ফুলকি ডেস্ক : সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ দিন আদালতে হাজির করার সময় ক্যামেরা দেখে মুখ লুকান তিনি। পরে আদালতে উঠানোর পর তাকে প্রশ্ন করা হলে জবাবে অঝোরে কান্না করেন তিনি।
শনিবার বিকেল ৩ টার দিকে একটি সাদা প্রাইভেটকারে করে অপুকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বিকেল ৩ টা ২৮ মিনিটের দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে হাজির করতে তাকে লিফটে তোলা হয়। লিফটে তোলার সময় তাকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। এ সময় সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি চাঁদাবাজি করতে গেলেন কেন? ঘটনা কতটুকু সত্য- এসব প্রশ্ন করেন। এ সময় তিনি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখেন। পুলিশ সদস্যরা তাকে মাথা তুলতে বললেও তিনি মাথা নিচু করে নিশ্চুপ ছিলেন। এ সময় তিনি মাথা নিচু করে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
এ দিন আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান রিমান্ড আবেদনে বলেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তারা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এ মামলার বাদীসহ বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা নেয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের এরকম কার্যকলাপ প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী আরও কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করেছে মর্মে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। এ আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাপর আসামিদের ও তাদের গডফাডারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এছাড়াও বাদীর কাছ থেকে গত ১৭ জুলাই গ্রহণ করা চাঁদার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী তার জামিন চান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের জোর দাবি জানান। শুনানি শেষে আদালত আসামির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কায়য়ুম হোসেন নয়ন বলেন, আসামি একজন চাঁদাবাজ। সে জুলাইয়ের চেতনা বিক্রি করে সংঘবদ্ধভাবে চাঁদাবাজি করে আসছে। চাঁদাবাজির এই চক্র বিশাল রূপ ধারন করেছে। জুলাই বিপ্লবের পরে জুলাইয়ের নাম ব্যবহার করে এসব চাঁদাবাজ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। তাদের এই চাঁদাবাজির শেল্টারদাতা আছে। তারাই এদের মতো চাঁদাবাজকে পালে। এদের মতো চাঁদাবাজদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
এ সময় আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাজিদুল ইসলাম রুবেল বলেন, দশ লাখ টাকা নিয়েছে রিয়াদ। তারা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছে। আসামি একজন জুলাই যোদ্ধা এবং তিনি এখনও আহত। তিনি পুলিশের গুলিতে মারা যেতে পারতেন। তাকে উল্টো-পাল্টা নাম দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজহারী নামের সঙ্গে আসামির নামের কোন মিল নেই। এই মামলাটা সাজানো। শুধু রাজনীতি প্রতিহিংসার কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে এনিসিপি নেতাদের কোনঠাসা করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে গত ৩০ ঘণ্টায় কোন টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশে রিমান্ডে দেওয়া হলে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হবে।
এ সময় বিচারক আসামি জানে আলম অপুকে জিজ্ঞাসা করে বলেন, আপনার আইনজীবীরা যা বললেন এর সাথে কি আপনি কি একমত? নাকি আপনার কিছু বলার আছে?
বাগছাসের বহিষ্কৃত নেতা জানে আলম অপু আদালতকে বলেন, আই ওয়ান্ট টু সে সামথিং (আমি কিছু বলতে চাই)। তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে মামলায়। আমি চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত নই। আমি কিছু জানতাম না। রিয়াদ ছাড়া কেউ এই চাঁদাবাজিতে যুক্ত ছিলো না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমিসহ বাকি চারজন নির্দোষ। আমরা কিছুই জানতাম না। একমাত্র চাঁদার সঙ্গে জড়িত রিয়াদ। কিন্তু রিয়াদের সঙ্গে বাকিদেরও রিমান্ডে নিয়ে চাঁদাবাজির দায় স্বীকার করানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রিয়াদ ছাড়া এখানে কেউ জড়িত নয়। রিয়াদ আমাদের ফোন করে ডাকে এই বলে যে- এখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। আমরা গিয়ে ফেঁসে গেছি। আমাদের রিয়াদ ফাঁসিয়েছে। সে বলেছে- তোরা এদিকে আয়। আমরা গেছি আর ফেঁসে গেছি। এর বেশি আমরা কিছুই জানিনা। এর আগে রিয়াদ যে চাঁদাবাজি করেছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। যখন শুনি এখানে চাঁদাবাজির বিষয় আছে তখন আমি চলে আসি। এই ঘটনায় বাকিদের জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে নিয়ে। এ জন্য আমাকেও রিমান্ডে নিতে চায়। এখানে একজন নাবালক শিক্ষার্থী আছে, তাকেও ফাঁসানো হয়েছে। এই মামলায় রিয়াদ ছাড়া সবাই নির্দোষ।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, জুলাই যোদ্ধা বলে চাঁদাবাজির বৈধতা পেতে পারে না। জুলাই যোদ্ধা বলে সে পার পেয়ে যেতে পারে না। তার রিমান্ড প্রয়োজন।
এ সময় বিকেল ৩.৪৮ মিনিটে বিচারক আসামি পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। আসামির বিষয়ে আর কিছু বলার আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে ওই বাড়ী ও ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার আবেদন জানান।
মামলায় ভুল নামের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামীপন্থিদের রুখতে গিয়ে অপু উল্টো ফেঁসে গেছেন।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশ সদস্য বিচারকে বলেন, মাননীয় আদালত এই ধরনের মামলায় অভিযুক্তদের নাম পুরোপুরি পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই জানে না। কেবল তাদের নিক নেম উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এটি সংশোধন করে সঠিক নাম উল্লেখ করা হয়। এটি কোন বিষয় না। এর জন্য রিমান্ড নাকচ করার আবেদন করতে পারেন না।
এদিন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামি জানে আলম অপুকে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন শুনানি শেষে পরবর্তীতে আসামিকে ফের পুলিশের পাহারায় হাজতখানায় নেওয়া হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি তো ২২ জুলাই থেকে কিশোরগঞ্জে। আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। সরেন তো আপনারা। আপনারা আবার উল্টা-পাল্টা লিখবেন।’
আদালতে শুনানি শেষে জানে আলম অপুকে হাজতে নেওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাকে উদ্দেশ্য করে-চাঁদাবাজ বলে স্লোগান দেন। দুজন যুবক তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন এই চাঁদাবাজ, এই চাঁদাবাজ। চাঁদাবাজি করতে ভালো লাগে? এ সময় জানে আলম মাথা নিচু করে দ্রুত গতিতে হাজতে ঢুকে যান।
এর আগে শুক্রবার চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।