স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় ২০১৬ সালে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের স্থানীয় সড়ক ও ড্রেন উন্নয়নে ৯৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি)। তবে প্রকল্পের ডিপিপিতে প্রয়োজনীয় ড্রয়িং, ডিজাইন, ইউনিট কস্ট ও ব্যয় নির্ধারণের ভিত্তি না থাকায় প্রস্তাবটি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে নীতিগতভাবে প্রকল্প অনুমোদনের সুপারিশ করা হলেও ডিপিপিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন ও সংযোজন করার শর্ত আরোপ করা হয়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় কারিগরি নথি ও ব্যয়ের যৌক্তিকতা যুক্ত না করা হলে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে না।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৯০৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৯২.৫৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সড়ক ও ড্রেন উন্নয়নে। কিন্তু পিইসির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, এই বিপুল ব্যয়ের পক্ষে কোনো বিস্তারিত নকশা, ড্রয়িং বা ইউনিট কস্টের হিসাব ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ড্রয়িং-ডিজাইন ছাড়া এ ধরনের বড় প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রতিটি কাজের বিস্তারিত হিসাব ও নকশা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। না হলে দেখা যাবে কাজ শুরু করার পর আবার সংশোধন করতে হবে। কাজের ক্ষেত্র বেড়ে যাবে। ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে হবে।
জানা যায়, প্রস্তাবিত ব্যয় হারও তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে হচ্ছে। প্রস্তাবে কিলোমিটারপ্রতি সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ড্রেনে দুই কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং স্ট্রিটলাইট ও সংশ্লিষ্ট কাজে প্রতিটি ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। এসব ব্যয়কে ‘অস্বাভাবিক বেশি’ উল্লেখ করে পিইসি এর যৌক্তিকতা প্রমাণে তুলনামূলক তথ্য ও সহায়ক উপাত্ত দিতে বলেছে, যাতে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করা যায়।
এলজিডি সূত্র জানায়, ১৮ ওয়ার্ডে মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ৬০২.৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৬০.৬৫ কিলোমিটার, অর্থাৎ প্রায় ৬০ শতাংশ সড়ক এখনো কাঁচা বা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
বাকি ২৪১.৭২ কিলোমিটার আগে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাগুলোয় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, ফলে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
২০১৬ সালে ঢাকা শহরের সীমানা সম্প্রসারণকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শ্যামপুর, মাতুয়াইল, ডেমরা, দনিয়া, সারুলিয়া, দক্ষিণগাঁও, নাসিরাবাদ ও মাণ্ডা—এই আটটি ইউনিয়ন যুক্ত হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মূলত এসব এলাকার অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভায় প্রকল্প অনুমোদনের আগে আরো কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা, সব প্রধান কাজের বিস্তারিত নকশা ও স্পেসিফিকেশন দেওয়া, ইউটিলিটি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় ও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) সংগ্রহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং প্রকল্প শেষে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে সুস্পষ্ট এক্সিট প্ল্যান যুক্ত করা। এসব শর্ত পূরণ সাপেক্ষেই ঢাকা দক্ষিণের এই বহুল ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবনায় অনেক ত্রুটি ছিল। আমরা পিইসি সভায় সেগুলো সংশোধন করে পাঠাতে বলেছি।
