বৃহস্পতিবার, 31 জুলাই 2025
MENU
daily-fulki

'অন্ধ শিল্পচর্চার কোনো মানে নাই'

কামার আহমাদ সাইমন। গুণী নির্মাতা। গত ১১ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই নির্মাতার ‘জলত্রয়ী’র দ্বিতীয় সিনেমা ‘অন্যদিন’। এই সিনেমা ও অন্যান্য বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। 

‘অন্যদিন’ নামটি শুনলেই যেন একটা দ্বিধা ও প্রতীক্ষার অনুভব আসে। এই নামের পেছনের ভাবনা কী ছিল? নামটি কি শুরু থেকেই চূড়ান্ত ছিল, নাকি নির্মাণের কোনো পর্যায়ে এসে নির্ধারণ করা হয়?

‘অন্যদিন’ নামটা কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম প্রকাশিত বই ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’ থেকে প্রভাবিত। ছবিটা যারা দেখেছেন, তারা জানেন যে, একদম প্রথমেই আমি একটা প্রস্তাবনা দিয়ে শুরু করেছি– সেখানে এই দ্বিধাটা আছে, প্রতীক্ষা আছে। একদম শুরুতে, আমরা যখন অর্থায়নের জন্য পিচিং করছিলাম, তখন এর ইংরেজি নাম ছিল ‘ডে আফটার টুমরো’, পরে যেইটা ছেঁটে হয়েছে শুধু ‘ডে আফটার’ ভাবনাটা এ রকম যে, আজকের দিনটা না হয় গেল কিন্তু এর পর কী হবে? বাংলায় যেটাকে লিখেছিলাম ‘অন্যদিন’।

এই চলচ্চিত্রের মূল অনুপ্রেরণা কি কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নাকি বৃহত্তর সামাজিক বাস্তবতা?

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। ছেলেবেলায় মন খারাপ হইলেই চলে যেতাম সদরঘাটে, লঞ্চের ছাদে বসে মানুষ দেখতাম। ক্যানভাসটা মাথায় ছিল, এরপর ‘শুনতে কি পাও!’ শেষ করে যখন জলত্রয়ীর কথা ভাবলাম– এক ঝটকায় সদরঘাটের সেই পিলপিল করে হেঁটে চলা হাজারো মানুষের মুখ ভেসে আসল। লাল-নীল, ছোট-বড়, কত শত মানুষ– যেই মানুষকে আমাদের কালচারাল পরিসরে, শিল্পসাহিত্য, আর্কিটেকচার, এমনকি রাজনীতিতে– কোথাও আমরা অ্যাড্রেস করতে পারি নাই।

আপনার আগের কাজগুলোর তুলনায় ‘অন্যদিন’-এ নির্মাণশৈলীতে কী ধরনের পরিবর্তন বা ভিন্নতা এনেছেন? যদি এনে থাকেন, তাহলে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, নাকি সময় ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই এসেছে?

‘শুনতে কি পাও!’ একটা নন-ফিকশন ফিচার, কাস্টিং থেকে শুরু করে স্ক্রিপ্টিং পর্যন্ত এর পুরোটাই চালনার দাকোপ থানার সূতারখালি গ্রামের মানুষদের জীবন থেকে নেওয়া। এক প্লাটুন পুলিশ নিয়ে ডকুড্রামা তৈরি করেছিলাম ‘নীল মুকুট’, যাদের সত্যি সত্যিই অ্যাসাইনমেন্ট ছিল হাইতিতে। ওদেরকে ফলো করে আমরাও হাইতি পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। ‘একটি সূতার জবানবন্দী’ একটি অসম্পূর্ণ মনোলোগ কোলাজ। ‘শিকলবাহা’ হচ্ছে ফিকশন ফিচার। কিন্তু, ‘অন্যদিন’ অ্যাপ্রোচই করেছি উল্টোভাবে। চরিত্র বাছাই না করে, চরিত্র তৈরি করেছি। ঘটনাক্রম শুট না করে, আইডিয়া-স্ক্রিপ্ট ফলো করেছি, ঘটনা ঘটিয়েছি। অনেকটা অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসটার মতো, যেখানে প্রায় সব চরিত্র, সব ঘটনাই বানানো– কিন্তু পুরোটাই আবার এক্সপেরিন্সিয়াল।

আপনার সিনেমাগুলো তুসিন্সকি, পম্পিদ্যু, মমি, স্টেট থিয়েটারে প্রদর্শিত হয়েছে– এই অভিজ্ঞতাগুলো কি আপনার শিল্পীসত্তাকে সন্তুষ্ট করেছে, নাকি আপনি এখনও দেশের সাধারণ দর্শকের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করেন?

