বুধবার, 26 নভেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

হামলা আতঙ্কে নির্বাচন কর্মকর্তারা, চান পুলিশি নিরাপত্তা | dailyfulki

 

স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা, অগ্নি সংযোগ, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। যার ঢেউ এসে পড়ছে নির্বাচন কমিশনেও (ইসি)।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, মব কালচারের প্রভাব থেকেও মুক্তি মিলছে না। বিশেষ করে মাঠ কার্যালয় ও কর্মকর্তার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

জানা গেছে, আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন, ১০টি আঞ্চলিক, ৬৪ জেলা ও ৫১৯টি উপজেলা বা থানা কার্যালয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রাজধানীর নির্বাচন ভবন ছাড়া কোথাও কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।

ঢাকার অদূরে এক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ইসি নিয়োজিত একজন করে নিরাপত্তা প্রহরী আছেন। তিনি নিরস্ত্র। যেভাবে মাঠ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে একজন নিরস্ত্র প্রহরী কী ব্যবস্থা নিতে পারে!


তিনি বলেন, মাঠ নির্বাচন অফিসগুলোতে অস্ত্রসহ পুলিশি নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি। আনসার দিয়ে কাজ হবে না।


ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা অফিস আক্রমণ হয়েছে জানান মাঠ কর্মকর্তারা। সম্প্রতি কক্সবাজারে এক কর্মকর্তার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আজকে (সোমবার) টাঙ্গাইলে একজন কর্মকর্তাকে মব সৃষ্টি করে মারধর করা হয়েছে। এ সব নিয়ে কমিশন তেমন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

 

কর্মকর্তারা বলছেন, উনিশ বিশ হলেই আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে মব সৃষ্টির ভয় দেখানো হয়। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আতঙ্কের মধ্যে থেকে স্বাধীন কমিশনের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সে প্রশ্নও তুলছেন তারা।


সম্প্রতি ইসি ভবনে দু'বার ককটেল মারা হয়েছে। কমিশন এ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়লে বাড়ানো হয়েছে নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা। এজন্য ডিএমপি কমিশনারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে মাঠ নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত নিয়ে কোনো আলোচনায় প্রাধান্য পায়নি বলে অভিযোগ তাদের।


টাঙ্গাইলে যা হয়েছিল :


জানা গেছে, সোমবার (১০ নভেম্বর) কাজ না করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে আওয়ামী ট্যাগ দিয়ে গোপালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে হামলা করে ভাঙচুর চালায় উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারা। তাদের হামলায় তিনজন আহত হয়।

আহতরা জানান, কয়েকজন নেতাকর্মী এসে আওয়ামী লীগের ট্যাগ দেন এবং তাদের কাজ করা হচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে অফিস ভাঙচুর ও কর্মকর্তাকে মারধর করেন।


কক্সবাজারে নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর :


উখিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে গত ৩০ মার্চ ভোরে (আনুমানিক ভোর ৫টায়) সিয়াম পালনরত অবস্থায় তার নিজ গ্রামের বাড়িতে (হাইদগাঁও, পটিয়া, চট্টগ্রাম) অবস্থানকালীন ১০ থেকে ১৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসহ (বাঁশ, হাতুড়ি ইত্যাদি) হামলা চালায়।

ইসির কর্মকর্তারা এ ঘটনার পর ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ওই সময় বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ইসির উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কার্যালয়সমূহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনে ইসির প্রতি আহ্বানও জানান।

নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরকার থেকে বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসেন। ইসি ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা যতটা শঙ্কিত হয়ে পড়েন, মাঠ দপ্তর নিয়ে তারা ততটা চিন্তিত নন।

নির্বাচন ভবনে ককটেল :

গত ২৫ অক্টোবর নির্বাচন ভবনের মূল ফটকের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুষ্কৃতকারীরা। এতে ইসির নিরাপত্তা রক্ষীরা একজনকে আটকও করে। এরপর ২৮ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশনা দেয় ইসি। নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান থাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (নির্বাচন ভবন) এর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। গত ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে রাত আনুমানিক ১১টা ১০ মিনিটে কিছু দুষ্কৃতকারী নির্বাচন ভবনের ভাস্কর্যের সামনে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণ ঘটায়। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন ভবনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে ইসি সচিব আখতার আহমেদ অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর আলোচনার প্রস্তাব তোলেন। সভায় নাশকতা প্রতিরোধের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও ওঠে আসে। শেষে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস ও উপজেলা নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে সেই সিদ্ধান্তের চিঠি সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে মাঠ কার্যালয়গুলোতে এখনো সে অনুযায়ী কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেলেনি ইসি সচিবের বক্তব্যও।
 

সর্বাধিক পঠিত