ভারতে উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জায়গায় খ্রিস্টানদের বড়দিনের উদ্যাপনে বাধা দেওয়া বা হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। খ্রিস্টধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
বড়দিনের মৌসুমে খ্রিস্টানদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আক্রমণ চালাচ্ছে জানিয়ে ভারতের ক্যাথলিক বিশপ’স কনফারেন্স বলেছে, তারা এসব ঘটনার ‘কোনো যদি-কিন্তু না রেখেই নিন্দা জানাচ্ছে।’
সংগঠনটি জানিয়েছে, ভারতজুড়ে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বড়দিন ও এর আগে উদ্যাপনের প্রস্তুতির সময়ে যীশুখ্রিস্টের জন্ম উদ্যাপন করতে গাওয়া আনন্দের গান ‘ক্রিস্টমাস ক্যারল’-এর গায়ক-গায়িকাদের ওপর, চার্চে ধর্মীয় সভায় কিংবা বড়দিনের অনুষ্ঠানে বাধা দিয়েছে ও হেনস্তা করেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব অভিযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন চার্চে ভাংচুর, বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করে দেওয়া এবং বড়দিনের উৎসব পালন করতে থাকা মানুষকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার ঘটনার প্রতিবেদনও তুলে এনেছে। নির্যাতিত খ্রিস্টানদের পাশে থাকার লক্ষ্যে সৃষ্ট অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন ডোরস’-এর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শুধু বড়দিনের সময়েই ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের ওপর ৬০টিরও বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা জুগিয়েছে যেগুলো, তার মধ্যে একটি মধ্য প্রদেশের জাবালপুরের, যেখানে বড়দিনের উৎসবে যোগ দেওয়া এক দৃষ্টিশক্তিহীন খ্রিস্টান নারীকে হেনস্তা ও মারধোর করতে দেখা যায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্থানীয় নেত্রী আঞ্জু ভারঘাভাকে। ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে সাধারণ্যে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিরোধী দল কংগ্রেস এটিকে বলছে ‘বর্বরতা ও নির্মমতার উদাহরণ।’ চারিদিকে সমালোচনার পর স্থানীয় বিজেপি ভারঘাভাকে শো-কজ নোটিশ দিয়েছে। ভারঘাভা অবশ্য কোনো ভুল করেননি দাবি করেছেন। পুলিশ বলছে এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ।
ওড়িশা ও দিল্লির আরও দুটি ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, কোথাও সান্তা ক্লজের ক্যাপ বিক্রি করা ব্যক্তিদের হেনস্তা করছেন একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবক, কোথাও বড়দিনের সাজে থাকা নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই বড়দিন উদ্যাপনকারীদের ওপর ‘হিন্দু দেশে’ খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারণার অভিযোগ তুলেছে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন আগ্রাসন চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী মব তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে।
ক্যাথলিক বিশপস’ কনফারেন্স এ ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আইনি কড়াকড়ি আরোপ এবং খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে বড়দিন উদ্যাপন করতে পারেন। সংগঠনটি বলেছে, উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের এসব কর্মকান্ড স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে।
খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘুদের আইনি অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বছরে ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর অন্তত ৬০০টি আক্রমণ হয়েছে।
১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ খ্রিস্টান। হিন্দু ও মুসলিমদের পর ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ জনগোষ্টী খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী।