এইখানে বিদেশি উৎসবে ছবি দেখানোর দুইটা দিক খোলাসা করা জরুরি। যেমন ধরেন আমস্টারডামের তুসিন্সকি, প্যারিসের পম্পিদ্যু সেন্টার, নিউইয়র্কের মমি বা সিডনির স্টেট থিয়েটারের মতো জায়গায় ডেডিকেটেড দর্শকের কাছে ছবি দেখানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে– নির্মাতা হিসেবে এক অর্থে এইটা আমার জন্য শ্লাঘার বিষয়, আবার আরেক অর্থে এইটা নির্মাতার দীনতারও প্রকাশ। কিন্তু আমাদের একটা ভিন্ন সমাজ বাস্তবতা আছে। যেহেতু আমার ছবিতে কোনো ‘ব্যাংকেবল আর্টিস্ট’ নাই, যাদের কাস্ট করলে সিনেমা হলে ট্র্যাকশন গ্যারান্টি থাকে অথবা লগ্নি ফেরত আসার সুযোগ থাকে– সেহেতু বিদেশি এই তকমাগুলো আমাদের মতো পোস্ট-কলোনিয়াল সমাজে, যেখানে দর্শক এখনও নিজেদের ওপর খুব একটা ভরসা করতে শিখে নাই– তাদের জন্য দরকার। কিন্তু দিনের শেষে, বাংলাদেশের সেইসব দর্শক, যারা আমার প্রতিটা ন্যুয়ান্স বোঝে, রিয়েক্ট করে–আমি সেই দর্শকের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকি।

আপনার চলচ্চিত্রে বারবার ‘মানুষ’ এবং ‘সময়ের ধ্বনি’ উঠে আসে। এই দুইয়ের টানাপোড়েন আপনার শিল্পচিন্তায় কতটা প্রভাব ফেলে?

মানুষ আর সময়ের বাইরে আমি শিল্পচিন্তা করতে পারি না। সময় আর মানুষকে বাদ দিলে গল্পটা অন্ধের হাতি দেখার মতো মনে হয়। এই অন্ধ শিল্পচর্চার কোনো মানে নাই, আকার নাই। নিরাকার, নিরঞ্জনের সাধনা শিল্পচর্চা না– তার অন্য উপায় আছে। যেই সময়টা আমাকে নির্বাক করে দিয়ে বলে, ‘তুমি কেউ না!’– সেই সময়টাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যই আমি ছবি বানাই। বিশাল আকাশের নিচে ছোট ছোট মানুষ আমার কাছে তার সময়ের গল্প বলে, আমি তাদের গল্প চুরি করি। সেই গল্পে সেয়ানা দর্শক যখন সময়ের ক্রম ভেঙে পরা আবিষ্কার করেন (কয়েকজন বলেছেনও আমাকে, যেমন সুহৃদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বা দৃশ্য-মাধ্যম শিক্ষক প্রিতু শরমিন)– তখন আমার শিল্পচিন্তা সার্থক হয়।

আপনি কি মনে করেন, সময় যদি চরিত্র হতো, তাহলে সে কেমন আচরণ করত আপনার সিনেমার ভেতরে?

সময় আমার ছবিতে সব সময়ই একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব-চরিত্র, মূল চরিত্রের সারথি। সময়ের ছায়ায় মূল চরিত্র ঘোরাফেরা করে, বেড়ে ওঠে, হাসে-কাঁদে। সময়কে বাদে আমার চরিত্রগুলা ধূসর, এবস্ট্রাক্ট আর্টের মতো। আমাদের এখানে এক্সিবিশনগুলোয় যেইরকম শিল্পচর্চা হয় সেইরকম। আমার কাছে এর কোনো মূল্য নাই। আমার চরিত্রগুলা দেখে যখন কেউ বলে উঠে– দুই বাম মিলে না– যেমনটা বলেছিল ‘অন্যদিন...’এর একটা দৃশ্য দেখে, আমার মনে হয় তখন সময় আর চরিত্র একাকার হয়ে যায়– আমার জন্য এইখানেই শিল্পচর্চার সার্থকতা।

ডকুফিকশন বা ডকুড্রামার প্রতি আপনার ভালোবাসা বেশ স্পষ্ট। আপনি কী মনে করেন, এই মাধ্যমটাই আমাদের সমাজকে সবচেয়ে গভীরভাবে অনুধাবন করতে সাহায্য করে?

