ফুলকি ডেস্ক : দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা পরিবেশ ধ্বংসকারীদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে একমত হয়েছেন। খাল দখল, নদী দূষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অবৈধ ব্যবহারকারীদের বর্জনের বিষয়ে দলগুলোর স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরা হয় শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত সংলাপে।
‘Road to Green Manifesto: Dialogue on Political Manifesto’ শীর্ষক ওই সংলাপে পানি, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশগত অঙ্গীকারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। আলোচকরা বলেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়— বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ইশতেহারে চমৎকার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। এবার সময় এসেছে পরিবেশকে রাজনীতির মূলকেন্দ্রে আনার। তিনি বলেন, তরুণ ভোটাররা এখন অনেক সচেতন। রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তাদেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পরিবেশ কখনোই আর ‘সেকেন্ডারি’ ইস্যু হতে পারে না, রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবেশকে আনতে হবে। এটি ‘জনস্বার্থ’ এবং ‘রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার’। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের পরিবেশ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে জনগণের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।
জাফলং অঞ্চলে পাথর উত্তোলন এবং সোনাদিয়ার বনভূমি রক্ষা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে আমরা দেখেছি সর্বদলীয় ঐক্য পাথর তুলতে, সেখানে পরিবেশ রক্ষায় তেমন ঐক্য নেই। অথচ প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন টেকসই হবে না। ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু সেদিকে নজর নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খাল ও জলাভূমি দখলকারীরা যেন দলীয় মনোনয়ন না পায়, এটা আমাদের স্পষ্ট অবস্থান। পরিবেশ রক্ষাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহিতা ছিল না। এখন জনগণ প্রশ্ন করে— পরিবেশ নিয়ে আপনি যা বলেছেন, বাস্তবে করেছেন কী?
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, রাজনীতিক, মেয়র, ডিসিরা বছরে অন্তত দুইবার ঢাকার নদ-নদীতে গোসল করলে মানুষ সচেতন হবে, খাল পরিষ্কার থাকবে। আগে সাহস করে ঘোষণা দিতে হবে। তিনি এটিকে প্রতীকী কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নদী দখল, বায়ু দূষণ করে শিল্প স্থাপন করা অপরাধ। এসব অপরাধীদের দলীয়ভাবে বর্জন করতে হবে। দলগুলোকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, পরিবেশ রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পলিটিকাল ইউনিটি দরকার। এনসিপি গ্রিন সিটির ধারণা বাস্তবায়ন করতে চায়। তবে মাঠ পর্যায়ে বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতার কথাও বলেন তিনি। এই ছাত্র নেতা বলেন, কৃষি ও পরিবেশ খাতে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে তার ১০ ভাগও খরচ হয় না।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আবাদযোগ্য জমি দখল ও অপরিকল্পিত ব্যবহার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে জমির যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, পরিবেশ এখন আর কেবল নীতি নির্ধারণের বিষয় নয়, এটি মানবিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব। দলগুলো শুধু ইশতেহারে নয়, বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।