বুধবার, 23 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

উলফা নেতা ও তাঁর সহযোগীর যাবজ্জীবনের পরিবর্তে ২০ বছর করে কারাদণ্ড


ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) নেতা রঞ্জন চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী প্রদীপ মারাককে একটি মামলায় যাবজ্জীবনের পরিবর্তে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। অস্ত্র আইনের ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ওই দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল খারিজ ও সাজা সংশোধন করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়েও এই দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এই মামলায় তাঁরা যত দিন কারাভোগ (১৫ বছর) করেছেন, তত দিন তাঁদের সাজাভোগ হিসেবে গণ্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল খারিজ এবং সাজা সংশোধন করে আজ রায় দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। রঞ্জন ও প্রদীপ ২০১০ সালের ১৭ জুলাই থেকে কারাগারে আছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের এক আইনজীবী।

অস্ত্র আইনের মামলায় ২০ বছর এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামিদের ১৫ বছরের কারাবাস সাজাভোগ হিসেবে গণ্য হওয়ায় ওই দুই আসামি মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের এক আইনজীবী।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম শামশাদ, নূরুজ্জামান ও আমির উদ্দিন।

অস্ত্র আইনের মামলায় আসামিদের সাজা সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আসামিপক্ষের এক আইনজীবী। তিনি বলেন, এ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপর মামলায় তাদের যাবজ্জীবন ছিল, যা সার্ভ আউট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মানে ১৫ বছর খেটেছেন, এই ১৫ বছর শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ১৫ বছর ৭ দিন ধরে তারা কারাগারে আছেন। কারাবিধি অনুযায়ী আসামিরা কিছু মাফ পায়; কারাবিধি অনুযায়ী সাধারণত ৯ মাসে বছর হয়ে থাকে। যেহেতু ১৫ বছর সার্ভ (খেটেছেন) করেছে, এ হিসাবে কারাবিধি অনুযায়ী যদি ৯ মাসে বছর গণনা করা, তাহলে ২০ বছর হয়ে যায়। এ হিসাবে তাঁরা কারামুক্তি পেতে পারেন।

আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালের ১৭ জুলাই ভৈরব পৌর শহর এলাকা থেকে রঞ্জন ও প্রদীপকে আটক করে তৎকালীন র‌্যাব-৯–এর (বর্তমানে র‍্যাব-১৪) সদস্যরা। র‌্যাবের তৎকালীন উপপরিচালক (ডিএডি) মো. করিম উল্লাহ বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা করেন।

অস্ত্র আইনের মামলায় ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল রায় দেন কিশোরগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক। রায়ে রঞ্জন ও প্রদীপকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় একই দিন রায় দেন কিশোরগঞ্জের দায়রা আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাঁদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন দুই আসামি। আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন উলফা নেতা রঞ্জন চৌধুরী নামে শেরপুরে অবস্থান করছিলেন। শেরপুরে রঞ্জন বিয়েও করেছিলেন। প্রদীপ মারাক নামের একজন সহযোগীকে নিয়ে তিনি নিষিদ্ধ কাজকর্ম করছিলেন। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবনের পরিবর্তে তাঁদের ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই আসামি ১৫ বছর ধরে কারাগারে আছেন। এই কারাভোগকে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় সার্ভ আউট (সাজাভোগ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

দুই আসামি মুক্তি পাবেন কি না, এমন প্রশ্নে সুলতানা আক্তার রুবী বলেন, এখন তাঁদের বিরুদ্ধে যদি অন্য কোনো মামলা না থাকে এবং রঞ্জন চৌধুরীর ক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্রের সঙ্গে ওদের রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে আইনি বিধিবিধান আছে, তা মেনে মুক্তি পাবে কি পাবে না, সে বিষয়টি নির্ভর করছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আপিল করা হবে কি না, তা বিবেচনা করা হবে।

মামলাসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুসারে, রঞ্জন চৌধুরী আসামে মেজর রঞ্জন হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাড়ি ভারতের আসামের ধুবড়া জেলার গৌরীপুর থানার মধু শোলমারি গ্রামে। প্রদীপের বাড়ি বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামে। রঞ্জন ২০০৭ সালে ঝিনাইগাতীর সাবেত্রী মং নামের এক আদিবাসী নারীকে বিয়ে করে ওই অঞ্চলে বাস করছিলেন।

 


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত