সিরিজে টিকে থাকতে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে যে ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী চলছে, তাতে লিটন দাস-তানজিদ হাসান তামিমদের কাছে ১৫০ রানের লক্ষ্য হয়ে ওঠে পাহাড় সমান। সিরিজটাও বাংলাদেশ হাতছাড়া করল এক ম্যাচ হাতে রেখে।
চট্টগ্রামে গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষ ৩ ওভারে হাতে ৭ উইকেট নিয়ে ৩৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনটা হয়ে থাকে হরহামেশাই। এমনকি গতকাল ৪৮ বলে ৬১ রান করা তানজিদ হাসান তামিম যখন ১৮তম ওভারের প্রথম বলে আউট হলেন, তখনো ম্যাচ স্বাগতিকদের হাতেই ছিল। শামীম হোসেন পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিকদের কাছে নায়ক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু ডেথ ওভারে উইন্ডিজের অসাধারণ বোলিংয়ে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানে আটকে যায়।
১৪ রানে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার তাদের সামনে প্রতিশোধের হাতছানি। কারণ, গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের কাছে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছিল। চট্টগ্রামে গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জয়ের পর যেন সেটাই মনে করিয়ে দিতে চাইলেন আথানাজ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিবীয় এই বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, ‘অবশ্যই ধবলধোলাই করতে চাই। যদি ৩-০ করার সুযোগ পাই, সুযোগটা নিশ্চিতভাবেই সবাই কাজে লাগাতে চাইবেন।’
বাংলাদেশের বাজে ব্যাটিং নয়, বরং নিজেদের যোগ্যতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিতেছে বলে মনে করেন আথানাজ। ১৪ রানে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিবীয় এই বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, ‘আমাদের বোলিং বেশি ভালো হয়েছে মনে করি। পাওয়ার প্লের পর আসলে রান বের করা কঠিন। বোলারদের ভালোভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছি। সেভাবে পরিকল্পনা করেছি। কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় উইকেটে আথানাজ ও শাই হোপ ৫৯ বলে ১০৫ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু এই জুটি ভাঙার পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ক্যারিবীয়রা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা উইন্ডিজ ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানে আটকে যায়। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ক্যারিবীয়দের রান অনেক কম হয়েছিল বলে মনে করেন আথানাজ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের শুরুটা বেশ ভালো হয়েছিল। দারুণ একটা জুটি পেয়েছিলাম।২০-৫০ রান কম হয়েছিল বলে মনে হয়েছে। কারণ, এটা ২০০ রানের উইকেট মনে হয়েছিল। বোলাররা আরও একবার নিজেদের ক্লাস দেখিয়েছে। উইন্ডিজও জয় পেয়েছে।’
শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, আফগানিস্তান—টানা চার সিরিজজয়ী বাংলাদেশের কাছে সুযোগ ছিল সংখ্যাটাকে পাঁচে পরিণত করার। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেই সুযোগটা হারাল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে সোমবার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে স্বীকৃত ব্যাটারদের ব্যর্থতায় লিটনের দল হেরেছিল ১৬ রানে। এবার তো লিটনরা সিরিজটাই খোয়ালেন। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। লিটনরা নামবেন ধবলধোলাই এড়ানোর লক্ষ্যে।
বাংলাদেশ সিরিজ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যাবে নিউজিল্যান্ড সফরে। নিউজিল্যান্ডে পাঁচ টি-টোয়েন্টি ও তিন ওয়ানডে খেলবে ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশকে আগামীকাল ধবলধোলাই করে নিউজিল্যান্ডে খেলতে যেতে চান উইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৪ রানে জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হোপ বলেন, ‘আমরা এই সফর থেকে কিছু একটা নিয়ে যেতে চাই। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিউজিল্যান্ডে যেতে চাই।’ টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
