সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে এবং এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ওসমান হাদি ছিলেন ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের শত্রু এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তার অকাল প্রয়াণে দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। হাদির মৃত্যুতে তার স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই শোকের মুহূর্তে আসুন, আমরা শহিদ শরিফ ওসমান হাদির আদর্শ ও ত্যাগকে শক্তিতে পরিণত করি। ধৈর্য ধারণ করি, অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিই এবং কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকি।
তিনি বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অবিচলভাবে এগিয়ে যাই। এটাই হবে শহিদ হাদির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।
প্রধান উপদেষ্টা দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ড. ইউনূস বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ওসমান হাদির মহৎ ইচ্ছাগুলো অপূর্ণ রয়ে গেল। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায় আজ সমগ্র জাতির কাঁধে ন্যস্ত। আগামী দিনগুলোতে আমাদের সবাইকে ধৈর্য, সংযম, সাহস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের শত্রু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী অপশক্তিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা যায়।
ওসমান হাদির মৃত্যুতে আগামী শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
গভীর শোক জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিপ্লবী রক্তে উজ্জীবিত এই তরুণ নেতা ওসমান হাদি ছিলেন প্রতিবাদের এক আইকন। তার কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি শুধু প্রতিবাদ নয়, দেশপ্রেম, ধৈর্য ও দৃঢ়তার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই ওসমান হাদি ছিলেন পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের শত্রু। তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে বিপ্লবীদের ভয় দেখানোর অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয়, সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাতের মাধ্যমে এ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। শহিদ হাদি ছিলেন এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার একান্ত ইচ্ছা ছিল আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরবর্তী ধাপে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।
