মঙ্গলবার, 25 নভেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

আমাদের কমিটমেন্ট খুব পরিষ্কার, আমরা স্বাধীন গণমাধ্যম করতে চাই: মির্জা ফখরুল|dailyfulki

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট খুব পরিষ্কার। আপনারা দেখেছেন যে আমরা ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করেই বলেছি যে আমরা একটা স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং আমরা সেটাকে তৈরি করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের (সাংবাদিকদের) কেউ পকেটে নিতে চায় না। কিন্তু আপনারা যদি পকেটে ঢুকে যান তখন কিন্তু ‘দ্যাট বিকাম অ্যা প্রবলেম’। আমরা দেখছি গত ১৫ বছর কী হয়েছে। গত ১৫ বছর সাংবাদিকরাই উদ্যোগী হয়ে ফ্যাসিজমকে সমর্থন করেছেন।’

আজ সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘মিডিয়া সংস্কার প্রতিবেদনের পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। ‘বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন’-এর সহায়তায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

 

 

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা না বলেই পারছি না, আপনাদের (সাংবাদিকদের) তো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে- ডিইউজে, বিএফইউজে। সেগুলোতেও আবার দুটি-তিনটি করে ভাগ আছে। আপনারা নিজেরাই তো দলীয় হয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখানে সাংবাদিকদেরও কমিটমেন্টের প্রয়োজন আছে। আপনারা ওই জায়গাগুলো (রাজনৈতিক দলের পকেট) থেকে নিজেরা বাইরে থাকবেন। সাহসী সাংবাদিকতা করবেন।’

গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছে। কমিশনের রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, তবে কোনো আলোচনা হয়নি। পরবর্তীকালে যা-ই হোক, আমরা যদি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব জনগণের মাধ্যমে পাই; তাহলে নিঃসন্দেহে এটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখব।’

 

অনুষ্ঠানে বিজেসির পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে আমন্ত্রণ পেয়ে বিজেসি আট দফা একটি প্রস্তাবনা জমা দেয়। সংগঠনটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে– সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন, একটি স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন, টিভি চ্যানেলগুলোকে পে-চ্যানেল ঘোষণা করা ও সম্প্রচারমাধ্যমকে শিল্প ঘোষণা এবং সম্প্রচার সাংবাদিকদের জন্য জবাবদিহিমূলক ‘কোড অব এথিকস’ প্রণয়ন। এছাড়া টিভি লাইসেন্স নীতিমালা ও মালিকানার ধরন নির্ধারণ, পরিচালনা পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মতো কাঠামোগত সংস্কার, স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাংবাদিকতার নীতিমালার প্রণয়নের দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক দলগুলো এই সুপারিশগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী ইস্তাহারে তুলে ধরবে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের আহ্বান জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। 

বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মহাসচিব ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, পৃথিবীতে কেউ নিরপেক্ষ নন। সাংবাদিকদের কোনো দলের হতে হবে না। তবে তাদের নিরপেক্ষও হওয়া যাবে না। তাদের বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে হবে। সংবাদ উপস্থাপনা এদেশের জনগণের পক্ষে হতে হবে। 

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার মনে হয়, অনেক সমালোচনার পরও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে বিএনপিকেই কথা বলতে হবে। গণমাধ্যমের যত দাবি–দাওয়া আছে, তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছেই পেশ করা উচিত। বর্তমান সরকারের কাছে চেয়ে কোনো লাভ নেই।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, মিডিয়ার মালিকানার কাঠামোর মধ্যে পরিবর্তন আনা দরকার। সবক্ষেত্রে লাইসেন্সের ক্ষেত্রে দলীয়করণের ব্যাপার আছে। তবে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে তা অন্য ক্ষেত্রের চেয়ে বেশি। এটা যদি চলতে থাকে, তাহলে গণমাধ্যমগুলো যখন যে দল ক্ষমতায় আসবে, সেই দলকে অনুসরণ করতে থাকবে। তাই গণমাধ্যমের লাইসেন্সের নীতিমালা স্পষ্ট করতে হবে।

আখতার হোসেন বলেন, ডাক্তার ও আইনজীবীর মতো, সাংবাদিকতা পেশার ক্ষেত্রেও পরীক্ষার মাধ্যমে লাইসেন্সের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সংবাদকর্মীদের পারিশ্রমিক হওয়া উচিত মর্যাদাপূর্ণ। এ বিষয়ে মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। সাংবাদিকরা যেন তাদের প্রাপ্য না পেলে আইনি সুরক্ষা পেতে পারেন– সে ব্যবস্থাও করতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমের ভেতরের কলুষতা ও রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

নুরুল হক নুর বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার কমিশন করা হয়েছিল। কমিশনগুলো কাজও শুরু করেছিল। কিন্তু এখন তা এসেছে ঠেকেছে সংবিধান ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে। গণমাধ্যমসহ অন্যান্য বিষয় আলোচনায় নেই। 

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৫ মাসের শাসনামলে স্বাধীন গণমাধ্যম নিয়ে কতটা কাজ করেছি আমরা? এই সময়েও সাংবাদিকদের ওপর হামলা–মামলা হচ্ছে। গণমাধ্যমে দখলদারিত্ব হয়েছে। গণমাধ্যমের চাকরির বিধিমালা ও বেতন কাঠামো ঠিক করতে হবে।

সর্বাধিক পঠিত