শনিবার, 1 নভেম্বর 2025
MENU
daily-fulki

আজ ফুলকি’র ২৪তম জন্মদিন | dailyfulki


নাজমুস সাকিব,
 

আজ পহেলা নভেম্বর দৈনিক ফুলকি’র ২৪তম জন্মদিন। তেইশ বছর আগে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের স্পীকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এমপি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান এমপি, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান এমপি, ডা. দেওয়ান মো: সালাউদ্দিন বাবু এমপি এবং আব্দুল মান্নান এমপি দৈনিক ফুলকি’র উদ্বোধনী সংখ্যায় বাণী দিয়ে ফুলকিকে এবং সম্মাণিত পাঠকদের গৌরাবান্বিত করেছেন। আমরা মনে করি, উপজেলা থেকে প্রকাশিত একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকারসহ ঢাকা জেলার ৫টি আসনের ৫ জন সংসদ সদস্য বাণী দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করেছেন এবং গভীর কৃতজ্ঞতার পাশে আবব্ধ করেছেন। পাশাপাশি আমাদের সম্মাণিত করেছেন। আমরা তাঁদের কাছে সীমাহীন ঋণী। তবে আজ তাঁদের অনেকেই আমাদের মাঝে নেই। মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান ও আব্দুল মান্নান এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা তাঁদের আত্মার মাগফিরাত এবং পরকালে জান্নাত লাভের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মিনতি করছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার অসুস্থ্য। আমরা তাঁদের সুস্থতার জন্য মহান রবের কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ আপনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতার নেয়ামত দান করেন, আমিন।

দৈনিক ফুলকি’র উদ্বোধনী সংখ্যায় এই মহান ব্যক্তিরা বাণী দিয়ে উৎসাহিত করায় আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার এবং তার স্থানীয় দোসরদের রোষাণলে পড়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তবে এ জন্য আমরা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিন্দু পরিমাণও বিচ্যুৎ হইনি। 


ফুলকি ঢাকা জেলার প্রথম স্থানীয় দৈনিক ও জেলার একমাত্র সরকারী মিডিয়া তালিকাভুক্ত পত্রিকা। দৈনিক ফুলকি ২০০২ সালের ১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে আজ ২৪তম বর্ষে পদার্পণ করছে। ফুলকি’র ২৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে আজ। পত্রিকাটি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দু:শাসনের রোষাণলে পড়ে জেল-জুলম, হামলা-মামলা, অফিস ভাংচুর, পত্রিকার প্রাণ বিজ্ঞাপন বন্ধসহ বিবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রায় ১৬ বছর বৈরী পরিবেশে লড়াই করে আজ ২৩ বছর পূর্ণ করে ২৪ বছরে পা রেখেছে। দীর্ঘ বছর প্রতিকূল পরিবেশে সত্য ও ন্যায়ের পথে সহজ কথায় সঠিক সাংবাদিকতার নীতিতে টিকে থাকার লড়াই করতে করতে আজও অনেকটা ক্লান্ত। এ অবস্থায় মুক্ত পরিবেশে দৈনিক ফুলকি ২৪তম জন্মদিন পালন করতে পেরে আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।


এ বিশেষ সংখ্যায় অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ জন্য আমাদের সম্মাণিত পাঠক এবং সুহৃদদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। সবার সহযোগিতা আর অংশগ্রহণেই দৈনিক ফুলকি আজ স্থানীয়ভাবে পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। 


মানুষের আশা আকাঙ্খাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ফুলকি শুরু থেকে আজও তার পথে অবিচল রয়েছে। সন্দেহ নেই, দৈনিক ফুলকি পাঠকের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করতে পেরেছে। পাঠকই পত্রিকাটির প্রাণ। পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসাই তার বড় প্রামাণ। সব শ্রেণীর পাঠক পত্রিকাটিকে গ্রহণ করায় আমরা সকলকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা।


গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, বিজ্ঞাপনদাতা, হকার-এজেন্টসহ বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের প্রতি এবং আমার সব সহকর্মীদের প্রতি। ফুলকি ২৪তম বর্ষে পদার্পণে আমাদের অগণিত পাঠক, শুভাকাঙ্খী, শুভানুধ্যায়ী, অনুরাগী এবং সমালোচকদেরও জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


সাভার উপজেলার মতো একটি মফস্বল শহর থেকে অনেক আশা এবং শঙ্কা নিয়ে ফুলকির আত্মপ্রকাশ ২০০২ সালে। মফস্বল শহর সাভার থেকে নতুন একটি দৈনিক পত্রিকার আত্মপ্রকাশ, তা কতোদিন টিকে থাকবে এ নিয়ে অনেক সুহৃদই দ্বিধ-দ্বন্দ্বে ছিলেন। এছাড়া পাঠক কিভাবে গ্রহণ করবেন সেটিও আমাদের ভাবনাকে আলোড়িত করেছিল। সংবাদপত্রের প্রকাশনা বেশ কঠিন ও দুরূহ একটি কাজ। দু:সাহসীও বটে। সে শঙ্কা এবং সংশয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দৈনিক ফুলকি প্রকাশনার শুরু থেকেই অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে আসছে।


