স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। চলতি সপ্তাহের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে চায় তারা। বিষয়টি সামনে এলে রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দিক থেকে শক্ত অবস্থান চায় কমিশন।
সূত্র জানায়, কমিশন মনে করছে তারা বাস্তবায়নের যে সুপারিশই দিক না কেন, তা সব দল মানবে না। তা নিয়ে দলগুলোর প্রতিবাদ আসবেই। সব দলকে খুশি করার মতো সুপারিশ তৈরি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারকে এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা না হলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে নির্বাচন বিলম্বিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করব। আমাদের বিবেচনার দিক হচ্ছে, এটাকে বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে কমিশন। সরকার যাতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে পারে, সে তাগাদা দেওয়া হবে। কারণ কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করতে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচ দিন বৈঠক করেছে। সেখানে দলগুলো একমত হতে পারেনি। এমন অবস্থায় কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। যেখানে জুলাই সনদ নিয়ে বিশেষ আদেশ জারি এবং এর বৈধতা নিতে গণভোট আয়োজনের কথা থাকবে। এ ছাড়া থাকতে পারে পরবর্তী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দিয়ে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে খসড়া আদেশটির নাম হতে পারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ (সংবিধান)। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আদেশের খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে
জমা দেবে কমিশন। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আদেশ জারি নিয়ে কারসাজি ঠেকাতেই তারা পূর্ণাঙ্গ ড্রাফট সরকারকে দেবে।
সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মধ্যেই গণভোট কোন প্রশ্নে হবে, তা উল্লেখ থাকবে। সে ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ব্যালটে গণভোটের প্রশ্ন হতে পারে। সেখানে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এ রকম প্রশ্ন রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না, এ প্রশ্নে গণভোট। আরেকটি হতে পারে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি জনগণ মানে কি না। গণভোটের সময় নির্ধারণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে।
১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল স্বাক্ষর করে। বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট না পাওয়ায় সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি। দলটিকে রাজি করাতে সরকার ও কমিশনের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত রোববারও কমিশনের সঙ্গে এনসিপির তিন নেতার বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। বাস্তবায়ন আদেশ জারির পরই দলটি সনদে স্বাক্ষর করবে বলে মনে করে কমিশন।