স্টাফ রিপোর্টার : কেবল কয়েকটি ধারা নয়, পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন রিট মামলার বাদীপক্ষ।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া ওই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ তৈরি হয়। তাতে আংশিক দাবি পূরণ হলেও এখন পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চাইছেন তারা।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এ আপিল দায়ের করেন।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
রিটকারীর আবেদন অনুযায়ী, পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না করায় এ আপিল করা হয়েছে।
আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, “রিটে আমরা পুরো সংশোধনী বাতিল চেয়েছিলাম। কিন্তু হাই কোর্ট আংশিক বাতিল করায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়কের কিছু সমস্যা হয়েছে; এটা সম্পূর্ণভাবে ‘ফাংশনাল’ হয়নি।
“পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রধান উপদেষ্টার শপথের বিধান বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু হাই কোর্টের রায়ে সেটা ফিরে আসেনি।”
রিট আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনীতে আইনগত ও পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকায় পুরো সংশোধনী বাতিল চেয়ে আপিল করা হয়েছে।”
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল।
এর মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।
পাশাপাশি পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
৭ (ক) অনুচ্ছেদে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছিল।
৭ (খ) সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা ছিল।
সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে বলা ছিল এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, “এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।”
আদালত বলেছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের কথা ছিল, যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল করা হয়। এ বিধান বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বিবেচনায় তা বাতিল ঘোষণা করা হল এবং দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আগামী জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।
