বুধবার, 26 নভেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

পুরান ঢাকায় অপরিকল্পিত ভবন, আতঙ্কে মানুষ | dailyfulki


স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। মানা হয়নি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নির্দেশনা। ভূমিকম্প কিংবা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।

গতকাল শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, কোতোয়ালি, বংশাল, লালবাগসহ এলাকার অধিকাংশ ভবন। মসজিদে দেওয়া হয় আজান, মন্দিরে বেজে ওঠে ঘণ্টা। এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। পরিবার-স্বজন নিয়ে খোলা স্থানে আশ্রয় নিতে নিচে নেমে আসেন ভবনের বাসিন্দারা।


সূত্রাপুরের চায়ের দোকানি জোনায়েদ ঘরামী বলেন, অন্য দিনের মতো পরিবারের সঙ্গে সকালের নাশতা করতে বসেছিলাম। হঠাৎ জিনিসপত্র এদিক-সেদিক পড়ে যাচ্ছিল। শুরুতে সেভাবে না বুঝলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। দ্রুত স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নেমে দেখি নিরাপদ স্থানের আশায় হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু আশপাশে কোনো খালি জায়গা নেই। পুরো এলাকাতেই রয়েছে পুরোনো ও গাদাগাদি ভবন।

ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা আরও আতঙ্ক বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। রাজধানীজুড়ে প্রায় ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাগুলো। এসব ভবনের বেশির ভাগ নির্মাণ করা হয়েছে নিয়ম না মেনে, পুরোনো নকশায় বা দুর্বল ভিত্তির ওপর। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।


‎ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা ভবনগুলোর ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভবন ২০ থেকে ৩০ বছর আগে নির্মিত। অনেক জায়গায় রড-সিমেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ হয়নি। আবার কোথাও অতিরিক্ত ভবন তৈরি করা হয়েছে অনুমোদিত নকশার বাইরে। ফলে সামান্য কম্পনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল সরেজমিন সূত্রাপুর এলাকার পাতলাখান লেনে চোখে পড়ে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন। তবে স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন, এমন অনেক বাড়ি রয়েছে, যাদের রাজউকের ছাড়পত্র নেই। 
ওই এলাকার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে কথা হয় কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী পার্থ সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, মেসের বাসায় ছিলেন তিনি। ভূমিকম্পের পর তাঁর মেসের দেয়ালে ফাটল ধরায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। শুধু ভূমিকম্প নয়, আগুন ধরলে বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নেই তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এ ছাড়া কাঁচা-পাকা বাড়িতে সয়লাব সূত্রাপুরের অধিকাংশ ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। এই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ সালেকুজ্জামান বলেন, কতগুলো রাজউকের নিয়ম মানছে? ছয় তলার অনুমোদন থাকলেও ১০ তলা বাড়ি করছেন মালিকরা। এতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

এরপর বংশালের আরমানিটোলায় যান এই প্রতিবেদক। যেখানে বাড়ির রেলিং পড়ে মারা গেছেন তিনজন। এরপর বিখ্যাত তারা মসজিদ হয়ে মাহুতটুলী দিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের দিকে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়ি খুপরির মতো। গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বিপজ্জনক অবস্থায়।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রায়ই অগ্নিকাণ্ড ঘটলে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় ফায়ার সার্ভিস। শুকলাল সাহা নামে ওই এলাকার একজন জানান, তাঁর ৫৩ বছর বয়সে ভবনে এত বড় ঝাঁকুনি কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, ‘আমগো মহল্লার পোলাপাইনডি চিক্কুর মারতাছিল, আমরা বইয়া আছিলাম। বিল্ডিংডি এমুন কইরা লাড়াচাড়া দিল, আমাওরা যে যেইহানে আছিলাম দৌড় দিয়া পালাইছি। তবে একখান খালি মাঠ-মুঠ থাকলে ওইহানে যাইবার পারতাম।’

বিকেলে নবাবপুরে গিয়ে দেখা যায়, শত শত তারের আবরণে বেষ্টিত একেকটি ভবন। কোনোটি দ্বিতল, কোনোটি বহুতল। কোনোটি আবার ভেঙেচুরে পড়ার মতো অবস্থা। ধোলাইখাল, দয়াগঞ্জ ও গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয় থেকে লোহারপুল হয়ে কাঠেরপুল মোড় পর্যন্ত চোখে পড়ে অনেক ভবন। তবে কোনোটির উচ্চতা ১০ তলা আবার কোনোটি ৫-৭ তলা। এসব ভবন একটা থেকে আরেকটার দূরত্ব খুব সামান্য।

কথা বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী রিয়াল ইবনে আরহামের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে বসবাস করছেন পুরান ঢাকায়। তবে গতকালের মতো ভূমিকম্প আগে দেখেননি।

সর্বাধিক পঠিত