আমি এইসব জনরা মাথায়ই নেই না। ডকু শব্দটার মূলে একটা ডকুমেন্ট বা দলিল আছে, সময়ের দলিল অর্থে হয়তো তার একটা প্রয়োগ আমার ছবিতে পাওয়া যায়। কিন্তু এর বাংলা যদি প্রামাণ্য অর্থে ভাবি, তাহলে সেইটা আমার ছবিতে নাই। ছবিতে আমি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করি নাই, বা কিছু প্রমাণ করার জন্য ছবি বানাই নাই; বরং আমার গল্পটা বলার জন্য যে কোনো জনরার যে কোনো টেকনিক এপ্লাই করি নির্দ্বিধায়। ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা, বানানো নাকি সত্যিই ঘটছে– এসব এথিকাল চাপ নির্মাতা হিসেবে আমার কাছে আন-এথিকাল মনে হয়। আমার কাছে ছবির চাইতে বড় কোনো সত্য নাই, সময় আর সমাজের ছাপচিত্র আঁকতে যে কোনো মিথ্যাই আমার কাছে জায়েজ মনে হয়।

এই মাধ্যমের সীমাবদ্ধতাও যদি বলেন?

এর সীমাবদ্ধতা হলো, এইটা ‘ব্যাংকেবল আর্টিস্ট’ বা তারকা নিয়ে কাজ করতে পারে না।

 

 

 

আপনার ক্যামেরা যেন অনেক সময় দর্শককে দৃষ্টির বাইরে থাকা গল্পে নিয়ে যায়। এটা ইচ্ছাকৃত নাকি ঘটনাচক্রে তৈরি হয়?

বেশির ভাগ দর্শক একটা কমফোর্ট জোনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অথচ খেয়াল করলে দেখবেন, নিজ নিজ বৃত্তের বাইরেই পরিধি অনেক বেশি বিস্তৃত। আমাদের সমাজ বা ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে যেই মানুষগুলার কোন নাম-পরিচয় নাই, তাত্ত্বিক ভাষায় যাদেরকে আমরা সাব-অলটার্ন বলি, তাদের প্রতি আমার ভীষণ লোভ। এই জনপদের কোনো সিদ্ধান্ত– নীতি নির্ধারণী, রাজনীতি, কি শিল্প-চর্চা– এই মানুষগুলার কোনো প্রকার অংশগ্রহণ নাই। অথচ এদের ছাড়া এই জনপদের কোনো অস্তিত্বই সম্ভব না।

আপনি কি ক্যামেরাকে চরিত্র ভাবেন?

ক্যামেরা আমার কাছে চরিত্র না, কিন্তু চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য একমাত্র মাধ্যম। পাঠক যেমন বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে যায়, আমি চাই আমার দর্শকও সেইরকম চরিত্রদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলুক। সেইটা করতে গিয়েই ‘শুনতে কি পাও!’এর সময় হাতে ক্যামেরা তুলে নিয়েছিলাম। বাধ্য হয়েছিলাম বলতে পারেন, কারণ তার আগে আমি কয়েকজন ক্যামেরম্যানকে দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা কেউই তখন ট্র্যাডিশনাল ফ্রেম বা লেন্সের বাইরে যেতে পারছিলেন না। ‘শুনতে কি পাও!’ এরপর আমাদের এইখানে ক্যামেরার ভাষায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের কেউ কেউ ইদানীং আমাকে ‘ব্রিদিং ক্যামেরা’র কথা বলেন, আমি খুব মজা পাই।

আপনার সিনেমা ‘শুনতে হয়’ যতটা না ‘দেখতে হয়’। শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের এই নির্মাণ কৌশল নিয়ে আপনি কী বলবেন? নৈঃশব্দ্য কি আপনার ভাষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ?

নৈঃশব্দ্য কিন্তু অনেক কথা বলে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। মানুষ তখনই শব্দ করে যখন সে ভাষা খুঁজে পায় না– এইটা ঝগড়ার ক্ষেত্রে পরিষ্কার বোঝা যায়। যে যত বেশি অসহায় বোধ করে সে তত বেশি শব্দ করে। আবার সংলাপের ভাষায় যেটা বলা হলো, তার চাইতে বেশি বলা হলো– যেইটা বলা হলো না। দৃশ্য আর শব্দের ভাঁজে সেইটা লুকায় থাকে, যাকে আমরা বলি সাব-টেক্সট। কিন্তু তার নিচেও আমার মাথায় আরেকটা লেয়ার কাজ করে, আমি যেটাকে বলি ‘ডীপার-টেক্সট’। শব্দ আর নৈঃশব্দ্যের নিচে এইটা এমন একটা অবস্থান, যেখানে আমি-আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান সময়ের ঠিকরে পড়া কয়েকটা মুহূর্ত হয়ে থেকে যাই মাত্র।

বর্তমান সময়ের যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত অস্থিরতা তা চলচ্চিত্রে ঠিক কীভাবে ধরা পড়ে বলে আপনি মনে করেন?

