স্টাফ রিপোর্টার : শীতের শুরুতে সাধারণত কমতে শুরু করে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপদ্রব; কিন্তু এ ধারার ব্যত্যয় দেখা যায় গত বছর। সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত বছরজুড়ে ভর্তি হওয়া এক লাখ এক হাজার ২১১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে এক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হন নভেম্বরে। এবারও যেন এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বর্ষা শেষে এরই মধ্যে শীতের আভাস মিলতে শুরু করলেও প্রকোপ কমছে না ডেঙ্গুর। উল্টো নিয়েছে ভয়াবহ রূপ। গত তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি মাসে দেড় গুণ হারে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি রোগী, আর সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ৪৮ জন। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে। মৃত্যুও শতাধিক ছাড়ানোর শঙ্কা রয়েছে চিকিৎসকদের।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে। ফলে এডিস মশার প্রজনন চক্রও দীর্ঘ হয়েছে। সেইসঙ্গে মশক নিধনে নিষ্ক্রিয় কর্মসূচি, আগাম প্রস্তুতির অভাব এবং সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলায় ডেঙ্গু এখন আর বর্ষার রোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বছরই মানুষ রোগটিতে ভুগছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু নিয়ে গত আগস্টে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ৩৯ জনের। সেপ্টেম্বরে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৬৬ জনে, মৃত্যু হয় ৭৬ জনের। অক্টোবরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৫২০ জনে, মৃত্যু হয় ৮০ জন। আর চলতি নভেম্বরের দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ২০৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে এডিস মশা নির্মূলের বিকল্প নেই। আমরা এখনো সে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারিনি। ফলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। অথচ এ মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। ডেঙ্গুকে মৌসুমি রোগ ভেবে হালকা করে দেখার সময় শেষ।
তিনি বলেন, শুধু কীটনাশকের ধোঁয়া বা স্প্রে দিয়ে মশার প্রজনন রোধ সম্ভব নয়। কার্যকর প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন কমিউনিটি এনগেজমেন্ট, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ শুধু সরকারি দায়িত্ব নয়, প্রত্যেক নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
সর্বশেষ চিত্র: গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কারও মৃত্যু না হলেও এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬০ জন। এতে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৬৬ জনে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৩২৬ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১৪৫ জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে, ২৪ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৫, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩, ঢাকা বিভাগে ৭১ ও সিলেট বিভাগে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।
