স্টাফ রিপোর্টার : আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দৃঢ় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের হাতে রয়েছে তিন মাসের কিছু বেশি সময়। ভোটের আয়োজন নির্বাচন কমিশন করলেও ভোটগ্রহণে মূল ভূমিকায় থাকে প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে- বর্তমান জনপ্রশাসন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে কতটা প্রস্তুত?
নির্বাচনে সাধারণত জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা সামলান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএরও) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১৫ মাসে প্রশাসন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখনো অগোছালো। নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা নিজেদের যোগ্যতার সাক্ষর রাখতে পারেননি। তাই এ প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা।
তবে তারা বলছেন, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে এখনো ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশাসন ভালো একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারে। এজন্য যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ দিতে হবে। কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বাড়াতে হবে। তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে তাদের ভবিষ্যতে শাস্তির মুখে পড়তে হবে না। তবে দ্রুতই সরকারকে সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাবে।
বর্তমান প্রশাসন রাজনৈতিক দলগুলোরও আস্থায় নেই। রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিভিন্ন সময়ে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে আগামী দিনগুলোতে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই প্রশাসনের বদলি-পদায়নের বিষয়টি তদারকি করবেন।
আমরা নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভোট কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে আপনি ডিসি ও ইউএনও হিসেবে কাদের পদায়ন করছেন সেটার ওপর। তাদের কমিটমেন্ট, নিরপেক্ষতা, ঈমানের জোর দেখতে হবে।- সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার
ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন সচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন জনপ্রশাসন সচিব দায়িত্ব নিয়েই বলেন, নির্বাচনকালীন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার। এই দায়িত্ব আমি নিলাম।’
সংশয় সক্ষমতা নিয়ে
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়ে প্রশাসন। শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডি করা হয়। নতুন করে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় এসব পদে। এদের অনেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান, তারা মূলত চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছিলেন। তারা নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে এখনো শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেননি। বিভিন্ন সময়ে বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি নিয়ে এ সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এছাড়া ঢালাও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। সরকার পরিবর্তন হলে পরিণতি নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।
শেষ পর্যায়ে এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব চালিয়ে আসা মো. মোখলেস উর রহমানকে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) হিসেবে বদলি করা হয়। ২১ দিন পর চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কতটা প্রস্তুত প্রশাসন
এই প্রশাসন একটি জাতীয় নির্বাচন কীভাবে করবে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের মতো নির্বাচনের সঙ্গে এবার একটা পার্থক্য আছে। সেটা হলো বিচারপতি শাহবুদ্দিনের সরকার, বিচারপতি হাবিবুর রহমানের সরকার ও বিচারপতি লতিফুর রহমানের সরকারের একটা ক্রেডিবিলিটি ছিল। মানুষের ধারণা ছিল- এরা শক্ত লোক, তারা কোনো ছাড় দেবে না। বর্তমান সরকারের সেরকম ক্রেডিবিলিটিটা নেই।’
নির্বাচনের যতটুকু সময় বাকি আছে, এ সময়ে যদি যোগ্য ও চৌকষ কর্মকর্তাদের ডিসি এবং ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। কারণ একজন যোগ্য ডিসি রাজনীতিবিদসহ কৌশলে সবাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে।- জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া
সাবেক এ সচিব আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও প্রশাসন বিষয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে যে, এটা কি আসলে পারবে, এদের পক্ষে কি সম্ভব হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও একটা পার্থক্য আছে। আবু হেনার নির্বাচন কমিশন, বিচারপতি রউফের নির্বাচন কমিশন বা আবু সাঈদের নির্বাচন কমিশনের যে একটা ভারীক্কি ছিল, তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচিতি ছিল এটা এ নির্বাচন কমিশনে নেই।’
পোস্টাল ভোটিংয়ে ব্যয় ৪৯ কোটি টাকা, ১৫ কোটিই যাবে পরামর্শকের পকেটে
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভোট কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে আপনি ডিসি ও ইউএনও হিসেবে কাদের পদায়ন করছেন সেটার ওপর। তাদের কমিটমেন্ট, নিরপেক্ষতা, ঈমানের জোর দেখতে হবে। ওই রকম নিবেদিত লোক- আমি সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবো, নির্বাচনের পর কারা ক্ষমতায় আসবে, পদোন্নতি, ভালো পোস্টিং হবে কি না সেটা মাথায় রাখবো না।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে ভালো নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যয় বা আগ্রহ দেখতে পাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি তো তাদের সম্পর্কে ভালো কিছু শুনি না। ড. সা’দত হুসাইন (সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব), আকবর আলি খান (সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব) সম্পর্কে যেমন ভালো কথা মানুষ বলতো, সেভাবে তো তাদের বিষয়ে শুনি না। সেখানে ঘাটতি হয়তো আছে, না হলে মানুষ অন্যদের সুনাম করলে তাদের করে না কেন?’
