবার ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরইমধ্যে তার নিখোঁজ হওয়ার খবরটি মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে র‌্যাব এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ছায়াতদন্ত শুরু করে। উদ্ধার শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, ২৯ জুন তার এইচএসসি পরীক্ষা ছিল। সকাল ৮টারদিকে বাসা থেকে পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই একজন মহিলা তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। কথা বলার এক পর্যায়ে মহিলা চেতনানাশক কিছু তার নাকের সামনে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর সে আর কিছু মনে করতে পারে না। জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটি রুমের ভেতর আবিষ্কার করে।


র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এন রায় নিয়তি জানান, উদ্ধার মেয়েটিকে প্রাথমিক আইনি কার্যক্রম শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত