বুধবার, 26 নভেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

আরো বড় সংকটে পড়লো আওয়ামী লীগ| dailyfulki


স্টাফ রিপোর্টার : কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্যে দিয়ে আরো বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে পড়লো দলটি। চব্বিশের ৫ আগস্টের পর দীর্ঘ প্রায় ১৫ মাস ধরে দলটির নেতাকর্মীরা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সোমবার (১৭ নভেম্বর) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। আর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।


শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সভাপতিই নন, তিনিই দলটির একমাত্র প্রধান নেতা ও কর্ণধার। আওয়ামী লীগের ভালো-মন্দ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছুই তাকে কেন্দ্র করে। দলের সকল সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণের কেন্দ্রবিন্দু একমাত্র শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত তার বিকল্প আওয়ামী লীগে তৈরি হয়নি। দলটির নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে অন্য কাউকে সভাপতি বা দলের প্রধান হিসেবে বর্তমানে বা অদূর ভবিষ্যতে চিন্তা করেন না। এই পরিস্থিতিতে আদালতের রায়ে দলের এই প্রধান নেতার মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি আরও সংকটপূর্ণ ও অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ফিরে আসা ও স্থান করে নেওয়ার বিষয়টি আরো কঠিন করে তুললো।

আওয়ামী লীগ আদালতের এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির নেতারা বলছেন, এই রায় সাজানো ও পূর্ব নির্ধারিত।

শেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো- উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।

এই রায়ের পর আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায়টি ছিলো পূর্বনির্ধারিত। এটি বিচারের আগেই দেওয়া রায়। এর সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত।


আরাফাত বলেছেন, আজ ট্রাইব্যুনালে রায় দেওয়ার সময় যা দেখেছেন, তা খুব সতর্কতার সাথে সাজানো ও সবার সামনে মঞ্চস্থ করা হয়েছিলো।

এদিকে এই রায়কে কেন্দ্র করে রোববার (১৬ নভেম্বর) ও সোমবার (১৭ নভেম্বর) ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচি অনলাইনে ঘোষণা করেন দলের নেতারা। এই কর্মসূচি তারা আরো বাড়াবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইনে এসে বলছেন। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর একই প্রক্রিয়ায় ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছিল। এসব কর্মসূচির পক্ষে অনলাইনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছে এবং ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। এরপর থেকে ঢাকাসহ কিছু জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুনের ঘটনার মত বিভিন্ন স্থানে কিছু ঘটনা ঘটেছে যা জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন দুপুরের পর শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পতন হয় টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগেরও। শেখ হাসিনা এখনও ভারতেই অবস্থান করছেন। সরকার পতনের দিনই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও নিজেদের রক্ষা করতে আত্মগোপনে চলে যান। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এমপিদের অনেকেই ঐদিন বা ওই দিনের পরপরই চলে যান দেশের বাইরে। এর ফলে ৫ আগস্টেই দলটিও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। সরকার পতনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক বছর তিন মাস হলো এখনো আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকেই আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে ৷ বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই অবস্থায় কার্যক্রম নিষিদ্ধই রয়েছে দলটির। এরপর নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে।

এদিকে আদালতে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করায় শেখ হাসিনা নিরাপদেই থাকছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। ভারত যেভাবে তাকে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছে, তিনি সেখানেই থাকবেন বলেই তারা মনে করছেন। আর ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায়ের ফলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান আদৌ বদলাচ্ছে না এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ারও কোনো প্রশ্ন উঠছে না।

বস্তুত শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রেখেছেন, তখন থেকে আজ পর্যন্ত তাকে আশ্রয় বা আতিথেয়তা দেওয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান একই আছে। আর সেই ঘোষিত অবস্থানটা হলো– একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে ‘সাময়িক’ (ফর দ্য টাইম বিয়িং) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে– এর বেশি কিছু নয়।
 

সর্বাধিক পঠিত