একটা সমাজের সেন্সিটিভিটি এবং ইন্সেন্সিটিভিটি– দুইটাই পাঠ করা যায় সেই সময়ের সিনেমা দিয়ে। আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ে অতি আলোচিত মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটু গভীরভাবে ভাবেন, মৃতদেহের ওপর হত্যাকারীর উল্লাসের সাইকিটা বোঝার চেষ্টা করেন– দেখবেন যে সাম্প্রতিক সময়ের ব্লকবাস্টার ছবিগুলায় এই একই রকম বিকৃত উল্লাসকে কতভাবে গ্লোরিফাই করা হয়েছে, জাস্টিফাই করা হয়েছে। আবার একইভাবে আপনি যদি নব্বইয়ের দশকের সিনেমায় দেখানো নায়কের ‘ইভ-টিজিং’কে ভালোবাসার প্রস্তাবনা হিসেবে দেখেন, তাহলে এর পরের দশকে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ‘ইভ-টিজিং’কে বুঝতে সুবিধা হবে। আমাদের এখানে সিনেমা সমাজকে প্রভাবিত করছে, অথচ এখানে উল্টোটা হওয়ার কথা ছিল।

আপনি কি মনে করেন, চলচ্চিত্র নির্মাতার একটি রাজনৈতিক অবস্থান থাকা উচিত?

মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক, নির্মাতার তাঁর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। আমি পার্টি-পলিটিক্সের কথা বলছি না, পলিটিক্যাল এবং ফিলোসফিক্যাল পজিশনিং এর কথা বলছি। আমি কি ছবি বানাব, কেন বানাব–এই প্রশ্নটার উত্তর আগে জানা দরকার। আর সেইটা জানতে গেলেই আপনার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে ‘দিনাজপুরে বাতাবীলেবুর বাম্পার ফলন’ নিয়েই থাকতে হবে। গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের সিনেমায় এইটা একটা প্রবল সংকট, যার কারণে আমরা একাত্তর নিয়েও তেমন ভালো কিছু পাই নাই। এখন জুলাই নিয়েও অনেক আয়োজন হচ্ছে, কিন্তু দেখার বিষয় দিনের শেষে এইগুলাও আরেক রকম প্রোপাগান্ডাই হয়ে উঠে কিনা।

নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের প্রতি আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ কী হবে?

প্রথম পরামর্শ হলো, আপনি যদি ছবি না বানায় থাকতে পারেন– তাহলে ছবি বানায়েন না। এইটা আমার কথা না, অনেক গুণীজন আমার আগেও এই কথা বলছেন। আর যদি একান্তই ছবি না বানায় থাকতে না পারেন, তাহলে প্রথমেই নিজের কাছে পরিষ্কার থাকা জরুরি– আপনি কেন ছবি বানাচ্ছেন, কার জন্য এ ছবি বানাচ্ছেন। এইসব প্রশ্নের সুরাহা না করে, ঝাঁপ দেওয়া উচিত না। এ এক অভিশপ্ত জীবন, নক্ষত্রের মতন। যে জীবন নক্ষত্রের, দূর থেকেই সেইটা আলোময়– কাছে গেলে আগুনে ছাই হয়ে যায় মুহূর্তে।

আপনার নির্মাণ কি আপনাকেও কোনোভাবে বদলে দিয়েছে?

একেকটা ছবি জীবনের একেকটা টুকরা কেড়ে নিয়েছে। ব্যক্তি আমি, আমার চারপাশ, সম্পর্ক, সময়– সবেতেই ছাপ পড়েছে সেই নির্মাণের। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় খরচ হয়ে গেছে এই সিনেমাযাপনে– অথচ এখনও কত কাজ বাকি। এইটা অনেকটা বৃত্তের মতো, বারবার একই জায়গায় ফেরত নিয়ে আসে, একই বিহ্বলতা কাজ করে। যতবারই ভাবি, এই রাস্তায় আমি আগেও হেঁটেছি, তবু প্রত্যেকবারই মোর ঘুরে এসে রাস্তাটা খুব অচেনা লাগে, নতুন মনে হয়।

সিনেমা না বানালে আপনি কী করতেন বলে মনে হয়?

বাঁশি বাজানোর খুব ইচ্ছা ছিল, এখনও আমার টেবিলে দুইটা বাঁশি আছে। একটা ঘুড়ির দোকানির প্রতিও লোভ ছিল ছেলেবেলায়, ছাপরা ঘর-ভর্তি রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। ভালোবেসে স্থাপত্যে পড়লাম, কিন্তু একরকম অভিমান করেই আর প্র্যাকটিস করা হইল না। আসলে কি হইলে কি হইতাম, এই প্রশ্নের এখন আর কোনো উত্তর নাই। একটা মানুষের গায়ে তার চারপাশের হাজারটা মানুষের ছায়া থাকে, আলো থাকে, কাদা থাকে, রঙ থাকে– সেই আলো-ছায়া-কাদা-রং নিয়েই মানুষ নিজের অজান্তেই একটা কিছু হয়ে দাঁড়ায়। এইটাতে তার নিজের তেমন একটা হাত নাই।


News Writer

SB

সর্বাধিক পঠিত