বৃহস্পতিবার, 18 ডিসেম্বর 2025
MENU
#
তারেক রহমানের অপেক্ষায় পুরো দেশ
daily-fulki

তারেক রহমানের অপেক্ষায় পুরো দেশ


স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু নক্ষত্র উঠেছে, বহু নক্ষত্র মিলিয়ে গেছে। কেউ ছিলেন উজ্জ্বল, কেউ ক্ষণিকের আতশবাজি। কিন্তু কিছু নাম রয়েছে, যাঁদের সঙ্গে দেশের ইতিহাস জড়িয়ে থাকে অনিবার্য সূত্রে-দুঃসময়, উত্তরণ, সংগ্রাম ও রাজনৈতিক স্বপ্নের সঙ্গে। তারেক রহমান বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমনই এক নাম।

তাঁর প্রতি মানুষের প্রত্যাশা, তাঁকে ঘিরে জনমানসে জমে ওঠা ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা এবং তাঁর মা খালেদা জিয়ার চিকিৎসাজনিত সংকট-সব মিলিয়ে আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিভাষায় ‘অপেক্ষা’ শব্দটি নতুন অর্থ লাভ করেছে।


তারেক রহমানের অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশবাংলাদেশ কি সত্যি তারেক রহমানের অপেক্ষায়? হ্যাঁ, কিন্তু এটি কেবল দলীয় রাজনীতির প্রশ্ন নয়, এটি রাজনৈতিক ভারসাম্য, নেতৃত্বের অভাব, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথরেখা ও একজন মায়ের অসুস্থতায় দেশের আবেগ-সবকিছুর সমষ্টিগত এক প্রকাশ। এই লেখায় রয়েছে সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন, যেখানে রাজনীতির বিশ্লেষণ, ইতিহাসের তুলনা, সমাজের প্রতীক্ষা এবং মায়ার সম্পর্ক এক স্রোতে মিশে গেছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে এক অদ্ভুত বিভাজনের যুগে দাঁড়িয়ে।

রাজনীতির মাঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধা নেই, যুক্তি-পাল্টাযুক্তি নেই, বহু বছর বিরোধী রাজনীতির চর্চা নেই বললেই চলে। গত ১৮ বছর ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক আধিপত্য এতটাই বিস্তৃত ছিল যে ভিন্ন কণ্ঠের প্রয়োজনীয়তাই আজ নতুন করে অনুভূত হয়। একদলীয় প্রবণতা কখনো দীর্ঘস্থায়ী স্থিতি আনে না, বরং নতুন সংকটের উপাদান তৈরি করে।
আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভারসাম্য পুনঃস্থাপনে সক্ষম নেতৃত্বের সংকট হয়ে উঠেছে।

এই সংকট সমাধানে জনগণের দৃষ্টি স্বাভাবিকভাবেই গেছে তারেক রহমানের দিকে, যিনি বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁর প্রতি জনসাধারণের আশা শুধু দলের সুসংগঠন নয়, বরং দেশের পুরো রাজনৈতিক ভূগোলকে পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ করার প্রত্যাশা।
ইতিহাসের পরম্পরায় রাজনীতিতে তারেক রহমানের ভূমিকা পরিণত হয়েছে প্রতীকে। তারেক রহমান এমন একটি রাজনৈতিক ঐতিহ্যের উত্তরসূরি, যা বাংলাদেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাজারমুখী অর্থনীতি ও শক্তিশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামো উপহার দিয়েছিল।


জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন একদিকে ছিল বাস্তববাদী, অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী।

তারেক রহমান সেই দর্শনের উত্তরাধিকার নিয়ে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন, তবে কেবল উত্তরাধিকারী হিসেবে নয়, বরং নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে।

বিএনপির পুনর্গঠনে তাঁর সাংগঠনিক ভূমিকা অতুলনীয়। ২০০১ থেকে ২০০৬-এই সময়কালে তিনি দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ শুরু করেন। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে দলের পুনর্গঠন, শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে যুক্ত করা, আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার ব্যবহার, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি-এসবই তাঁকে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনিবার্য সম্ভাবনা হিসেবে দাঁড় করেছে, প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক সংকট ছিল বাংলাদেশের অন্যতম কঠিন সময়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপ, গ্রেপ্তার, নির্যাতন-সবকিছু মিলিয়ে তাঁকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

