ফুুলকি ডেস্ক : আগামী সংসদ নির্বাচন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থিরা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে নারী সমাজকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে মহিলা দলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীর অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস সভায় স্বাগত বক্তৃতা দেন। পরে সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদানের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
গণতন্ত্রকামী জনতার উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আসুন, আমরা নারী-পুরুষ-শিশু, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য শহীদদের কাঙ্ক্ষিত ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ি। শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।
তিনি বলেন, দেশকে পরিবার হিসেবে চিন্তা করলে এ সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকাদের মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে অন্তত ৫০ লাখ পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। বিএনপি জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পরিবারের নারী প্রধানের নামে এ কার্ড ইস্যু করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আমার মাও (খালেদা জিয়া) তার এক সন্তান (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন আপনাদের মতো। বহু স্ত্রী তার স্বামী, বোন হারিয়েছেন ভাইকে। অনেক মা নানাভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন। পারিবারিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ আর স্বজন হারানো অসংখ্য মা-বোনের অবদানে ফ্যাসিবাদ অবসানের পর আমাদের সবার সামনে আজ শিশু-নারী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ সামনে এসেছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠনে আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনেও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
নারী উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপের কথা তুলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের অর্ধেক সংখ্যক নারীকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূল ধারার বাইরে রেখে কখনও আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করতে পারব না, সম্ভব হবে না। শুধু বাংলাদেশ নয়, নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কখনও কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারে না। এ জন্য নারী শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্ধেক সংখ্যক নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বিএনপি আগামী দিনের সব কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে বিএনপি এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
বিশ্বায়নের এ সময়ে নারীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরির বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের সব দেশে নারীর জন্য শিক্ষা-চাকরি-ব্যবসাসহ সব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। শুধু নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিশেষ করে নারীদের শিক্ষাদানে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে, তাদের প্রতি বৈষম্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক টানাপোড়নকে কেন্দ্র করে পারিবারিক সহিংসতাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপির স্লোগান– ‘ক্ষমতায়িত নারী শক্তি, পরিবারের মুক্তি’। বিএনপির রাজনীতি মানবিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত দক্ষ জনশক্তি তৈরির, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা খান রিতার সভাপতিত্বে এবং মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, তাহসিনা রুশদীর লুনা, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের মধ্যে সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, টকশো উপস্থাপক হাসিনা আখতার প্রমুখ।