সোমবার, 22 ডিসেম্বর 2025
MENU
#
জোরালো হচ্ছে শেখ পরিবারের নাম মুছে ফেলার দাবি
daily-fulki

জোরালো হচ্ছে শেখ পরিবারের নাম মুছে ফেলার দাবি

ঢাবি প্রতিনিধি : জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনাগুলো এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এসব স্থাপনার নাম পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের নামে একাধিক হল, আবাসিক ভবন ও অবকাঠামো রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑবঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, শেখ রাসেল টাওয়ার। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সভা-সেমিনার কক্ষ, বাগান ও অন্যান্য স্থাপনাও শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে এসব নাম রাজনৈতিক আধিপত্য ও একদলীয় কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সে শাসনব্যবস্থার পতন ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতায় এসব চিহ্ন এখনো বহাল রয়েছে।

এদিকে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ফ্যাসিবাদের চিহ্নমুক্ত’ করার দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ পরিবারের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি নতুন করে সামনে আসে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন নাম বহাল রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শেখ মুজিবুর রহমান হল’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’ এবং ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘ফেলানী হল’ করার দাবিতে উপাচার্যের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

গতকাল রোববার দুপুরে ডাকসু নেতারা, বিভিন্ন হল সংসদের প্রতিনিধি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ‘ফ্যাসিবাদের আস্তানা, ঢাবিতে থাকবে না’, ‘মুজিববাদ মুজিববাদ, মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেন শিক্ষার্থীরা

ঘেরাও কর্মসূচিতে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, ইতিহাস থেকে আমরা দেখেছি, হাসিনার চেয়েও বড় স্বৈরাচার ছিল তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। হাসিনার বিদায়ের পর সেই স্বৈরাচারের আইকন হিসেবে মুজিবের কোনো চিহ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা যাবে না। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদের সব চিহ্ন উপড়ে ফেলতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, জুলাইয়ে যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেয় এবং বিভিন্ন অপরাধে সরাসরি জড়িত, তাদের অতি দ্রুত প্রশাসনিক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

ডাকসুর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওসমান হাদি হল, ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করে ফেলানী হল নামকরণের দাবি জানিয়েছি। এছাড়া জুলাই গণহত্যায় সমর্থন দেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলকের ওপর ‘শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হল’ লেখা নামফলক স্থাপন করেন ওই হল সংসদের ভিপি ও জিএস। সেদিনই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে হলের নাম পরিবর্তনের দাবি জানান।

এদিকে, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তনের দাবিকে কেন্দ্র করে হল সংসদের ভেতরে আপত্তি উঠেছে। হলের ভিপি তাসনিম আক্তার নাবিলা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের না জানিয়ে ডাকসু কীভাবে এমন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটা কেন করা হলো। আমরা এর জবাব চাই। এ নিয়ে আজ (গতকাল) রাতে হল সংসদের সভা আছে, সেখান থেকে আমরা সামগ্রিক সিদ্ধান্ত জানতে পারব।

এদিকে, হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুল জান্নাত রিফাত ফেসবুক পোস্টে লেখেনÑহলের নাম পরিবর্তন নিয়ে আমরা একমত ছিলাম এবং মেয়েদের মতামতও সংগ্রহ করছিলাম। তবে ডাকসুর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দেওয়ার আগে আমাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। সুতরাং চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মানব না।

তিনি আরো লেখেন, হলের শিক্ষার্থীদের ভোটে সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছে ‘ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম হল’ নামটি, যিনি একজন বীর প্রতীক এবং নারীদের লড়াইয়ের প্রতীক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে ‘ফেলানী হল’ নামটি।

এ বিষয়ে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, হলের বিতর্কিত নামগুলো পরিবর্তনই এখানে মুখ্য বিষয়। এ নিয়ে দ্বিমতের কিছু নেই। নিশ্চিতভাবে কোন নাম হবে এবং কেন হবে, সেটা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে।

এদিকে, চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ নাম থেকে ‘জাতির জনক’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হয়। তবে পুরো নাম পরিবর্তনের দাবি তখনো ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় প্রশাসনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে উত্থাপিত দাবিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
 

সর্বাধিক পঠিত