কিন্তু ইতিহাস বলে, ‘যে নেতৃত্ব ঝড়ের সময় ভাঙে না, তার হাতেই ভবিষ্যৎ নিরাপদ।’ তারেক রহমানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ঠিক এখানেই দৃঢ়ভাবে আত্মপ্রকাশ করে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, একজন মায়ের আহবান ও দেশের আবেগ আজ এক সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে আবেগপ্রবণ-এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। এ দেশের মানুষের কাছে খালেদা জিয়া শুধু একজন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি একজন মা, একজন সংগ্রামী নারী, একজন শোকাতুর জীবনযোদ্ধা। আজ তিনি চিকিৎসাশয্যায় শারীরিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর রয়েছে লিভারজনিত জটিলতা, কিডনি সমস্যা, দীর্ঘ রাজনৈতিক নির্যাতনের দাগ এবং বয়সজনিত দুর্বলতা। এগুলো তাঁকে দুর্বল ও অসহায় করে তুলেছে। তাঁর অসুস্থতা এখন শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি পুরো জাতির উদ্বেগ এবং একটি সহানুভূতিশীল আবেগঘন আলোচনার বিষয়। দেশের মানুষ চায় তাঁর চিকিৎসা, সুস্থতা ও মানবিক মর্যাদা। তাঁরা চায়, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন এবং জাতির দুর্দিনে সাহসী নেতৃত্ব উপহার দিয়ে যান। এপক্ষ-ওপক্ষ-নির্বিশেষে সবার কাছেই যে অনুভূতিটি সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল, তা হলো খালেদা জিয়া তাঁর ছেলেকে দেখতে চাইবেন, চাইবেন ছেলে তাঁর পাশে এসে দাঁড়াক-এটি অত্যন্ত মানবিকও।

রোগশয্যায় থাকা একজন মা তাঁর সন্তানের মুখ দেখতে চাইবেন, এর মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই, রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়ও নয়, এটি হৃদয়ের ভাষা। আর যখন দেশের একজন জাতীয় নেতা অসুস্থ, রাজনীতির মাঠ অস্থির, তখন দেশ তাঁর উত্তরসূরির দিকেই তাকায়। এই উত্তরসূরি বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসারত অবস্থায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। দুই পৃথিবীর এই বিচ্ছেদ, একজন মায়ের আহবান এবং একটি জাতির প্রত্যাশা একবিন্দুতে গিয়ে মিশেছে। তাই বলা মুশকিল, তারেক রহমানের প্রতি আজ যে অভূতপূর্ব জনসমর্থন, তা বাস্তবতা, নাকি আবেগ?

মানুষ কেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক একমুখিনতা মানুষকে নতুন নেতৃত্বের সন্ধানে ঠেলে দিয়েছে। তারেক রহমান এই শূন্যস্থান পূরণের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতীক। তাঁর  রাজনৈতিক বক্তব্য সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তিনি আলোচনায়, বক্তব্যে, বিশ্লেষণে যে বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন, সেগুলো হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বচ্ছ নির্বাচন, আইনের শাসন, যুবসমাজের ক্ষমতায়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা। এসবই আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং অতি জরুরি আলোচনার বিষয়। তিনি দূর থেকে দলের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ডিজিটাল যোগাযোগের এই যুগে তাঁর নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে যে রাজনৈতিক শক্তি ভৌগোলিক দূরত্বের কাছে হার মানে না, বরং চিন্তার শক্তি ও তেজস্বিতায় তা কার্যকরভাবে প্রকাশ পায়।

কেউ তাঁকে পছন্দ করুক কিংবা না করুক, একটি সত্য অস্বীকার করা যায় না, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একমাত্র তারেক রহমানই উপযুক্ত কাণ্ডারি, আগামী দিনের সবচেয়ে যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক। দেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় একজন সক্ষম রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবেও তাঁকে দেখছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ যেন এক বড় নদী, যেখানে স্রোত থেমে গেছে। মাঝনদীতে হঠাৎ বালুচর উঠলে নদী যেমন দিক হারায়, তেমনি এ দেশের রাজনীতিও আজ দিকহীন মনে হয়। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই দূর আকাশে কেউ যেন এক ঝলক বিদ্যুতের মতো আলোক ছড়িয়ে বলে, ফিরে আসুন তারেক রহমান, দেশ আপনার অপেক্ষায় আছে।

