স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়া লাশের সঙ্গে যে বর্বরতা ও নির্মমতা চালানো হয়েছে তা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানা সংলগ্ন দারুল ইহসান মাদরাসা মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান-২০২৪: নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন শ্রমিক। বিশেষ করে সাভার আশুলিয়া শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল। হত্যা করে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, এমন নির্মমতা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টদের পলায়নের দিন সাভার ও আশুলিয়ায় গণহত্যা চলছিল।
তিনি বলেন, গত বছর জুলাইয়ের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে কিন্তু সরাসরি শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ তারা কোনো সরকারি চাকরির আশা করেননি। তাহলে প্রশ্ন আসে, পোশাক কারখানার শ্রমিক-দিনমজুর, ভ্যানচালক, রেস্তোরাঁকর্মী, রিক্সাচালক কেন সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কারণ একটা সেদিন ফ্যাস্টিস্ট যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তাহলে কেউ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাবেন না। কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না। এ কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদ হটিয়ে জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করেছে। এখন জনগণের মালিকানা তাদের হাতে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মাঝে শোনা যায় যে সকল কথাৃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে। কিন্তু এইসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা এটি একটি বিরাট প্রশ্ন এই মুহুর্তে জনগণের সামনে।
তিনি বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, শত শহীদদের রক্তের বিনিময় পতিত পলাতক পরাজিত বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওঁত পথ পেতে রয়েছে। সরকারের যে কোন ভুল সিদ্ধান্তে দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রা পথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ এবং চরমপন্থা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এই ব্যাপারে আমাদের সকলকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, থাকা প্রয়োজন।
তারেক রহমান বলেন, আমি আগেও বলেছি, শহীদগণ কিন্তু শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়। একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ একটি পরিবারের মৃত্যু একটি স্বপ্ন সম্ভাবনার অবসান। তবে আপনাদের সন্তান স্বজনের শহীদ মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে। দেশ আপনার শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী। প্রতিটি শহীদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষ যাতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জীবদের অবদান নিয়ে গর্ব করতে পারে, শ্রমজীবী ও কর্মজীবী শহীদ পরিবারের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সদস্যরা যাতে তাদের স্বজনদের শহীদ মৃত্যু নিয়ে গৌরব করতে পারেন, বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার-আশুলিয়া কিংবা অন্য কোন সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণে পরিকল্পনা করছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ সালের অভ্যুত্থান পর্যন্ত শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ যেন প্রতিটি আত্মত্যাগকে শহীদ মৃত্যু হিসেবে কবুল করেন, আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। একই সঙ্গে আজকে শহীদদের সম্মানার্থে শহীদদের স্বজনদের পরিবারের সদস্যদেরকে তাদের মনের কথা তুলে ধরার জন্য আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজন যারা করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘আজকে অনেক রকম কথা হচ্ছে, রাজনৈতিকানুবাদ হচ্ছে, হবেই, গণতন্ত্রের সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কোন কিছু করবেন না যাতে আবার গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের সেটাই আহ্বান থাকবে। আমাদের আহ্বান থাকবে যে, ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোন সুযোগ পান দেশে ফিরে আসার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অনুরোধ করব সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে, আসুন আমরা অতি দ্রুত আমাদের সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোকে মিটিয়ে ফেলে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাই। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে আজকে এই মহিলা (শহীদ পরিবারের এক সদস্য) যে অভিযোগ করেছেন, সে অভিযোগ আমাদেরকে শুনতে হতো না। আমি আজকে যারা আয়োজন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্য, একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটি আয়োজন করেছেন এবং এতে করে জাতির বিবেক জেগে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি বলব একটি কথা, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু এনজিওবাদ আজকে দেশ চালাচ্ছে। এখান থেকে কিভাবে মুক্তি নেবেন, সেই পথ নির্দেশনা দেবেন আমাদের নেতা- এটাই প্রত্যাশা করি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোরশেদ খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া শহীদ পরিবারের মধ্যে বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবণ গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু, জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু শান্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টু, সাভার থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাজী মো: জামালউদ্দিন সরকার, সাভার থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কফিলউদ্দিন, সাভার পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র হাজী মো: রেফাতউল্লাহ, সাভার থানা বিএনপির সভাপতি সাইফুদ্দিন সাইফুল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, সাভার পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদির, ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল আহসান রাশেদ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নাজমুল হাসান অভি, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ তমিজউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ ইকবাল প্রমুখ।
বুধবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করে শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সবাই। পরে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।