স্টাফ রিপোর্টার : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট, বুধবার সাভার থেকে প্রকাশিত ঢাকা জেলার ডিএফপি মিডিয়া তালিকাভুক্ত একমাত্র পত্রিকা দৈনিক ফুলকি অফিসসহ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে নারকীয় হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। তবে ঐদিন বিকেলে ফুলকি অফিসেই প্রথম হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। পরে বিএনপি নেতাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে।
২১ আগস্ট কারফিউ অমান্য করে ছাত্র জনতা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ ও কেন্দ্র ঘোষিত সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচীতে (কম্পিপ্লিট শার্টডাউন) অংশগ্রহণ করেন। এ দিন সকাল থেকেই তৎকালীন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) বর্তমানে কারাবন্দী আবদুল্লাহিল কাফির নেতৃত্বে মহাসড়ক থেকে ছাত্র জনতার ওপর দফায় দফায় গুলি চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেশ আক্রমনাত্মক মনোভাব নিয়ে যৌথভাবে শক্তি প্রদর্শন এবং সশস্্র মটরসাইকেল শো ডাউন করে। এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা এপিসি, জলকামানসহ সাভার ও আশুলিয়ায় মহাসড়কে কড়া পাহাড়া দিতে থাকে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সাভার থানা বাসস্ট্যান্ড ও পাকিজা মোড়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে আন্দোলনকারিদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে এদিন ৬ জন নিহত হন।
২১ আগস্ট, বুধবার বিকেলে পুলিশের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা মহল্লায় ঢুকে পড়ে। তারা প্রথমই ফুলকি অফিস প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী ভাংচুর শেষে ৪টি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ, টিভি নিয়ে গেছে পুলিশ। অফিসের জানালার গ্লাস এমন কি বাথরুমের বেসিন, লোডাউনও এ দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
ঢাকা জেলা উত্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইমের দায়িত্বে) আবদুল্লাহিল কাফির নেতৃত্বে ফিল্মি স্টাইলে অফিসে এ হামলা চালানো হয়। এ সময় ফুলকি সম্পাদক নাজমুস সাকিবকে খুঁজতে থাকেন তারা। তারা ফুলকি সম্পাদককে অফিসে না পেয়ে না পেয়ে তার বাসায় গিয়েও তাকে খুঁজে।
পরে পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফির (বর্তমানে কারাগারে বন্দি) নির্দেশে আমিনবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ হারুন অর রশিদ (বর্তমানে পলাতক) এ সময়ে পত্রিকার সম্পাদক সম্পর্কে অকথ্য ভাষায় নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে হ্যান্ড মাইকে বলতে থাকেন। তিনি এলাকাবসীর উদ্দেশ্যে ফুলকি সম্পাদককে দেখামাত্র আটক করে পুলিশে খবর দিতে বলেন। তা না করলে এলাকাবাসীর বাড়িঘরও রেহাই পাবে না এবং তাদেরও আটক করে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হবে বলে মাইকে ঘোষণা করা হয়।
এ সময় একদল পুলিশ অফিস থেকে দৈনিক ফুলকির বার্তা সম্পাদক নজমুল হুদা শাহীনকে ধরে তাদের গাড়ীতে তুলে নিতে প্রধান সড়কে পুলিশ ভ্যানের নিকট নিয়ে যায় এবং নানা ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এক পর্যায়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রেখে এবং পত্রিকার সম্পাদক তার বড় ভাই নাজমুস সাকিবের অবস্থান জানতে চায় এবং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে জিজ্ঞাসা বাদ শেষে ছেড়ে দেয়।
নজমুল হুদা শাহীন জানান, দৈনিক ফুলকি অফিসে হামলার পর তাকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে দেখতে পান।
পুলিশ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর যুবলীগ, ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় ফুলকি অফিসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান পত্রিকাটির সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে ছাত্রদের সাথে পুলিশের কয়েকদিন ধরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনার দিন গত ২১ জুলাই ছাত্র জনতাকে গুলি করতে করতে সড়ক থেকে হটিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ সাভার পৌর সভার বনপুকুর, ছায়াবিথী, রেডিও কলোনী, জামসিং, শিমুলতলা এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ও চাকুরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সরকার বিরোধী আখ্যা দিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ী ও অফিস ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের ব্যাপক গুলিবর্ষণে বহু ছাত্রজনতা হতাহত হয়েছেন।
কাফির সহযোগী হিসেবে হামলার নেতৃত্ব দেন সাভার সার্কেল অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ, সাভার থানার আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্য এস আই হারুন অর রশিদ, ভাকুর্তা ফাঁড়ি ইনচার্জ এস আই আসওয়াত, সাভার থানার এস আই মনিরুজ্জামন মনির, এস আই সুদীপ ঘোপসহ সাভার ও আশুলিয়া থানার পুলিশ এবং ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবি পুলিশ সদস্যরা।
দৈনিক ফুলকির সম্পাদক নাজমুস সাকিব জানান, পুলিশ বাহিনীর নিলর্জ্জ হামলা ছিল নিন্দনীয় ঘটনা। পত্রিকা অফিস কোন রাজনৈতিক দলের অফিস নয়। সেই পত্রিকা অফিসে কিভাবে দলীয় আজ্ঞাবহ পুলিশ হামলা চালায় তা বোথগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, মানুষ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দু:শাসন আর দেখতে চায় না। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায়। এখন জনগণ বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের উচুঁস্তরে নিয়ে যেতে চায়।
২১ আগস্ট দুপুরের পর থেকে রাতভর সাভার পৌর এলাকায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাদের বাড়ি ঘরে লুটপাট চালায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খোরশেদ আলম জানান, ২১ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে না পেয়ে ছায়াবিথী মহল্লায় তার শশুর শহীদুল্লা কায়সারের বাসায় অতর্কিত হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাট চালায়। তার বাসায় থাক ভেটেরিনারী ওষুধ ব্যবসার নগদ ৩৪ লক্ষ টাকা, ২০/২২ ভড়ি স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়।
এছাড়া গুলি করে বাসার এসি, পানির পাম্প, ফ্যান, ওয়াশ রুমের কমডসহ নানা আসবাব পত্র ঝাঝড়া করে দেয়। একই কায়দায় পুলিশ রেডিও কলোনী এলাকায় পৌর বিএনপি নেতা সোহরাব হোসেন, সাইফুর রহমান, মজিদপুর এলাকায় পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আবদুর রহমানের বাসায় লুটপাট চালায়।
আবদুর রহমানের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার রুমী জানান, তার বাসা থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন লুটে নেয়া হয়েছে। পুলিশ বাসার টিভি ফ্রিজ, এয়ারকুলারসহ বিভিন্ন তৈষজপত্র ভেঙ্গে তছনছ করে। লুটপাটকারীরা এ বাড়িতে মদ্যপান শেষে দুটি খালি বোতল ফেলে যায়।
সাভার বাসস্ট্যান্ডে সিটি সেন্টার ভবনে থাকা বিএনপি নেতা ব্যবসায়ি ওবায়দুর রহমান অভির বাসায় তারা একই কায়দায় লুটপাট চালিয়ে কোটি টাকা লুটপাট ও ক্ষতি সাধন করে।
তারা একই দিনে আইচানোয়াদ্দায় যুবদল নেতা ইউনুস খানের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ভাংচুর ও লুটপাট করে। পর্যায়ক্রমে অর্ধশত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাংচুর করে।