১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার ২০২৪। এই দিন সাভারে এমআইএসটির মেধাবী শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন শহীদ হয়েছেন। এই দিন ছিলো কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি।
এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাভারসহ সারাদেশ ছিল প্রায় অচল। সব জায়গার মতো সাভারেও চলছে শিক্ষার্থী ও জনতার দুর্বার আন্দোলন। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশ একাধাওে নির্বিচারে বৃষ্টির মতো গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। তার মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সড়কে নেমে জীবনের মায়া ত্যাগ কওে পুলিশ, র্যাব ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ইট-পাথর দিয়ে প্রতিহত করছে। তাদের স্লোগানে সাভারের বিভিন্ন সড়ক তখনও ছিলো মুখরিত।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাভারে সেদিন নিহত হয়েছিলেন রাজধানী মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী। পিতার নাম মো. মহিউদ্দিন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এক ভাই ও এক বোন ছিলো, দুই ভাই-বোনের মধ্যে ইয়ামিন ছিলেন ছোট। সে সাভারের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে। ব্সবাস করতেন সাভারের ব্যাংক টাউনে।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের মনসুর মার্কেটের সামনে ঢাকা জেলা পুলিশের একটি রায়ট কন্ট্রোল কার (এপিসি), ঢাকা জেলা ১৪ নামের মার্কিং করা গাড়িটির উপর একটা মানুষের দেহ দেখা গেল। অনেকটা নিথর এই দেহের পড়নে কালো জামা, নীল প্যান্ট। নিথর দেহ বলছি কারন তখনো সে মারা যায়নি। গুলিবিদ্ধ হয়ে কারের উপর আটকে ছিলো।
এই আটকে থাকা দেহ নিয়েই পুলিশের রায়ট কার পেছনে ফিরে আসে। একটু পিছিয়ে থামে। সামনে হাজারো মানুষ চিল্লাচ্ছে, আর্তনাদ করছে। এই পাশে পুলিশ এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সশ্রস্ত্র নেতা-কর্মীরা, অন্যপাশে পাশে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। রায়টকারটা থামিয়ে সাইড থেকে এক পুলিশ বেরিয়ে এলো, আবার উপর দিয়ে আরেক পুলিশ (যেখান থেকে বের হয়ে গুলি/টিয়ালশেল মারে), উপরের জন নিথর দেহটা সরানোর চেষ্টা করছিলো, সাইডের গেট খুলে বের হওয়া পুলিশ দেহটার প্যান্টে হ্যচকা টান দিয়ে কারের উপর থেলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় দেহটাকে। কারের ঠিক পাশেই পড়ে দেহটা, যথেষ্ট না হওয়ায় আবার টেনে-ছেচড়ে আরেকটু সাইডে আনা হয়।
এই পর্যায়ে সবাই দেখতে পায় দেহে তখনো প্রাণ আছে। বেশ কয়েকবার ঝাকি দিয়ে উঠে দেহটা (খুব সম্ভবত মারা যাওয়ার আগে তীব্র কষ্টের ঝাকি, আমরা যাকে শরীর থেকে রুহু বের হয়ে যাওয়া বলি)। এপাশ থেকে তখনো আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছে।
এখানেই শেষ না, সাভারের এই রাস্তায় ছিলো ৩-৪ ফুটের উঁচু রোড ডিভাইডার, এইবার সেই নিথর দেহটি ডিভাইডের উপর তুলে এরপর ছুঁড়ে এই পাশে ফেলে দেয়া হয়।
এমআইএসটির এর এই শিক্ষার্থীর নির্মম মৃত্যু ঠিক এভাবেই হয়। ফঢ্যাসিস্টদেও সরকারের সহযোগীদের কঠোরতায় জানাযাটাও পড়তে পারেনি স্বজন, সহপাঠি ও সহযোদ্ধারা। শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন ইয়ামিনের লাশ নিয়ে এমন নির্মমতা বিশ্বে খুব কম জায়গায়ই দেখা যায়।
এ মৃত্যুর দৃশ্যটি শুধু আমাকেই না, সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে গোটা বিশ্ববাসীকে এক্সট্রিমলি পীড়া দিয়েছিল। বিশ্বে যে কয়টি নির্মম হত্যাকান্ড ঘটেছে এমআইএসটির শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এর এ মৃত্যু তার মধ্যে একটি। সম্ভবত আজীবন পীড়া দিয়েই যাবে। মহান আল্লাহ তাঁকেসহ এই আন্দোলনের সকল শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আর এই জালিমদের উপযুক্ত শাস্তি দান করেন, আমিন, সুম্মা আমীন।