ফুলকি ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত মার্চে সরকারি সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ বিশ্ববিদ্যালয় এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরির কাজও শুরু হয়নি। তবে শিক্ষার্থী ভর্তির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ আগস্ট ভর্তি পরীক্ষা হবে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনলাইনে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির জন্য প্রস্তাবিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর তা উপদেষ্টা পরিষদের (কেবিনেট) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদন মিললে সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। এরপর উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। যে সাতটি কলেজ নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা সেগুলো হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক এক চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি অনেকটা ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া’র মতো। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগেই সেখানে ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আইনানুগ হয়নি। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে রেখেছে, তা এতদিন ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টি বোধগম্য নয়। গত পাঁচ মাসে আইনের খসড়া তৈরি করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা যেত। সেটি না করে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় নতুন আইনগত জটিলতা সৃষ্টি করা হলো। কারণ, সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীরা এখন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেই। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি এখনও প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় প্রথমবর্ষে যারা ভর্তি হবে, তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হবে? সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ ছাড়াই গ্র্যাজুয়েশনে ভর্তি কেমন করে সম্পন্ন হবে?
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা এই সাত কলেজের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি নতুন করে পুনরায় দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও কোনো অস্তিত্ব নেই, শিক্ষার্থী ভর্তি কীভাবে হচ্ছে? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা ঠিক, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায় না। এটাও সত্য, এখনও অনেক বিষয় বাকি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো আইন করা হয়নি। এসব কারণে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য একটি প্রাথমিক অনুমতি নিয়েছি। যেহেতু এটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, তাই সরকারের অনুমতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত কলেজের জন্য প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বা সমমানের একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অধীনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য গত ৯ জুলাই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৭ জুলাইয়ের একটি স্মারকের আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কাঠামোর আওতায় ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এসব বিষয়ে জানতে ভর্তি কমিটির সভাপতি, সাত কলেজের প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সভা করেছি। সভায় সাত কলেজের সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২২ আগস্ট বিকেলে ও ২৩ আগস্ট সকালে দুই শিফটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী প্রশাসক জানান, ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল বিষয়ে বুয়েট সহযোগিতা করবে। মিটিংয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য গঠিত কমিটি শনিবার (২৬ জুলাই) আরেকটি বৈঠক করবে। আশা করছি, এর পরপরই ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে।
গত ৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে সাত কলেজে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি/সমকক্ষ স্বতন্ত্র কাঠামোর আওতায় ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ইউজিসির গঠন করা এই সাত কলেজের নজরদারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘আইনগত কিছু বিষয় জড়িত থাকায় আমরা নতুন করে আবার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেব। যে কলেজের যেসব বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, সেখানে কেন শিক্ষার্থী ভর্তি করব আমরা?’ তানজীমউদ্দিন খান আরও বলেন, পুনর্বিজ্ঞপ্তি হলেও যারা আগে আবেদন ফরম কিনেছেন তাদের আর নতুন করে কিনতে হবে না। আবার কেউ যদি মনে করেন আবেদন ফেরত নেবেন, টাকা ফেরত চান, তাও ফেরত দেওয়া হবে। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না থাকায় অনেকে ভর্তির আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।
সাত কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, নানা কারণে ভর্তি প্রক্রিয়া বহুদিন পিছিয়ে গেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। ৮ ফেব্রুয়ারি ভর্তির সময়সীমা শেষ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) এবং কৃষি গুচ্ছসহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আরও অন্তত ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও সাত কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
এই সাত কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। তবে এসব কলেজ পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও অদূরদর্শিতার অভিযোগ তুলে গত বছরের অক্টোবর মাসে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে এই সাত কলেজ নিয়ে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।