স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরেই দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রথম দিন (২৫ ডিসেম্বর) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে রাতেই গুলশানের বাসায় যান তিনি।
তবে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার সময় কাটে। জুমার পর দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বাসায় গেলে তাদেরকেও সময় দেন।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি দুপুর ২টায় শেরেবাংলা নগরে তার বাবা ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার কথা থাকলেও গুলশানের বাসা থেকে বের হন দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটে। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে পথে পথে নেতাকর্মীদের ভিড়ে গুলশান থেকে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় একঘণ্টা ৩৫ মিনিট।
দীর্ঘ দিন পর নেতাকে পেয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, এতে আগামী দিনে দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হবে।
বিকালে বিএরপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আগামীতে তারেক রহমানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে দেশের মানুষ। তার রাজসিক প্রত্যাবর্তন সেই বার্তাই বহন করে।’’
পথে পথে নেতাকর্মীদের উষ্ণ ভালোবাসা
শুক্রবার দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে শেরেবাংলা নগরে বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের উদ্দেশে রওনা দেন তারেক রহমান। তবে দলীয় নির্দেশনা না থাকলেও নেতাকে বরণ করতে সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। এ সময় তারা তার ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন করে তাকে শুভেচ্ছা জানান। জবাবে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের ভিড় অতিক্রম করে দেড়ঘণ্টা পর বিকাল ৪টা ২৭ মিনিটে জিয়া উদ্যানে সমাধিস্থলে পৌঁছে তাকে বহনকারী গাড়ি বহর।
১৯ বছর পর বাবার সমাধিতে
দীর্ঘ ১৯ বছর পর শেরেবাংলা নগরে বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যান তারেক রহমান। প্রথমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে একা আলাদা শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ সময় সবাইকে নিয়ে মোনাজাত ও ফাতেহা পাঠ করেন। কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এর আগে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব থাকাকালীন ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাবা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন তারেক রহমান।
বেহলি ব্রিজ থেকে হেঁটে গেলেন সমাধিস্থলে
বাস থেকে নেমে সংসদ ভবনের পেছনে বেইলি ব্রিজ থেকে হেঁটে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙা স্রোত সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এক পর্যায়ে তারেক রহমানকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তোলেন তারা। তবে এ সময় বেস্টনি থেকে বের হয়ে এক পর্যায়ে হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ সময় মুহুর্মুহু তারেক তারেক স্লোগানে মেতে ওঠেন হাজার হাজার মানুষ।
একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে গেলেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে
সূর্যাস্তের আগে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে না পারায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে সিনিয়র নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মূলত মহান জাতীয় স্মৃতিসৌধ বেদিতে নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের আগে পৌঁছানোর সম্ভব না হওয়ায় বিকাল ৫টা ৬ মিনিটে তারেক রহমানের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর।
এছাড়াও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, তমিজউদদীন, ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, আইয়ুব খান, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর ও মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধেও নেতাকর্মীদের ঢল
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বিকালে জিয়া উদ্যান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে রওনা দেন তারেক রহমান। তবে সেখানেও একই অবস্থা। দুপুর থেকেই আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন প্রায় লাখো মানুষ। আর পথে পথেও ছিল ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি। এ সময় তারা সবাই প্রিয় নেতাকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান।
অবশেষে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টা ৪মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে প্রবেশ করেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর গাড়িতে বসেই রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন।
