শুক্রবার, 1 আগস্ট 2025
MENU
daily-fulki

বাংলা একাডেমিতে ৬ দিনব্যাপী ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইমেলা শুরু

ফুুলকি ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ছয় দিনব্যাপী ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান বইমেলা ২০২৫’ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই মেলার উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলুল মাখমিন। 

এদিকে ‘ফ্যাসিস্ট প্রকাশকদের’ স্টল দেওয়ার অভিযোগ এনে মেলা বয়কট করেছে ৩ প্রকাশনী।

 

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘বাংলা একাডেমি’ ও ‘বাংলাদেশ পুস্তক ও বিক্রেতা সমিতি’ এর আয়োজন করে। মেলা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই বইমেলা। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক বক্তৃতা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে। 

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

মোহাম্মদ আজম বলেন, গত এক বছরে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে যে বিপুল পরিমাণ প্রকাশনা হয়েছে, এগুলো ভবিষ্যতের সুবিন্যস্ত গবেষণার জন্য প্রাথমিক উৎস হিসেবে সংরক্ষিত থাকলো। পরবর্তী সময়ে এই প্রকাশনাগুলোই আমাদের অভ্যুত্থানের ইতিহাসকে জিইয়ে রাখবে। জুলাই অভ্যুত্থানের যে বইগুলো রচিত হয়েছে, সেগুলো ফ্যাসিবাদী নানা অপপ্রচারের শক্ত জবাব হিসেবে ঐতিহাসিক তাৎপর্য তৈরি করবে।

কাজী লুলুল মাখ মিন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান ছিলো একটি ইতিহাস-পরিবর্তনকারী ঘটনা। বইয়ের ভাষা, লেখকের কলম, পাঠকের মনন– এই তিনের সমন্বয়ে যদি আমরা সেই চেতনাকে ধরে রাখতে পারি, তাহলে শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না।’

রেজাউল করিম বাদশা বলেন, এই বইমেলা শুধু একটি বিক্রয় উৎসব নয়, এটি মুক্তচিন্তা চার্চারও উৎসব। কোনো শাসক যদি কখনো আবার মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করতে চেষ্টা করে, তার ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হতে পারে- এই অভ্যুত্থান তার প্রমাণ এবং সেই প্রমাণ লিপিবদ্ধ হলো জুলাই অভ্যুত্থানের বইগুলোতে। তাই অভ্যুত্থান ঘিরে এই বইমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলেই আমার বিশ্বাস।

 

 

তিন প্রকাশনীর মেলা বয়কট

‘ফ্যাসিস্ট প্রকাশকদের’ স্টল দেওয়া অভিযোগ এনে এই মেলা বয়কট করেছে তিনটি প্রকাশনী। মেলা বয়কট করা প্রকাশনীগুলো হলো– কলি প্রকাশনী, কেন্দ্রবিন্দু প্রকাশন ও জ্ঞান বিতরণী। মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব প্রকাশনীর জন্য বরাদ্দ স্টলে কোনো বই নেই। বরং সেই স্টলে মেলা বয়কট করে ব্যানার টানানো হয়েছে।

এতে লেখা আছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে আয়োজিত বইমেলায় ফ্যাসিস্ট প্রকাশকদের স্টল দেওয়া মুক্তিকামী জনতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি। এ কারণে এই মেলা বয়কট করা হলো।’

প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারীরা বলেন, এ বছরের একুশে বইমেলায় আগামী প্রকাশনী, অনিন্দ্য প্রকাশনী, সময় প্রকাশন, নালন্দা প্রকাশনী, পুথিনিলয়সহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী প্রকাশনীগুলোকে স্টল দেওয়া হয়েছিলো। যেহেতু সেটা জাতীয় বইমেলা ছিলো, সেহেতু সেখানে যে কেউ থাকতে পারে। কিন্তু জুলাই নিয়ে আয়োজিত বইমেলায় এসব প্রকাশনী কীভাবে থাকে? এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি ছাড়া আর কিছু না। 

প্রতিবাদ জানানোয় তাদের স্টলগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান তারা। অন্যদিকে, ‘ফ্যাসিস্ট প্রকাশনীগুলোর’ স্টল বাতিলের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ‘বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’, ‘জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ’ এবং ‘বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’।

এ বিষয়ে বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক মো. আবুল বাশার ফিরোজ শেখ বলেন, যদি কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমাদের ফোরামে অভিযোগ করতে পারতো। সেটা না করে এভাবে বয়কট করলো কেন? কেননা মেলা শুরুর আরও দুইদিন আগে স্টলগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। তখন জানানো যেত। বিগত সরকারের সময় প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে নিয়ে বই বের করেছে। কেউ কম, কেউ বেশি করেছে। তাহলে কেন এসব করা হচ্ছে?

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমিতির সদস্য প্রকাশনীগুলো স্টলের আবেদন করেছেন। দুটি বিষয় সামনে রেখে প্রকাশনীগুলোকে বরাদ্দ দিয়েছে। বিষয়গুলো হলো– একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণ এবং  গ্রন্থকেন্দ্রের জেলা পর্যায়ের বইমেলায় অংশ নেওয়া। যারা এই শর্তপূরণ করেছে, তাদেরই স্টল বরাদ্দ হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত