বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

ধামরাই থানা কাঁপালেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া কর্মকর্তা


ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাই থানা কাঁপিয়ে আলোচনায় এসেছেন এক প্রতারক। তার নাম সেলিম সরকার। পরিচয় দিচ্ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে। রয়েছে এ সংক্রান্ত ভিজিটিং কার্ডও। সেখানে লেখা আছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ আইন-২ শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সারাদেশের দুর্নীতির তদন্ত ও তথ্য প্রকাশের ক্ষমতাপ্রাপ্ত।’ এমন কাগুজে ক্ষমতা দেখেই ভড়কে যায় পুলিশ। থানায় নিয়ে করা হয় ‘জামাই আদর’।
গত শনিবার বিকেলে টানা ৩ ঘণ্টা থানায় অবস্থান করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ সময় তাকে নানাভাবে আদর আপ্যায়ন করা হয়।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতারক সেলিম এক সপ্তাহ ধরে ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তথ্য নেওয়ার নাম করে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানার মালিকের কাছে গিয়ে হুমকি দেন। দাবি করেন টাকা। এ সংক্রান্ত অভিযোগ ও একটি ভিজিটিং কার্ড বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়।


কার্ডটি সঠিক কিনা যাচাই করতে সেখানে উল্লিখিত নম্বরে কল দিলে সেলিম ও আরেক প্রতারক রোববার ধামরাই থানার সামনে আসেন। বিষয়টি থানার ওসি মনিরুল ইসলামকে অবহিত করলে তিনি সঠিক বলে আমার দেশকে জানান। এরই মধ্যে সেলিম থানায় গিয়ে নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিলে থানা পুলিশ তাকে গুরুত্বর সঙ্গে আপ্যায়ন ও যত্ন করে। বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিনি থানায় বসে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেন। এসময় ওসি থানা কম্পাউন্ডে ছিলেন না।


সেলিমের কার্ডের ছবি তুলে ওসির মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে তথ্য সঠিক আছে কিনা, জানতে চাইলে ওসি ফিরতি ম্যাসেজে লেখেন ‘ঠিক আছে।’ কার্ডে লেখা আছে-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী ২০১১ সালের ৭ নম্বর আইন, বিধিমালা প্রণয়ন-২০১৭ সেলিম সরকার তথ্য প্রকাশকারী, এরিয়া সমগ্র বাংলাদেশ। আইডি নম্বর-১১১৯, মোবাইল ফোন নম্বর ০১৮১২৫৩৭৭৭৪-এর নিচে লেখা আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখা বিভাগ আইন (২ শাখা) সুরক্ষা আদেশ বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা।


সেলিমের বিষয়ে আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ে এ নামে কোনো কর্মকর্তা তো দূরের কথা কোনো পিয়নও নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।


ধামরাই এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে সেলিম ও তার সহযোগীরা মানুষের কাছে গিয়ে তথ্য যাচাইয়ের নামে হয়রানি করেছিলেন। এ কাজে তারা একটি প্রাইভেটকারও ব্যবহার করেন। লোকজনের কাছে গিয়ে নানা তথ্য চান এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য টাকা দাবি করেন।


এ বিষয়ে সেলিমের ভিজিটিং কার্ডের নম্বরে ফোন করে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পুরো পরিচয় ভিজির্টিং কার্ডে লেখা আছে। ভিজিটিং কার্ডের দেওয়া সব তথ্য সঠিক। আমাকে বেশি বিরক্ত করলে মামলা করে সবগুলোরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এনে বেঁধে ফেলবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাউকে বেঁধে রাখতে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একবার বাঁধলে বুঝতে পারবে, আমার ক্ষমতা।’ 


রোববার রাত সাড়ে এগারোটায় এ প্রতিবেদক সেলিমের কার্ডে উল্লেখিত মোবাইল নাম্বারে কল করলে তিনি জানান, সে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের আইন শাখা-২ এ কর্মরত। এছাড়াও সে ‘দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করি’ নামের একটি সংগঠনেরও সদস্য। ঐ সংগঠনের চেয়ারম্যানের নাম শ্রীপলক কান্তি চৌধুরী। একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে একটি বেসরকারী সংহঠনের সঙ্গে জড়িত হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, আপনার বাড়ি কোথায়? আমার বাড়ি কিন্তু সাভার, মনে রাখবেন। দুর্নীতির প্রমাণ থাকলে দেন?


সেলিমের সঙ্গী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী অপর প্রতারক আবদুল আলিমের ০১৩২১৬৪৭৩৩৪ নম্বরের ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হয়রানি করার জন্য উল্টো আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ধামরাই থানার ওসিকে বলে দিয়েছি। ওসিও বলেছেন আপনাদের নামে অভিযোগ দায়ের করতে।’


নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আবদুল আলিম বলেন, ‘আপনি জানেন না ২০১১ সালের ৭ নম্বর আইন বিধিমালা প্রণয়ন করে ২০১৭ সালে আমাদের এ সংস্থার প্রজ্ঞাপন হয়। আমরা কোনো কনস্টেবল ও দারগার সঙ্গে কথাই বলি না। ওসিদেরই শোকজ করার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়েছে। দুদকে সরাসরি অভিযোগ দায়েরের একমাত্র ক্ষমতাও আমাদের।
 

 

সর্বাধিক পঠিত