ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ও ফুকুটিয়া এলাকার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে বংশী নদী। প্রতিদিন স্থানীয় চাপিল, নওগাঁও, দেপাশাই, আশুলিয়া, কুড়াইল ভাঙাসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ এ নদীর ওপর দিয়ে বর্ষায় খেয়া নৌকায় ও শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় মানুষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সদরসহ ঢাকায় এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, নদীর ওপর সেতু নির্মাণের।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু বংশী নদীর ওপর সোমভাগ-ফুকুটিয়া সেতুর নির্মাণকাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছয় বছরে তিন দফায় মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ করেছেন। আর গত তিন মাস ধরে কাজই বন্ধ রয়েছে। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রকল্পটি। এতে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা সোমভাগ গ্রামের তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘নদীর উত্তর পারে আমাদের গ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তাই মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় পার হয়ে ফুকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করি। আর সারাক্ষণ ভয়ে থাকি, কখন যেন নৌকা ডুবে যায়।’
উপজেলা এলজিইডি থেকে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জিডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় সোমভাগ-ফুকুটিয়া বংশী নদীর ওপর ৯৮ দশমিক ১০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণের দরপত্র হয়। মেসার্স সুরমা অ্যান্ড খোশেদা এন্টারপ্রাইজ (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৭৭৪ টাকার কাজটি পেয়ে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। দুই পাড়ে দুটি কলামের আংশিক কাজ করে ২০২০ সালে তারা চলে যায়।
কাজ শেষ করার জন্য উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে তিন দফায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুই দফায় নদীর মাঝে আরও দুটি পিলার নির্মাণ করে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবার কাজ শুরুর জন্য এলজিইডি থেকে কয়েক দফা চিঠি দিলে চলতি বছর সেতুর মাঝের আংশিক গার্ডার নির্মাণ করে। গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে আবার কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা হয়ে গেছে। এতে সেতুর কাজ শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে। ৫০ শতাংশ কাজ হলেও ঠিকাদার অর্ধেকের কম বিল পেয়েছে বলে এলজিইডির এক কর্মকর্তা জানান।
ফুকুটিয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ভাষ্য, তাদের গ্রামের বেশির ভাগ জমি নদীর উত্তর পাশে। সেতুটি নির্মাণ হলে যাতায়াতের অনেক সুবিধা হতো। তাদের উৎপাদিত ফসল সহজেই বাজারে নিয়ে যেতে পারতেন। এখন চার কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। স্থানীয় সোমভাগ এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ হলে ১০টি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য প্রায়ই উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তাগিদ দিয়ে আসছি।’
সেতু নির্মাণকাজের ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম সজীবের বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সেতুর প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিচ্ছি, যেন দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু না করলে নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে।’