গ্রামের চায়ের দোকানে, শহরের পাঠাগারে, রিকশাচালকের গন্তব্যে, প্রবাসীদের আড্ডায় একটি নামই আজ বারবার উচ্চারিত হয়-তারেক রহমান। মানুষ তাঁকে দেখে একটি পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এখন একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বলতে শুরু করেছে, তারেক রহমান আসুক, অন্তত মায়ের পাশে দাঁড়াক। এটি নিছক আবেগ নয়, এটি একটি মানবিক প্রশ্ন, একই সঙ্গে রাজনৈতিক একটি প্রশ্নও। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, নিরাপত্তাঝুঁকি-সব মিলিয়ে তাঁর দেশে ফেরা কঠিন হলেও তিনি মাটি ও মানুষের টানে ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। তাঁর এই ফেরা হবে অত্যন্ত গৌরবের, অত্যন্ত সম্মানের।

তারেক রহমান এমন এক রাজনৈতিক প্রজন্মের প্রতিনিধি, যারা প্রযুক্তিতে বিশ্বাসী, অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বচ্ছতা চায়, রাষ্ট্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় এবং জাতীয়তাবাদকে আধুনিকতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চায়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোতে এ ধরনের নেতৃত্বের অভাব স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন হলো, কেন তাঁর নেতৃত্ব প্রয়োজন? উত্তর অত্যন্ত পরিষ্কার। তাঁর দুই দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, রাজনীতির তৃণমূল অবকাঠামো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান, প্রবাসে থেকে বৈশ্বিক রাজনীতি বোঝার সুযোগ, পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও সংগ্রামী ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। তিনি আজ জনগণের আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।

তারেক রহমানের জন্য পুরো বাংলাদেশ অপেক্ষায় রয়েছে। এর কারণ ও প্রেক্ষাপট নিম্নোক্ত তিনটি স্তরে বিস্তৃত-প্রথমত, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট : দেশের জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব, গণতন্ত্রের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন, একমুখী শাসনব্যবস্থায় মানুষের বিরক্তি।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক প্রেক্ষাপট : খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, জনমনে তাঁর প্রতি গভীর মানবিক সমবেদনা, মায়ের ডাকে সন্তানের ফেরা, এ এক চিরায়ত মানবিক আবেদন।

তৃতীয়ত, মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশিরা সংকটে নায়ক খোঁজে। তারেক রহমান সেই নায়কের স্থানে পৌঁছেছেন।

তারেক রহমানের ফিরে আসার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে। তাঁর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে দলের পুনর্গঠন, গণতান্ত্রিক রাজনীতির পুনরুজ্জীবন, বহুদলীয় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নির্বাচনব্যবস্থায় জন-আস্থা বৃদ্ধি, যুবসমাজের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন নেতৃত্বের উত্থান হবে। অপেক্ষার নদী, সময়ের স্রোত ও প্রত্যাবর্তনের আবেদন-সব মিলেমিশে আজ একাকার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেন এখন এক বিরাট অপেক্ষার মাঝি।

সবাই চেয়ে আছে একই দিকে, একটি নাম ও একটি প্রত্যাবর্তনের দিকে। এই প্রতীক্ষা কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি মানবিক, সামাজিক, জাতীয় এবং প্রজন্মগত আকাঙ্ক্ষার সংমিশ্রণ। খালেদা জিয়া চিকিৎসাশয্যায় কাতর। একজন মায়ের চোখ আজ অশ্রুসিক্ত। তিনি তাঁর ছেলেকে ডাকছেন, আর একটি জাতি সেই ডাকে সুর মেলাচ্ছে। মানুষ বলছে, ফিরে আসুন তারেক রহমান-মায়ের জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য।

রাজনীতির ইতিহাসে এমন মুহূর্ত খুব কমই আসে, যেখানে একজন নেতার প্রত্যাবর্তন, একজন মায়ের সুস্থতা, একটি জাতির প্রত্যাশা এবং একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্জাগরণ-একসূত্রে গাঁথা হয়ে যায়। বাংলাদেশ আজ সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

দেশের প্রতিটি মানুষ যেন মনে মনে উচ্চারণ করছে, তারেক রহমানের অপেক্ষায় আজ পুরো দেশ।

সর্বাধিক পঠিত