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘প্রথম দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে নির্বাচন হয়েছিল, ওই ধরনের নির্বাচন যদি ধরি, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মান তো একটু কম ছিল। ২০০৮ সালের মানের নির্বাচন করার মতোও সক্ষমতা বর্তমান প্রশাসনের নেই। প্রশাসন এখনো অগোছালো ও অস্থির। একটি ভালো নির্বাচন করার জন্য ততটা প্রস্তুত বলে মনে হয় না। এর মধ্যে যদি সরকার পারে তাদের প্রস্তুত করতেৃ তবে সেটা কঠিন হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের মনোবলটা ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা যে নাজেহাল হবেন না, সেই নিশ্চয়তাটা যতক্ষণ না পাবেন, ততক্ষণ ভালো নির্বাচন হতে পারে না। ভালো নির্বাচনের জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করেন রাজনীতিবিদরা। তারা না চাইলেও ভালো নির্বাচন হবে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।’
‘মাঠ পর্যায়ে কোনো প্রার্থী পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তার সমর্থকরা নির্বাচন সুষ্ঠু হতে দেবে না। এরা হচ্ছে নির্বাচনি টাউট। এ নির্বাচনি টাউটদের সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভালো নির্বাচন সম্ভব হবে না।’
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, ‘পুলিশের ওপর দিয়ে বড় ধরনের ঝড় গেছে, সেটা তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রশাসনের চেয়েও খারাপ অবস্থা তাদের। পুলিশ চিন্তা করবে নির্বাচনের সময় কোথাও গন্ডগোল হলে আমি যদি বল প্রয়োগ করি পরবর্তী পর্যায়ে চাকরি চলে যাবে কি না। এই ভয়টা দূর করতে হবে। তা না হলে পুলিশ এগিয়ে আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণও বুঝে গেছে আমি যদি মব সৃষ্টি করতে পারি, পুলিশ পিছু হটবে। নির্বাচন সামনে রেখে মবটা হচ্ছে একটা বড় সংকট। এ বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে পারলে, নির্বাচন কিছুটা ভালো হবে। আর অত ভালো নির্বাচন আশাও করা যাবে না। কারণ এ প্রশাসন দিয়ে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’
রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থা
প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে একটি ধর্মভিত্তিক দলের (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী) অনুগতদের বসানো হচ্ছে বলে গত ১১ অক্টোবর অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য জনগণ প্রস্তুত, তারা পূর্বের মতো ডামি নির্বাচন চায় না। তবে দল অনুগত প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।’
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসন অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বিএনপি, এনসিপির পর জামায়াতও গত ২২ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াত অভিযোগ করছে, প্রশাসনের ৭০-৮০ শতাংশ লোক একটি বিশেষ দলের দখলে। কয়েকজন উপদেষ্টাও ঝুঁকে রয়েছেন সেই দলের দিকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলের প্রতি অনুগত কর্মকর্তাদের সরাতে সরকারপ্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা।
গত ২৩ অক্টোবর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত। তবুও একটি দিনে সারাদেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি
প্রশাসন সামর্থ্যের প্রমাণ না রাখলেও তাদের সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি বলেও মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন ‘আপনি যদি যোগ্য লোকদের ডিসি-ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেন, তাদের মোটিভেট করে দেন যে তোমরা ভালো কাজ করবা, আমাদের অনেক দুর্নাম হয়েছে। আমরা যতটুকু বিতর্কিত হয়েছি, সামনে তোমরা আমাকে সেটা ঘুঁচিয়ে দেবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও বিভাগীয় কমিশনাররা যদি মাঠ গরম করতে পারেন, যোগ্য লোক ঠিকভাবে নিয়োগ দিতে পারেন, তারা যদি কাজ করেন, তাহলে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ভালো নির্বাচন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আগে যা করেছে সেটা বাদ দিলাম, যে কোনো সময় তো মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে। জীবনে তো ব্যর্থতা ও ভুলত্রুটি থাকে, সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি এগোতে চাই, আমাদের যদি ওই সাহসটা না থাকে, অঙ্গীকারটা না থাকে তবে হবে না। যদি মনে করে ওমুক দল ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে, আমি তলে তলে এদের সঙ্গে হাত মেলাবো তাহলে তো আর নির্বাচন ভালো হবে না।’
সাবেক এ সচিব আরও বলেন, ‘আমি শতভাগ বিশ্বাস করি, ভালো নির্বাচন করার সুযোগ এ সরকারের এখনো আছে। তারা অনেক পিছনে পড়ে গেছে, কিন্তু এখনো দৌড়ে ধরার সুযোগ আছে। ঘুরে দাঁড়িয়ে সরকার যদি হুংকার দিয়ে বলে, যোগ্যদের ডিসি-ইউএনও হিসেবে রাখে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করার সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনে থাকার সময় আমি অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি নির্বাচনটা করে মূলত ডিসি, ইউএনও, সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা আছে, কিন্তু তারা যখন দেখে ডিসি-ইউএনও, সরকার, নির্বাচন কমিশন ঠিক আছে, তাহলে তারা সাহায্য করে।’
‘তবে সরকার বেতালের হলে ডিসি-ইউএনও কিছু করতে পারবে না। শেখ হাসিনার আমলে যেটা হয়েছে। সরকারের সাপোর্ট তাদের লাগবে’ বলেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ আবদুল আউয়াল মজুমদার।
মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের যতটুকু সময় বাকি আছে, এ সময়ে যদি যোগ্য ও চৌকষ কর্মকর্তাদের ডিসি এবং ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। কারণ একজন যোগ্য ডিসি রাজনীতিবিদসহ কৌশলে সবাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। তবে এটারও কিন্তু সময় চলে যাচ্ছে। কারণ একজন ডিসি নিয়োগ দিলে তার তো গিয়ে এলাকাটা বুঝতে হবে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি জানান। পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তার তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের বাছাই করে নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেন, আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। এখানে যিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, সেই ব্যক্তিকেই আমরা বেছে নেবো। এটি আমার তত্ত্বাবধানে থাকবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা করবো।’
অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক বলেন, ‘আমাদের যারা মাঠ প্রশাসনে আছেন, আমার বিশ্বাস তারা অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে এই দায়িত্ব পালন করবেন। সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার। এই দায়িত্ব আমি নিলাম। আমরা চাইবো নির্বাচনকালীন যে কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকবেন তারা যাতে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকেন।
