ফুলকি ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনির (৯) লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া ঈদগা ময়দানে জানাযার পর স্থানীয় কবরস্থানে রাইসাকে দাফন করা হয়।
এদিকে, রাইসার লাশবাহী গাড়িটি আলফাডাঙ্গার বাজরা গ্রামে এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। পরিবার ও গ্রামবাসীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। রাইসাকে এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভির জমাতে থাকে। রাইসার জানাযায় শরীক হন শতশত মানুষ।
বিমান দুর্ঘটনার পর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটির মুখমন্ডলের অংশ বিশেষ দেখে রাইসা হিসেবে প্রথমে দাবি করেন বাবা শাহাবুল শেখ (৪৪)। তবে তার দাবিতে আস্থা রাখতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিএনএর প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশটি হস্তান্তর করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতাল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সিএমএইচ থেকে গত মঙ্গলবার বিকালে রাইসার লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধায় ডিএনএ পরীক্ষা করে রাইসার লাশ শনাক্ত করা হয়।
রাইসা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের শাহাবুল শেখ ও মা মীম আক্তারের (৩৬) মেয়ে। পরিবার পরিজন নিয়ে রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ ঢাকার উত্তরা নয়া নগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শাহাবুল একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারী। রাইসা মনিরা দুই বোন ও এক ভাই। বোনের মধ্যে রাইসা মেজো। সে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শেণির ছাত্রী ছিল। বড় বোন সিনথিয়া (১৪) ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভাই রাফসান (৪) সবার ছোট।
রাইসার চাচা ইমদাদুল শেখ জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিল রাইসা। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিভিন্ন স্থানে ও হাসপাতালে খোঁজ খবরের পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে তার লাশের সন্ধান পাই। তার বাবা পুড়ে যাওয়া মুখমন্ডলবিশেষ দেখে নিখোঁজ মেয়ে রাইসা হিসেবে শনাক্ত করেন। রাইশার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পেটের ওপর থেকে মাথা পর্যন্ত বেশি পুড়েছে। তবে তার মুখমন্ডল আংশিক অংশ যা দেখা যাচ্চিল তা দেখে রাইসাকে সনাক্ত করেন বাবা শাহবুল। মঙ্গলবার বিকালে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আনা হয়। তবে পরিবারের ভাষ্য অনুযাীয় দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টা পর রাইসাকে খুঁজে পাওয়া গেলেও তার লাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
রাইসার চাচাতো ভাই তরিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে নিশ্চিত হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লাশ হস্তান্তর করা হয়। সকল প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ দিকে রাইসার লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামে রওনা হন। শুক্রবার বাজরা গ্রামে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে রাইসার লাশ দাফন করা হয়।