স্টাফ রিপোর্টার : সাভার পৌরসভার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই (৫ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগে) নকশা বহির্ভূতভাবে পুন:নির্মিত হচ্ছে জেএফ বাণিজ্যিক টাওয়ার। অবৈধভাবে এ পুন:নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে সাভার পৌর কর্তৃপক্ষ ২ দফায় নোটিশ দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না মালিকপক্ষ। মালিকপক্ষ জমির চারদিকে বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে ভিতরে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর বক্তব্য, জেএফ টাওয়ার আর একটি ধসে পড়া রানা প্লাজা ও স্পেকট্রাম গার্মেন্টস মতো ভবন নির্মিত হচ্ছে। এ ঘটনায় আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, জেএফ টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: জামাল উদ্দিন সাভার পৌর সভায় নকশা (প্ল্যান) অনুমোদনের জন্য ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর আবেদন করেন। পরে ১১ সদস্যের বিসি (বিল্ডিং কোড) সভায় নকশার আবেদন ১৭টি শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন করা হয়।
বিসি’র এ অনুমোদন সাপেক্ষে সাভার পৌর সভার তৎকালীন মেয়র হাজী আব্দুল গনি ২০২২ সালের ৩০ জুন নকশা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন। যার স্বারক নং-সাপৌস/প্রকৌ/২০২১-২০২২/১৫২৮। ভবনের নকশা অনুমোদন পাওয়ার পরই জেএফ টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হয়। পরে নীচতলায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এবং উপরে একটি ক্লিনিকের কাছে ভাড়া দেয়া হয়।
জেএফ টাওয়ার নির্মাণের পরে তারা কমবেশি ৩ বছর ভাড়া থেকে ভবন ব্যবহার করে। অতিসম্প্রতি তাদের তুলে দিয়ে ঐ একই ভবন সাভার পৌরসভার পুনঃঅনুমোদন না নিয়ে নকশা বহির্ভূতভাবে পিলার বসানোসহ পুন:নির্মাণ/ব্যাপক সংস্কার কাজ শুরু করে গোপনে তা অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।
বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ গোপনভাবে জানতে পেরে গত ২২ অক্টোবর ২০২৫ সরেজমিনে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। এ সময় পৌর কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে মালিক পক্ষকে পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। কিন্তু মালিক পক্ষ কাজ বন্ধ না রেখে পুন:নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় জেএফ টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন গং-কে সাভার পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী গত ৩০ অক্টোবর ২০২৫ নোটিশ দিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে পুনঃনির্মাণ কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখে ঐদিনেই নির্মাণাধীন ভবনের অনুমোদিত নকশা, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের কপিসহ প্রকৌশল বিভাগে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়। অন্যথায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়, যার স্মারক নং সাপৌস/প্রকৌ/২০২৫-২০২৬/৩৩৬।
কিন্তু সাভার পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী প্রথম দফার নোটিশের জবাব না পেয়ে এবং নির্মাণ কাজ চালিয়ে নেয়ার কথা শুনে গত ২৫ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় জেএফ টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: জামাল উদ্দিন গং-কে বাণিজ্যিক ভবন পুন:নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে আবারও একটি নোটিশ দেন। যার স্মারক নং-সা:পৌ:/প্রকৌ:বি:/২০২৫/৩৫১।
দ্বিতীয় নোটিশে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আপনারা সাভার পৌরসভা হতে গত ৩০/০৬/২০২২ খ্রি: তারিখে ১ নং সূত্রে বর্ণিত স্মারকমূলে নকশা অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করে ব্যবহার করছেন।
২নং সূত্রে বর্ণিত গত ৩০/০৯/২০২৫ খ্রি: তারিখে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রসহ হাজির হতে বলা হলেও আপনি যথাসময়ে উপস্থিত হননি। অধ্য ১৪/১০/২০২৫ খ্রি: তারিখে সাভার পৌরসভার প্রকৌশল টীম সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পান যে, আপনি ভবন ব্যবহার চালু রেখে পুন:নির্মাণ/সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যা কোনভাবেই নিরাপদ নয়। জননিরাপত্তার স্বার্থে ভবন ব্যবহার বন্ধ রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায়, পত্রপাপ্তির সাথে সাথে বাণিজ্যিক ভবনটি ব্যবহারসহ সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে অনুমোদিত নকশা বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি অতীব জরুরি এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট।’
এবারও নোটিশের অনুলিপি দেয়া হয়েছে, প্রশাসক, সাভার পৌরসভা, অফিসার ইনচার্জ সাভার মডেল থানা, সহায়ক সদস্য-ওয়ার্ড-০৫, সাভার পৌরসভা ও উপ-সহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা জোন-৩ কে।
কিন্তু জেএফ টাওয়ার কর্তৃপক্ষ এবারও নোটিশের জবাব না দিয়ে তাদের নির্মাণ কাজ চালু রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও সেফগার্ড ফোকাল পারসন অভিযোগ নিরসন সেল সদস্য মো: আমজাদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাজ বন্ধ রাখার জন্য ২ বার নোটিশ দিয়েছি। শুনেছি তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া জেএফ টাওয়ার কর্তৃপক্ষ নকশা সংশোধনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এ আবেদন আগামী বিসি (বিল্ডিং কোড) সভায় উথ্থাপিত হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনে সম্মতি দেয়া হলে তারা সংস্কার কাজ করতে পারবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে পৌরসভার পত্রগ্রহণ শাখাসহ অন্যান্য শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা জেএফ টাওয়ারের পুন:নকশা অনুমোদনের কোন আবেদন পাননি বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে জেএফ টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: জামাল উদ্দিনের মোবাইলে ফোন দিলে তার ছেলে জুয়েল আহমেদ রিসিভ করেন। মো: জামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার বাবা ৬ মাস ধরে অসুস্থ্য জানিয়ে তার সঙ্গেই আলাপ করতে বলেন। জেএফ টাওয়ার পুন:নির্মাণ/সংস্কারে সাভার পৌরসভা থেকে পুন:অনুমোদন নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন না, নেওয়া হয়নি।
সাভার পৌর কর্তৃপক্ষ ২ দফায় পুন:নির্মাণ/সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ দিয়েছেন তার কোন জবাব দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান না, দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এমএসইআই থেকে ল্যাব টেস্ট করিয়েছি। তাদের অনুমোদন পেয়েছি। এমএসইআই কি নকশা পুন:অনুমোদনের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, না। তবে আমরা শীঘ্রই সাভার পৌরসভায় নকশা পুন:অনুমোদনের জন্য আবেদন করবো।
নকশা পুন:অনুমোদন না নিয়ে এবং পৌর কর্তৃপক্ষের কাজ বন্ধ করার নিষেজ্ঞা অমান্য করে জেএফ টাওয়ারের পুন:নির্মাণ/সংস্কার কাজ চলছে এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এমএসইআই থেকে ল্যাব টেস্ট করিয়েছি এবং তাদের অনুমোদন পেয়েছি। এখন নির্মাণ কাজে আর কোন সমস্যা হবে না। তবে পৌরসভার পুন:অনুমোদন নিয়ে নিবো।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাভার পৌর প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। আমি খোঁজ খবর নিয়ে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
