বৃহস্পতিবার, 30 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

গাবতলী-নাগরপুর রুটে ৪০ বছরের পুরনো বাস চলাচল বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ | dailyfulki


ধামরাই প্রতিনিধি : ঢাকার গাবতলী থেকে প্রায় ৪০ বছরের পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় জনসেবা (এসবি লিঙ্ক) পরিবহনের প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে ধামরাই-সাটুরিয়া-টাঙ্গাইলের নাগরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে। মেয়াদ উত্তীর্ণ বাস চলাচলে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ব্ওে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জালিয়াতি ও রং পরিবর্তন করে প্রতিদিন এসব বাস চলাচল করছে। চলার অযোগ্য মেয়াদহীন বাসগুলো নিষিদ্ধ হলেও কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে অথবা তাদের ম্যানেজ করে বীরদর্পে চলাচল করছে এসবি লিঙ্ক নামের যাত্রীবাহী বাস। বাসগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং যাত্রী দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত রবিবার এক স্কুল ছাত্রী নিহতের ঘটনায় এসব বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে নাগরপুর উপজেলা প্রশাসনসহ এলাকাবাসী। 


গত ১৯ অক্টোবর নাগরপুরের পাকুটিয়া কেসিজি হাইস্কুলের এক ছাত্রীকে এসবি লিঙ্ক পরিবহনের একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসী ও ওই বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী একটি বাস পুড়িয়ে দেয়। 


পরে পুরাতন ও লক্করঝক্কর বাস চলাচলে বন্ধ রাখার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ ঘটনায় পরের দিন গত ২০ অক্টোবর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবন্দ,বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত মোহাম্মদ নোমান। এতে সিদ্ধান্ত হয় পুরাতন বাসের পরিবর্তে নতুন বাস,প্রশিক্ষিত চালক ও তাদের ড্রোপ টেস্টের সার্টিফিকেট জমাদান সাপেক্ষে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। 


ভুক্তভোগী ও পরিবহন মালিক সমিতির কাছ থেকে জানা গেছে, ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর-টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও মির্জাপুর পর্যন্ত সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তালিকাভুক্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সড়কটি ১৯৮৫ সালে ইটের সলিং করা ছিল। ওই সময় ঢাকার গাবতলী থেকে প্রথমে মহিশাষী ও পরবর্তীতে সাটুরিয়া পর্যন্ত জনসেবা পরিবহনের ২০-২৫টি যাত্রীবাহী কয়েকটি বাস চলাচল শুরু করে। পরবর্তীতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির পাশাপাশি এর চাহিদা বাড়ার সাথে ধামরাইয়ের বালিয়া, সাটুরিয়ার দরগ্রাম ও টাঙ্গাইলের নাগরপুরের পাকুটিয়া-মামুদনগর পর্যন্ত  প্রায় শতাধিক বাস চলাচল করছে। ৪০ বছর আগের পুরনো বাসগুলো এখনো চলাচল করছে এ সড়কে। ওসব বাসের ইঞ্জিন, চেসিস,বডি ,জানালার গ্লাস ভাঙা, লাইট নষ্ট, রং উঠে যাওয়ার মত বিভিন্ন সমস্যা খুব সাধারণ দৃশ্য। তবে অনেক বাস মেরামত ও ঝকঝকে কারিকুরি দেখে বুঝার উপায় নেই বাসটি পুরাতন ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ। 
এছাড়া অন্য রুটে চলাচলে অনুপযোগী মেয়াদ ও আয়ুস্কাল শেষ হওয়া বাসগুলো এ সড়কে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুরনো বাসের যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটিতে সড়ক-মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আবার দুর্ঘটনায়ও পতিত হয়ে থাকে এসব বাস।


এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান, সাভার, ধামরাই, সাটুরিয়া, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও মির্জাপুরের বাসিন্দারা এসব বাসে করে প্রায়ই রাজধানী ঢাকা যাতায়াত করছে। তাদের অভিযোগ, এ রুটে বিকল্প বা অন্য মালিক সমিতির পরিবহনের প্রতিযোগিতার সুযোগ না থাকার সুযোগে যাত্রীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার ও নিম্নমানের লক্করঝক্কর বাসে উঠতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে কয়েকটি উপজেলার সাধারন যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে জনসেবা মালিক সমিতির কাছে। 


মহিশাষী বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বকুল, কাওয়ালীপাড়া বাজার ব্যবসায়ীধ দীন ইসলাম, আতাউর রহমানসহ একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, ১৯৮৫ সন থেকে জনসেবা বা এসবি লিঙ্ক পরিবহনের বাসে যাতায়াত করে থাকেন। ৪ দশকেও বাসের কোন পরিবর্তন হয়নি। যেখানে সেখানে বিকল হয়ে পড়ে। একটু বৃষ্টি আসলেই বাসের ভিতরে পানি পড়ে। বাসের ভিতরে লোহাতে মরিচা বা জং পড়ে গেছে। এতে যাত্রীদের জামা-কাপড়ে লোহার রং লেগে যায়। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি করছেন তারা। 


নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত মোহাম্মদ নোমান বলেন, শিক্ষার্থী ও জনসাধারনের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দুর্ঘটনা রোধে পুরাতন বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জনসাধারণের দেওয়া শর্তপূরণে নতুন বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে।  
 

সর্বাধিক পঠিত