শনিবার, 5 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

আশুলিয়া উড়ালসড়ক নির্মাণে বাধার পাহাড়, নতুন করে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব বাড়ছে মেয়াদ ও ব্যয়

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী ঢাকা শহরে উড়ালসড়ক নির্মাণে পদে পদে রয়েছে নানা জটিলতা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে। ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়কেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক প্রতিবন্ধকতা। এতদিন ছিল ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। এবার তা কিছুটা কাটলেও দূর হয়নি পরিষেবা স্থানান্তর। প্রকল্পের শুরু থেকেই বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সংযোগ নিয়ে এ জট দেখা গেছে। এ নিয়ে বহু চিঠি চালাচালি আর বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এখন বাড়তি খরচ গুনে পরিষেবা স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নথি প্রস্তুত হয়েছে। এসব নানা কারণে প্রকল্পের খরচ ও ব্যয়ও বাড়ছে।


ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর। এর অন্তত দুই বছর আগে উদ্যোগটি নেওয়া হয়। সাভারের ইপিজেড থেকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা এলাকা পর্যন্ত নির্মাণ হবে এ উড়াল মহাসড়ক। এটি যুক্ত হবে বিদ্যমান নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। কিন্তু জায়গার অভাবে নির্মাণকাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে ২০২২ সালের ১ জুন তা সংশোধন করা হয়। উড়ালসড়কটির ২৪ কিলোমিটার এলাকা ধরা হয়েছে এয়ারপোর্ট-আব্দুল্লাহপুর-ধউর-বড় আশুলিয়া-জিরাবো-বাইপাইল-ঢাকা ইপিজেড পর্যন্ত। প্রকল্পের সর্বশেষ সংশোধিত মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।


এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, প্রকল্পে নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। এর অনেকগুলো ইতোমধ্যে কেটে গেছে। এ মুহূর্তে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে বাকি কাজ শুরু হবে শিগগির। তবে আরইবির বিদ্যুৎ সংযোগ স্থানান্তরের কাজটি এখন বড় ইস্যু। এ জন্য প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। ডিপিপি সংশোধন করতে হচ্ছে। কিছু খরচও বাড়ছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। আশা করি, আগামী ২-৩ মাস পর প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো চ্যালেঞ্জ থাকবে না।


জানা গেছে, প্রায় ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, প্রায় ১৪ কিলোমিটার চার লেন রাস্তা, ৭ জোড়া র‌্যাম্প, ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে ইউটিলিটি স্থানান্তরে নতুন খাতে ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে গিয়ে পদে পদে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। পরিষেবা সংযোগ স্থানান্তর বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


প্রাপ্ত তথ্যমতে, উড়াল সড়কের অ্যালাইনমেন্ট বরাবর বিদ্যুৎ, টেলিকমিউনিকেশন, পানি ও গ্যাস লাইনের স্থানান্তর করা নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত স্থান নেই নির্মাণকাজ করার। এমন বাস্তবতায় নির্মাণকাজ কঠিন হয়ে গেছে। আরইবি ইতিপূর্বে এ খাতের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬৪৭ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করেছিল। পরে তা ৪৯০ দশমিক ৪৪ কোটি টাকায় চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পের জমি বুঝে পাওয়া নিয়ে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিচের সড়ক খুব আঁকাবাঁকা। কিন্তু উড়ালপথ সোজা হতে হবে। তাই নিচের সড়কও সোজা করা গুরুত্বপূর্ণ। মাটির নিচে ইউটিলিটি লাইন অপসারণ করা চ্যালেঞ্জ। আবার মূল পথের কাজ শুরু করার আগে বাইপাস (গাড়ি চলাচলের বিকল্প পথ) সড়ক তৈরি করে দিতে হচ্ছে। যেন ট্রাফিকব্যবস্থা ঠিক থাকে। যান চলাচল খুব বেশি ব্যাহত না হয়। এ ছাড়া ওই এলাকায় বিদ্যুতের তার রয়েছে। এই অঞ্চলে শিল্পকারখানা অনেক বেশি। তাই দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে কাজ করা যায় না।


এ ছাড়াও অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে ডিএনসিসি, ডেসকো, তিতাস, পিজিসিবি, বিটিসিএলসহ বিভন্ন সংস্থার পরিষেবা স্থানান্তরে আরও ২৫ কোটি টাকা দরকার। ইউটিলিটি স্থানান্তর/অপসারণে ৫১৫ দশমিক ৪৪ কোটি টাকার সংস্থান প্রয়োজন। বলে রাখা ভালো, বিদ্যুৎ লাইনগুলো দ্রুত স্থানান্তর করা সম্ভব না হলে প্রকল্পের প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়বে। চীন সরকারের সঙ্গে জিটুজি চুক্তিভিত্তিক এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে চীনের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৯শ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ দেবে ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য আসবে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা।


প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, আশুলিয়া উড়ালসড়ক চালু হলে ঢাকা শহরে যানজটের মুখে পড়তে হবে না। ২০টি জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ এ উড়ালসড়কের সুবিধা পাবে। ঢাকা শহরের বাইরে থেকে পরিবহন নিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাতায়াত সহজ হবে এ উড়াল সড়কের মধ্য দিয়ে। ঢাকা উড়ালপথের সঙ্গে আশুলিয়ার পথ যুক্ত হলে সাভারের ইপিজেড থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এক রেখায় পাড়ি দেওয়া যাবে ৪৪ কিলোমিটার সড়ক। ওঠানামার পথসহ এর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৮২ কিলোমিটার।
 


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত