ফুুলকি ডেস্ক : রাজশাহী মহানগর বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ নেতার নাম-পরিচয়সহ ছড়িয়ে পড়া ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের তালিকা’ আসলে কার এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ওই তালিকার মধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানা এলাকার ২০ জনের নাম-পরিচয়ের একটি তালিকায় বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মোস্তাক আহমেদের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে।
ওসি ২১ জুলাই তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজে স্বাক্ষর করে তালিকাটি দাখিল করেছেন। এতে বলা হয়, ‘সূত্রে বর্ণিত স্মারকের আলোকে এ থানা এলাকায় জনমনে আতঙ্ক, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী চাঁদাবাজদের নামের তালিকা পাঠালাম।’
ওসি মোস্তাক আহমেদের স্বাক্ষর করা এ কপিটি সংরক্ষিত রয়েছে। আগের তালিকায় রাজনৈতিক পদ ব্যবহার থাকলেও এই তালিকায় একজন বাদে কারও দলীয় পদ ব্যবহার করা হয়নি।
এ তালিকার বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এই তালিকায় আমার স্বাক্ষর কারা করল, কীভাবে করল- কিছুই বুঝতে পারছি না। এইডা কেমন কথা হলো? এই তালিকা আমার না। আমি খুব হতবাক হয়ে যাচ্ছি।’
তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বড়কুঠি এলাকার পটু বাবুর (৪০) নাম। তার নামে গাঁজা, ফেনসিডিল বিক্রি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগ লেখা আছে। এরপরে আছে বড়কুঠি এলাকার মুরাদের (৩৬) নাম। তার নামেও একই ধরনের অভিযোগ লেখা রয়েছে। তিন নম্বরে রয়েছে বড়কুঠি এলাকার আমিনুল ইসলাম বিগেনের নাম। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসির পাঠানো তালিকা
তালিকায় চার নম্বরে আছে ফুদকিপাড়া এলাকার ইকবাল হোসেন দিলদারের নাম। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ অনুসারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি এবং বিআরটিসি বাস থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাঁচ নম্বরে রয়েছে পাঠানপাড়া এলাকার এসএম সুলতানের নাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মনিচত্বরের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদাবাজি করার। ছয় নম্বরে থাকা আমিনুল শেখ বনির বিরুদ্ধে ফুটপাতে চাঁদাবাজি ও ভুবনমোহন পার্কে মোটরসাইকেল গ্যারেজ করার অভিযোগ। সাত নম্বরে নগর বিএনপি সদস্য সাইদুজ্জামান টনির বিরুদ্ধে ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এরপর তালাইমারি এলাকার রাসেদুল ইসলাম রাসেলের বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। হেঁতেমখাঁ এলাকার মমিনুল ইসলাম মিলুর নামে লেখা আছে কোচিং সেন্টারে চাঁদাবাজি, লোকজনকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির। এরপর আছে সাধুরমোড় এলাকার জীম, ডালিম, টিপু ও হাদির মোড়ের লিটনের নাম। তাদের সবার নামে বাড়ি নির্মাণে চাঁদা দাবি, আওয়ামী লীগ অনুসারীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তালিকার ১৪ নম্বরে হাদীর মোড়ের তুহিনের নাম রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাধুর মোড়, কেদুর মোড়, হাদীর মোড় ও মকবুল হলদারের মোড় এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ও আওয়ামী লীগ অনুসারীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর রয়েছে মোহাম্মদপুর টিকাপাড়ার নাসিরের নাম। তার নামে ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ অনুসারীদের তার চেম্বারে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
১৬ নম্বরে রয়েছে সাধুর মোড়ের মিজানের নাম। তার নামে অভিযোগ- মোটরসাইকেলে বাজে সাউন্ড যুক্ত করে ছিনতাই করা। মিজান একাধিক ছিনতাই মামলার আসামি। ১৭ নম্বরে রয়েছে হোসনীগঞ্জ এলাকার জাফর ইমান দীপ্তর নাম। তার বিরুদ্ধে সাহেববাজার ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ। তালিকায় ১৮ নম্বরে রয়েছে সামশুল হোসেন মিলুর নাম। বিভিন্ন বইয়ের দোকান, আবাসিক হোটেল ও কোচিং সেন্টারে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ১৯ নম্বরে রয়েছে বড়কুঠির সানোয়ার হোসেনের নাম। বড়কুঠি মাঠের বটতলার পানির পাম্পের নিচে জুয়ার বোর্ড চালানো এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তালিকায় শেষ ২০ নম্বরে রয়েছে টিকাপাড়ার শাওনের নাম।শাওন মোটরসাইকেলে সাউন্ড বাজিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাই মামলা রয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসির পাঠানো তালিকা
তালিকায় নাম থাকা প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন দিলদার বলেন, এই তালিকাটি শত্রু তা করে করা। আমার নামে কখনও এমন অভিযোগ নাই। বিআরটিসি বাসটি আমরা লিজ নিয়ে ব্যবসা করছি।
তালিকায় থাকা সামসুল হোসেন মিলু বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি- আমার নামে কখনও কেউ চাঁদাবাজির প্রমাণ দেখাতে পারবে না।’