সোমবার, 20 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

চার কারণে ভোটের সময় ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে

 

স্টাফ রিপোর্টার :  ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ধরনের ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে চারটি কারণ চিহ্নিত করছে সংস্থাটি।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের তৈরি করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি জানা গেছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনাও করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ড্রোন আধুনিক প্রযুক্তি হলেও বেশ কিছু অসুবিধা থাকায় এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হবে। ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো- গোপনীয়তা লঙ্ঘন: ড্রোন ব্যক্তিগত স্থান, অফিস, ভোটকক্ষ নজরদারি করতে পারে যা ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। নিরাপত্তার ঝুঁকি: অননুমোদিত ড্রোনগুলো বিপজ্জনক বস্তু বা বিস্ফোরক বহন করতে পারে এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা জনসমাগমের ওপর হামলা চালাতে পারে। আইন ও বিধি লঙ্ঘনের ঝুঁকি: ড্রোন ব্যবহারের জন্য কিছু নিয়ম ও বিধি রয়েছে, যা অনেকেই অনুসরণ করে না। ফলে ভোটকেন্দ্রে ড্রোন উড্ডয়ন একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি: ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারের ভোটদানের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা অপব্যবহার করতে পারে।

এছাড়াও ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অধীন মোতায়েন করার কথাও ভাবছে ইসি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোটকেন্দ্রে ও নির্বাচনি এলাকায় ফোর্স মোতায়েনসহ এ বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন করার প্রয়োজন হবে।

নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তীতে বহিরাগত প্রভাবশালী ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দমনের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে অঞ্চল, জেলা ও থানা/উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা বিধান অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের নিরাপত্তা বিধান করা প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে পুলিশ বাহিনী কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে দিক-নির্দেশনা ও তদারকি প্রয়োজন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে পার্বত্য জেলার ৩টি নির্বাচনী এলাকার কতিপয় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা-নেওয়ার কাজে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাঙ্গামাটি, বান্দারবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে উক্তরূপ কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, সেসব এলাকায় যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অথবা বিজিবি এর ওয়্যারলেস ব্যবহারের প্রয়োজন হবে। উল্লেখ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের ভোটকেন্দ্রে যোগাযোগের জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় পুলিশের ওয়্যারলেস ব্যবহার করা হয়েছিল।

এদিকে তফসিল পূর্ব ও নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতামত ও পরামর্শের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে।

নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক ডজন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। এগুলো হলো- ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা,  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনে বিদেশি সাংবাদিক ও প্রাক পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান, কৃত্রিম প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধে কৌশল নির্ধারণ, পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরকে মোতায়েন পরিকল্পনা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ, অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতামত/পরামর্শের আলোকে শান্তিশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ, পার্বত্য/দুর্গম এলাকায় নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা প্রদান ও ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে ইসি। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হতে পারে তফসিল।

 

সর্বাধিক পঠিত