সংবাদপত্র টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাষ্ট্রের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন গণতন্ত্রের চর্চা। গণতন্ত্র ভিন্ন শিরদাঁড়া সোজা রাখা স্বাধীন সংবাদপত্রের অস্তিত্ব চিন্তা করা অকল্পনীয়। সংবাদপত্র বরাবরই ভিন্নমতের বাহক। ভিন্নমত সংবাদপত্রের প্রাণ। এ কারণে যেদেশের সংবাদপত্র যত স্বাধীন-সেদেশের গণতন্ত্র তত বেশি নিরাপদ। 


বলার অপেক্ষা রাখে না, ফুলকি’র প্রকাশনার বিগত ২৩টি বছর এই পত্রিকাটির জন্য মসৃণ কিংবা ফুল বিছানো পথ ছিলো না। এক কঠিন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেই দৈনিক ফুলকিকে বৈরি পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে বৈরি স্রোত অতিক্রম করে এই টিকে থাকাটা সত্যিকার অর্থেই সংগ্রামমুখর। 


স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রায় দেড় যুগের শাসনামলে দৈনিক ফুলকি ও ফুলকি পরিবার অবর্ণীয় এবং অকল্পনীয় জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিমন্ডলে করোনাকালীন মহাদুর্যোগসহ নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাথা উঁচু করে টিকে আছে ফুলকি। এই টিকে থাকাও আমাদের বড় অর্জন বলে মনে করছি। এ জন্য মহান রবের দরবারে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।


‘বর্ষপূর্তি’ মানেই এক ধরণের হালখাতা। এক বছর ধরে আমরা যা চেয়েছি তার কতটুকু করতে পেরেছি, কেনইবা সবটুকু করতে পারিনি, এই দিনে তার একটা স্বচ্ছ ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। তেমনটি হলে ভবিষ্যৎ পথচলা আরও বেশি সফল ও স্বার্থক হবে। তবে সম্মাণিত পাঠক এবং সুহৃদদের সহযোগিতা থাকলে ফুলকি সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে-এ বিশ্বাস আমাদের আছে।


দেশ-বিদেশের অসংখ্য পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করে ফধরষুভঁষশর.পড়স যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এই অনলাইন পোর্টালটি সরকার নিবন্ধিত।


পেশাদারিত্ব, বস্তুনিষ্ঠতা, সত্যবাদিতা-এসব বৈশিষ্ট্যই একটি সংবাদপত্রের টিকে থাকার রক্ষাকবচ। পাঠক একটি সংবাদপত্রকে নির্ভীক দেখতে চায়। সংবাদপত্র যেমন জনমানসে প্রভাবকের ভূমিকা রাখে, ঠিক তেমনি পাঠকও সংবাদপত্রের চরিত্র দেখে তা পড়ার জন্য বেছে নেন। আধুনিক সমাজের ভেতর থেকেই এই পরিবর্তন ঘটে চলেছে গত কয়েক দশক ধরেই।


ইন্টারনেটের এই আধুনিক যুগে বিশ্বব্যাপী মুদ্রিত সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা দিন দিন কমছে। ইন্টারনেটের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রার ঢেউ সংবাদপত্রেও লেগেছে। হাতের মুঠোয় সংবাদপত্র পড়া কিংবা লাইভ খবর সম্প্রচারের তোড়ে মুদ্রিত সংবাদপত্র পিছিয়ে পড়ছে। পত্রিকাগুলোকেও এখন তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে সে সবের সাথে। প্রযুক্তির প্রসার সংবাদপত্রকে বর্ণিল ও সুসজ্জিত যেমন করেছে ঠিক তেমনি এর ব্যয়ও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। দৈনিক ফুলকিকেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে।

 প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। পাঠকের এ চাহিদার কথা ভেবেই ফুলকি ডিজিটাল প্লাটফর্ম চালু করেছি। নতুন বর্ষে পদার্পণকালে আমাদের পাঠক শুভানুধ্যায়ীদের বিষয়টি অনুধাবনের অনুরোধ জানাই। 
আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশ ও জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার নিয়ে। শোষিত বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের আর্তনাত তুলে ধরতে। অন্যায়-অত্যাচার, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখনীর মাধ্যমে সোচ্চার প্রতিবাদ করতে। 


শুধু তাই নয়, সৃজনশীল সম্ভাবনাময় ও দেশ মাতৃকার কল্যাণকর কার্যক্রমকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে মানুষের মনে আশার আলো জাগাতে। আমরা গণতন্ত্র হরণকারী স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে মামলা, হামলা, জেল-জুলুমের নির্যাতনের মধ্যেও সাধ্যমত পাঠকের সে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছি। আমরা হয়তো লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলছি। আমাদের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিলো সে সাফল্যের সোপান হয়তো নির্মিত হচ্ছে। পাঠকের সীমাহীন ভালোবাসাই তার প্রমাণ। ফুলকি পরিবারের অগ্রযাত্রায় মহান সৃষ্টিকর্তার দয়া, সকলের দোয়া, সহযোগিতা, অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালবাসা প্রত্যাশা করি।
 

-নাজমুস সাকিব, সম্পাদক, ফুলকি।
 

সর্বাধিক পঠিত