রাতে ম্যাচ শেষ করে ভোরেই কলম্বো থেকে ফ্লাইট ধরেন লিটনরা। বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ঢাকায় পা রাখেন লঙ্কা জয়ের আমেজ নিয়ে। যদিও বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকা ক্যামেরার সামনে কথা বলনেনি তাদের কেউ, তবে তানজিদ-তাসকিনদের আত্মবিশ্বাসী হাসি ঠিকই ফ্রেমবন্দি করেছে মিডিয়া।
প্রায় এক মাস সফরের ধকল কাটানোর জন্য এদিন বিশ্রাম ছিল তাদের। তবে আজই ঐচ্ছিক অনুশীলনে কয়েকজনকে ফের কিটস খুলে ব্যাট-বল নিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়তে হচ্ছে, কেননা পরশুই যে পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ।
বৃষ্টি ভেজা ঢাকায় দুদিন হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে আজ পাকিস্তান দলও মিরপুরে অনুশীলনে নামবে। তিন ম্যাচের এই সিরিজ হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। ঘরের মাঠের এ সিরিজে লঙ্কাজয়ী স্কোয়াডের ওপরই আস্থা রেখেছেন নির্বাচকরা। তাই স্কোয়াডে সেই পাঁচ পেসার আর চার ওপেনার রেখে দেওয়া হয়েছে।
যদিও মিরপুরের উঠোন আর বাইশ গজ লিটনদের কাছে হাতের তালুর মতোই চেনা, তার পরও এখানে তারা আন্তর্জাতিক টি২০ খেলছেন না প্রায় ১৪ মাস। সর্বশেষ এখানে টি২০ সিরিজ খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছরের মে মাসে। যেখানে এই মিরপুরেই দুটি ম্যাচের একটিতে ব্লেসিং মুজারাবানি আর সিকান্দার রাজাদের কাছে হেরেছিলেন।
পাকিস্তান দল সম্পর্কেও তাই যথেষ্ট সতর্ক বাংলাদেশ অধিনায়ক। ‘পাকিস্তান সিরিজ মিরপুরে খুব একটা সহজ হবে না। কারণ পাকিস্তান দলে অনেক বৈচিত্র্য আছে। সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তাদের বেশির ভাগ ক্রিকেটার আমাদের বিপিএল খেলে, তারা কন্ডিশন জানে। আমি আশাবাদী, স্মার্ট ক্রিকেট খেললে আমরা জিততে পারব।’
কলম্বোতে সিরিজ জয়ের পর মিডিয়ার সামনে তিনি মিরপুরের পিচের সর্বশেষ কন্ডিশন সম্পর্কে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ‘মিরপুরের উইকেট কেমন হয়, তা আপনারা সবাই জানেন। তবে গত কিছুদিন ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে পিচের পরিচর্যায় পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরে সর্বশেষ টি২০ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ প্রায় চার বছর আগে। তিন ম্যাচের সবগুলোতেই হেরেছিল টাইগাররা। তার চেয়েও কষ্টকর ছিল তিন ম্যাচের কোনোটিতেই ১৩০ পার করতে না পারা। অবশ্য সেই দলের মাত্র চার ক্রিকেটার আছেন বর্তমান স্কোয়াডে। তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরিফুলদের সঙ্গে সেই সিরিজে খেলেছিলেন ওপেনার নাঈম শেখও।
মিরপুরের বর্তমান পিচ যতটা না অপরিচিত লিটনদের কাছে, তার চেয়ে বোধহয় বেশি পরিচিত তাদের কাছে পাকিস্তান দলটি। সর্বশেষ এই মে-জুনেই লাহোরে গিয়ে তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ দল। সেখানেও সবগুলো ম্যাচেই হার মেনে নিতে হয়েছে। এবং সেখানেও ছিল সেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের গল্প– ১৬৪, ১৪৭ আর সাকল্যে ১৯৭ রানের ইনিংস।
তবে লাহোরের মতো মিরপুর যে ব্যাটিং স্বর্গ নয়, সেটা দেশ ছাড়ার আগে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা স্বদেশি মিডিয়ার কাছে বলে এসেছেন। ‘মিরপুরে অনেক বড় বড় দলকে হারানোর কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের। সুতরাং সেখানে আমাদের জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে।’
দলের সেরা দুই পারফরমার হাসান আলী আর সাদাব খানকে ছাড়াই এবার বাংলাদেশে এসেছেন সালমান আগারা। পিএসএলে পারফর্ম করা সালমান মির্জার মতো পেসারদের নিয়ে এসেছেন তারা। তবে ব্যাটিং অর্ডারে সেরা বাছাইদেরই নিয়ে এসেছেন পাকিস্তানের কিউই কোচ মাইক হ্যাসন। সাহেবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, ফখর জামান, মোহাম্মদ হারিসরা থাকছেন একাদশে। যাদের অনেকেই প্রথমবারের মতো পাকিস্তান দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
তবে তাদের কাছে মিরপুর কিন্তু অচেনা নয়, পাকিস্তান এই দলের অন্তত ছয় ক্রিকেটার বিপিএল খেলে গেছেন গেল বছর। তাই লঙ্কা সিরিজের মতোই ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষেও অধিনায়ক লিটন দাসকে বাড়তি টেবিল ওয়ার্ক করতে হবে। যেমনটা তিনি কলম্বোতে মেহেদী হাসান মিরাজের বদলে শেখ মেহেদিকে খেলিয়ে করেছিলেন।
আসলে প্রতিটি সিরিজের আগে নেটে পনেরো-কুড়ি মিনিটের অনুশীলনের চেয়ে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে বসে এই পরিকল্পনা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কায় টি২০ সিরিজ জয়ের প্রেরণা হয়তো ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে লিটনদের এগিয়ে রাখবে, তবে লাহোরে সিরিজ জয়ের পর বলা পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার সেই কথাটিও মনে রাখতে হবে– ‘ফেয়ারলেস উইদাউট বিয়িং কেয়ারলেস...’ অসাবধান না হয়ে নির্ভীক থাকতে হবে।