স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এ পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলও।
শুক্রবার ও শনিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। শুক্রবারের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীতে। এতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু এবং কয়েকশ মানুষ আহত হন। স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, চারবার ভূমিকম্পের পর শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না। একা থাকতে ভয় পাচ্ছে। রাতে ঘুমাতে পারছে না।
মনোবিদদের মতে, টানা ভূমিকম্প ও সামাজিক মাধ্যমে ভয়ের খবর দেখে কোমলমতি শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এতে তাদের ঘুম, খাওয়া এবং পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।
তবে গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে। আতঙ্ক নয়– সতর্কতা জরুরি। তাই আপাতত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের বিষয় নেই।
হল ছেড়েছেন ঢাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ভূমিকম্প-পরবর্তী সংস্কারের জন্য হল বন্ধ ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। তবে ছেলেদের কিছু হলে দোকান খোলা রয়েছে, কিছু শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন। গতকাল রোববার প্রভোস্ট কমিটির জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হয়। বিকেল ৫টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। হল ত্যাগের সময় শিক্ষার্থীদের তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে হবে এবং কক্ষের চাবি হল প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে। সব হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে হল ছাড়তে বলায় বিপাকে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। বিকেল পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থী হল ছাড়েন। মেয়েদের পাঁচ হলে জরুরি পানি-বিদ্যুৎসেবা বন্ধের ঘোষণার পর মেয়েরা অধিকাংশ হল ত্যাগ করেন। সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী স্বর্ণা দাশ হল ছেড়ে বলেন, আমার টিউশন আছে। হুট করে বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছি। যেহেতু থাকার কোনো উপায় নেই তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।
জবিও বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীরা হল ছাড়বেন আজ
চার দিন ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কর্তৃপক্ষ। একই কারণে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের শিক্ষার্থীদের আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৪ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু অনলাইনে ক্লাস চলবে ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে যেসব বিভাগে মৌখিক পরীক্ষা চলছে, লিখিত সম্মতি দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
স্কুল-কলেজে পরীক্ষা স্থগিত
রোববার প্রথম থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অভিভাবকদের অনুরোধ এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাধিক অভিভাবক জানান, ভূমিকম্পের পর শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না, একা থাকতে ভয় পাচ্ছে, রাতে ঘুমাতে পারছে না।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল বারিধারার এক অভিভাবক জানান, তাঁর সন্তানের পরীক্ষাও গতকাল অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুল রোববার স্বাভাবিক ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে গেছে।
ঢাকা পলিটেকনিকেও হল খালি, পরীক্ষা স্থগিত
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ভূমিকম্পের ঝুঁকির কারণে সব পর্ব-মধ্য পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত করেছে। গত রাত ৯টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকতর সতর্কতার স্বার্থে লতিফ ছাত্রাবাস (পূর্ব ও পশ্চিম শাখা), ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছাত্রাবাস, জহির রায়হান ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাস সাময়িকভাবে খালি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
শেকৃবি ও জাবির হল ভবনে ফাটল, আতঙ্ক
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) তিনটি হলে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হলে ফাটল দেখা গেছে। কয়েকটি হলে লিফট জরুরি সিস্টেমে বন্ধ হয়ে যায়। জাবির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নতুন ভবনেই বেশি ফাটল দেখা গেছে– যা নির্মাণে অনিয়মের ইঙ্গিত দেয়।
দুই মেডিকেল কলেজেও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ
ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজও একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। গতকাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছুদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সলিমুল্লাহর অধ্যক্ষ ডা. মাজহারুল ইসলাম শাহীন এবং ঢাকা মেডিকেলের অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলাম এ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশনা
দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভূমিকম্পের আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গতকাল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সই করা এক আদেশে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
