বুধবার, 23 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী-দলীয় প্রধান হতে পারবেন না: আলী রীয়াজ


স্টাফ রিপোর্টার : একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে আসতে হবে। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

তবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে জাতীয় সনদে কোন দল চাইলে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৭তম দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিং-এ ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না বলে একমত হয়েছে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট। কিছু দল এ বিষয়ে ভিন্নমত ব্যক্ত করেছে। ওই সব দল জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনুরোধ যারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে উৎসাহী, যদি আপনারা প্রয়োজন মনে করেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু আমরা অতীতে যেভাবে নোট অব ডিসেন্টের কথা বলা আছে, সেভাবে জাতীয় সনদে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবে। এটা সিদ্ধান্ত হিসেবে আপনাদের জানালাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কমিশন প্রস্তাবিত একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ প্রধান ও দলীয় প্রধান একজন হতে পারবে না, এমন প্রস্তাবের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমর্থন জানালেও বিরোধীতা করে বিএনপিসহ কয়েকটি দল।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ প্রধান একজন হতে পারলেও তাকে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়তে হবে এমন প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপি, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং আম জনতার দল একই ব্যক্তিকে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা করার পক্ষে মত দেয়। তবে দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী করার বিপক্ষে মত দেন জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্য দলগুলো।

সর্বশেষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব কমিশনের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন কাঠামোর নানা ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনা হলেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। সংলাপে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে বাছাই কমিটির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করে কমিশন। কমিটির বিষয়ে দলগুলো একমতও ছিল।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব দেওয়ার সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, কমিটির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ না করে গেলে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর বিধান বলবৎ হবে।

তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে বাদ রাখা হবে। অর্থাৎ কোনো ভাবেই রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে পারবেন না। ১৩তম সংশোধনীতে বিচার বিভাগ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের কথা বলা আছে। এই ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত একমত হয়েছে।

তবে এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলো আপত্তি জানানোর পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি দলের পাশাপাশি সংসদের অন্যান্য দল, এমনকি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সার্চ কমিটির সদস্য প্রস্তাবের ক্ষমতা প্রদানের বিধান রাখার সুপারিশ করেন। ফলে সিদ্ধান্ত ছাড়াই এই আলোচনা শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত। এর গঠন কাঠামো নিয়ে আলোচনায় আরও কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে ২০ জুলাই রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কমিশন একটি সংশোধিত ও সমন্বিত প্রস্তাব সব দলের নিকট প্রেরণ করে। উক্ত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দলসমূহকে মতামত দিতে বলা হয়। কমিশনের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। এছাড়া প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (র‌্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতি) এখনো ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার পুনঃআলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রস্তাব: উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় সংলাপের শুরুতে এ ট্র্যাজেডির ওপর একটি শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়। কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার শোক প্রস্তাবটি পাঠ করেন। এ সময় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীসহ সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের শোক প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

শোক প্রস্তাবে বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যথাযথ তদন্ত এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।

বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমরা একটি গভীর শোকাবহ সময়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছি। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, আমরা যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছি, নিহত ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের হাতে সময় খুবই স্বল্প। কয়েকদিনের মধ্যে যাতে জুলাই সনদ সইয়ের কাজ শেষ করা যায়, সেজন্য দলগুলোর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
 


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত