স্টাফ রিপোর্টার : গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি কায়দায় আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নাহিদ ইসলাম। এ হামলায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার রাতে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ‘আমরা কোন দিন কোন জেলায় যাব, এটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা, নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা গোপালগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা করেছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় হামলা করে তারা।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘যতই বাধা, হামলা, হত্যাচেষ্টা হোক, দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা থামবে না। বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে পূর্বনির্ধারিত সময়ে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জসহ পরবর্তী জেলাগুলোতে নির্ধারিত সময়েই পদযাত্রা যাবে।’
এ সময় গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েছে, আওয়ামী লীগ মুজিববাদী সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট জঙ্গি বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে। তারা আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেই। গণঅভ্যুত্থানের এতদিনে আবারও সেটি জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়েছে।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা শুনেছি, গোপালগঞ্জের ভেতরে ফ্যাসিস্টদের আশ্রয়কেন্দ্র হয়েছে। সারাদেশে যাদের নামে মামলা হয়েছে, ফেরারি আসামি, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা রয়েছেন, তারা সবাই গোপালগঞ্জে ছিলেন। তারা গণঅভ্যুত্থানের এবং এনসিপির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছেন।’
নাহিদ বলেন, ‘যে কোনো জেলায় যাওয়ার আগে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স (নিরাপত্তা ছাড়পত্র) নিয়েই যাই। গোপালগঞ্জেও একইভাবে যাওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছে, যে রুটে যেতে বলেছে, আমরা সেভাবেই গিয়েছি এবং আসার সময় সেভাবেই এসেছি। তারা আগে থেকে কঠোর ও সতর্ক হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারত।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল ৩০ দিনে ৬৪ জেলায় যাবে। গোপালগঞ্জে আজ (বুধবার) পথসভা হয়েছে, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) নির্ধারিত সময়ে ফরিদপুরে পথসভা হবে। এর পর ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ হয়ে চলতে থাকবে। যতই বাধাবিপত্তি, হামলা, হত্যাচেষ্টা হোক না কেন, দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা থামবে না। আজ মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের পথসভা স্থগিত হয়েছে, সেটা পরে হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করার অধিকার আমাদের আছে। গোপালগঞ্জে কেন যাব না? সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল সরকারের। প্রশাসনের ভেতর থেকে কোনো স্যাবোটাজ হয়েছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখতে হবে। তাদের তৎপরতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’
‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই পদযাত্রা ও মার্চ করছি, গোপালগঞ্জেও আলাদা কিছু ছিল না। গোপালগঞ্জে কর্মসূচি ১৫ থেকে ২০ দিন আগে ঠিক করা। বরং আওয়ামী লীগ অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার অনেক আগেই তৎপর হওয়া উচিত ছিল।’
গতকালের এই হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান নাহিদ।
সংবাদ সম্মেলনে আকতার হোসেন, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সামান্তা শারমিন, তাসনিম জারাসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শিগগির এ হামলার জবাব দেওয়া হবে
এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলার জবাব শিগগির দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক এলাকায় সমাবেশস্থলে তিনি এ ঘোষণা দেন।
গত ১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করছে এনসিপি। এরই ধারাবাহিকতায় দলটি গতকাল পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি পালন করে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জের পদযাত্রা ও সমাবেশে মুজিববাদীরা বাধা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে বাধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে জিততে হবে এবং সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছিলাম। আজকে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। শিগগির আমরা এর জবাব দেব।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে মুজিববাদীরা, গোপালগঞ্জকেও কলুষিত করেছে। সেই গোপালগঞ্জকে আমরা উদ্ধার করব। যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, নতুন বাংলাদেশের পক্ষে, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে, এই গোপালগঞ্জ যেন আর মুজিববাদীদের কেন্দ্র হয়ে উঠতে না পারে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, নিজেদের জেলার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব, বাংলাদেশকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের নিতে হবে। যেমন আমরা গণঅভ্যুত্থানে নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ‘গোপালগঞ্জ’ নামের কারণে ভবিষ্যতের চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। কিন্তু গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে আমরা দেব না। গোপালগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক সম্পদ আওয়ামী লীগ নেতারা দখল করেছে। তাদের সঙ্গে বেইনসাফ করেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে সব ধর্মের অধিকার রক্ষা করব।
সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।