শনিবার, 6 ডিসেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

বিতর্কিত ৩০ আসনের প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত বিএনপির, আরো ২৪ নেতাকে ‘সুখবর’ দিল


স্টাফ রিপোর্টার : আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া বিতর্কিত ও সমালোচিত প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া বুধবার এক বিবৃতিতে আরো ২৪ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ‘সুখবর’ দিল বিএনপি।


সভায় সিলেট-৬, নেত্রকোনা-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, জামালপুর-২, কুষ্টিয়া-৪, সিরাজগঞ্জ-৩, চট্টগ্রাম-১২ ও ১৩ ছাড়াও অন্তত ৩০ আসনে প্রার্থী বদলের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আসনে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, বয়োবৃদ্ধ, বিতর্কিত ও সমালোচিত বলে স্থায়ী কমিটির নেতারা অভিযোগ করেন। 


গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে অর্ধশতাধিক আসনে শুরু হয় ‘মনোনয়ন বিদ্রোহ’। বাকি যে ৬৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, সেখানেও চলছে নানা যোগ-বিয়োগ।


এদিকে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার ব্যাপারে বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এ জন্য ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ নামে একটি কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে দলটি। এতে জেন-জি প্রজন্ম থেকে শুরু করে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণিকে এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে আগেই ছয়দিনের কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে, যা ৭ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।


জানা গেছে, বাসযোগ্য, আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে নানা পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এর অংশ হিসেবে সাত বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এগুলো হলো– জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী, ক্রীড়া ও ধর্ম। এসব বিষয়ে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী করবে; তা প্রতিশ্রুতি আকারে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিফলেটের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে একাধিক টিম দ্রুতই মাঠে নামছে। ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির বিষয়ে নেতাকর্মীকে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।


স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দেশ গড়ার পরিকল্পনা শীর্ষক ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে।


সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে ‘জেন-জি’ প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের চাহিদা সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। 


বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, তাঁর চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন নেতারা। সেখানে নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কয়েক বছর ধরেই গুরুতর অসুস্থ। বিশেষ করে কারাজীবনে তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সে সময় সরকারের অসহযোগিতায় ঠিকমতো চিকিৎসাও সম্ভব হয়নি।


কয়েক দিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। এ অবস্থায় ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ওই রকম জনাকীর্ণ পরিবেশে তাঁকে নেওয়া ঠিক হয়নি। সেখান থেকেই তিনি সংক্রমিত হতে পারেন বলে স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন।


বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।


এছাড়া দলীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিএনপির আরো ২৪ জন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।


এরআগে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে এবার এই ২৪ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।


বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা জেলাধীন ইশ্বরদীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল-ই-মোস্তফা টুটুল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন সরাইল উপজেলার অন্তর্গত অরুয়াইল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. বাদল আহমেদ, পাবনা জেলাধীন আটঘরিয়া উপজেলার অন্তর্গত মাঝপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী প্রামানিক, জামালপুর জেলাধীন মাদারগঞ্জ উপজেলার ৬নং আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান চৌধুরী মুক্তা, নাটোর জেলাধীন লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছিদ্দিক আলী মিষ্টু, পিরোজপুর জেলাধীন নাজিরপুর থানার অন্তর্গত সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য মো. রাসেল সিকদার।


এ ছাড়া বান্দরবান জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আবুল কালাম, বান্দরবান জেলা মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি হামিদ চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, আলীকদম উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ রিটন, লামা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার; চট্টগ্রাম জেলাধীন বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলহাজ্ব মো. আসহাব উদ্দিন চেয়ারম্যান, কুড়িগ্রাম জেলা মহিলা দলের সাবেক সদস্য ও নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোছা. ফেরদৌসী বেগম, নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি মোছা. আমিনা বেগম অনন্যা।


এ তালিকায় আরো রয়েছেন, খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. জহুরুল হক, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতন, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক, সিরাজগঞ্জ জেলাধীন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম মিন্টু, পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য মুকুল হোসেন, উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান বাবু, উল্লাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী ও বড়হর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাকোয়াত হোসেন সাবুও এই সিদ্ধান্তের ফলে দলে ফিরছেন।


বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আবেদনের প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুধবার তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
 

 

সর্বাধিক পঠিত