ফুুলকি ডেস্ক : বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা। তবে এবার ছবির জায়গা দখল করে নিয়েছে ভিডিও, তাও আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) তৈরি ভিডিও। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভুয়া তথ্য বা গুজব ছড়ানোর হার বেড়েছে ১৭ শতাংশ, যেখানে রাজনৈতিক বিষয়ক গুজবই সর্বাধিক– ৪৪ শতাংশ। নির্বাচন ঘিরে ভুয়া তথ্য বেড়েছে আট গুণ।
নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনে এআইর অপব্যবহারকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। গুগলের নতুন ভিডিও টুল ভিও থ্রি ব্যবহার করে তৈরি ভিডিওগুলো এখন কেবল গুজব নয়, সরাসরি নির্বাচনী প্রচারেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
নির্বাচন ঘিরে ভুয়া তথ্য ৮ গুণ বৃদ্ধি
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গুজব বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে মাত্র সাতটি নির্বাচনসংক্রান্ত ভুয়া তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৫৫টি। বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হওয়ায় দলটির নেতারাই গুজবের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি
গবেষণা সংস্থা ডিসমিসল্যাব জানায়, তারা এপ্রিল-জুন সময়ে আটটি ফ্যাক্ট চেক সংস্থার এক হাজার ৩৬১টি যাচাই করা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে। এ থেকে এক হাজার ১৩টি স্বতন্ত্র ভুয়া তথ্য চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকটিই ছিল ভুয়া ভিডিও– যেখানে রাজনৈতিক নেতা, এমনকি বিদেশি রাষ্ট্রপতিদের মুখ ব্যবহার করে ভুয়া বক্তব্য তৈরি করা হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, নির্বাচন না হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি জোট গঠন করে আন্দোলনে যাবে, যা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে মিথ্যা প্রচার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নামেও ছড়ানো হয়েছে একাধিক ভুয়া দাবি। যেমন তিনি নাকি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছেন কিংবা পদত্যাগ করেছেন। এমনকি একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত এসব ভুয়া ভিডিও। এতে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
টার্গেটে নারী নেত্রীরাও
এনসিপির নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি ছড়ানো হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের এক নেত্রীর বিরুদ্ধেও ছড়ানো হয়েছে অশ্লীল ভিডিও। মূলত এসব বাস্তবতাবিবর্জিত।
সংবাদমাধ্যমের নামে ভুয়া ফটোকার্ড
ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ভুয়া ফটোকার্ড, যা দেখতে একদমই সংবাদমাধ্যমগুলোর ফটোকার্ডের মতো। এতে মানুষ সহজেই বিভ্রান্তিতে পড়ছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ ধরনের ১৭৬টি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, যার ৮৫ শতাংশই রাজনৈতিক।
আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভুয়া তথ্য বেড়েছে
বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভুয়া তথ্যের হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশ।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়েও ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে ভুয়া ভিডিও ও ছবি। যেমন পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে দাবি করা হয় পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে ভারত কিংবা পাকিস্তান পাল্টা আঘাতে ভারতকে ধ্বংস করেছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের সময় ছড়ানো হয় একাধিক ভুয়া ভিডিও, যাতে দেখা যায় ইরান তেলআবিব ধ্বংস করেছে কিংবা মোসাদের সদরদপ্তরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এমনকি এক ভিডিওতে দেখানো হয়, ইসরায়েলি সৈনিক ও সাধারণ নাগরিকরা ইরানের কাছে যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানাচ্ছে।
সতর্কতা জরুরি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা আরও বাড়বে। তাই জনগণকে সচেতন থাকা এবং সংবাদ যাচাইয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।