সোমবার, 13 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক, চাকরি বাঁচাতে ঢাকা ছেড়ে কর্মকর্তারা সড়কে দুর্ভোগ আরও ২ বছর

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। আট বছর আগে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা গত জুনে। অথচ নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়া তো দূরে, উল্টো প্রকল্প এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে এক ভুতুড়ে পরিবেশ।

সড়কের পরিস্থিতি এতটাই বেহাল যে, বর্তমানে সেসব এলাকার মানুষের কাছে ওই সড়ক হয়ে উঠেছে এক অজানা আতঙ্কের নাম। এখন বিশেষ প্রয়োজন বা বিপদে না পড়লে কেউ ওই সড়কে চলাচল করতে চান না। যদিও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে বাধ্য হয়েই এ সড়কে যাতায়াত করতে হয়।

আট বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন নাগাদ বাড়ানো হয়েছে। তবে বর্ধিত সময়ও পুরো কাজ শেষ হবে না বলে মনে করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)

তথ্য বলছে, আট বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন নাগাদ বাড়ানো হয়েছে। তবে বর্ধিত সময়েও পুরো কাজ শেষ হবে না বলে মনে করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। অধিদপ্তর বলছে, প্রকল্পের মেয়াদ নতুন করে জুন ২০২৭ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। এ প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ওই সড়কের দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও দুই বছর।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সওজ মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে। তবে প্রস্তাবটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনে পৌঁছায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ফের নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো হলে ৫০ কিলোমিটার সড়ক বাস্তবায়নে লেগে যাবে ১০ বছর।

পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজ যেন সঠিকভাবে তদারকি করা হয় এজন্য প্রকল্প পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে নির্দেশনা হয়েছে। অন্যথায় চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি রয়েছে। ফলে চাকরি বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন ঢাকা ছেড়ে প্রকল্প এলাকায় সাইড অফিসে রয়েছেন।

২০১৭ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। একবার সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা

সরেজমিনে দেখা যায়, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কে শীতকালে বা শুকনো মৌসুমে প্রচণ্ড ধুলা আর বর্ষায় সড়কের বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে জমে হাঁটু পানি। পুনিয়াউট থেকে ঘাটুরা মেডিকেল পর্যন্ত সড়কে গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর, বিশ্বরোড গোলচত্বর, সদর উপজেলার রাধিকা থেকে উজানিসার পর্যন্ত অংশটিও। বেহাল সড়কে বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর পর্যন্ত মাত্র ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল ও নৌবন্দরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্যের প্রসার এবং পুরো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দ্রুত ও সহজ পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি হবে, যা পণ্য পরিবহন খরচ কমিয়ে আনবে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে সহায়ক হবে।

আমরা আশা করছি জুন ২০২৭ নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি, ব্যয় বাড়বে না। আমাদের অর্থ বরাদ্দের কোনো সমস্যা নেই।- প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আওয়াল মোল্লা

সওজ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। একবার সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৮২ কোটি। দ্বিতীয় ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে এ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা দেবে সরকার।

সওজ বলছে, ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে মেয়াদ বাড়ালেও প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। মেয়াদ শেষ হলেও কাজ বাকি ৪০ শতাংশ। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে জুন ২০২৭ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে প্রকল্প বাস্তবায়নে কেটে যাবে দীর্ঘ ১০ বছর।

সড়কের বিভিন্ন অংশে কোথাও বড় গর্ত, কোথাও পিচ উঠে গেছে, আবার কোথাও দেবে গেছে। পিচের ঢালাই ও ইট না থাকায় মাটি দেবে ভারী যান চলাচলের সময় আটকে যায়, মাঝেমধ্যে উল্টেও যায়। প্রায়ই লেগে থাকে যানজট

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল আওয়াল মোল্লা বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে জুন ২০২৬ মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না। শতভাগ কাজ শেষ করতে জুন ২০২৭ নাগাদ সময় লাগবে। সেজন্য প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’


সময় বাড়ার সঙ্গে ব্যয়ও বাড়বে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি জুন ২০২৭ নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি, ব্যয় বাড়বে না। আমাদের অর্থ বরাদ্দের কোনো সমস্যা নেই।’

নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘একক কারণ বলা কঠিন। নানান কারণে প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে হয়েছে।’


দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি বাস্তবায়নে ধীরগতি কেন—জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) বলেন, ‘আমাদের উপদেষ্টা (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

বাড়তি সময়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হবে কি না— এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনকলের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তা। পরে ফোন করলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

তবে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব এখনো পরিকল্পনা কমিশনের হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সড়ক পরিবহন উইংয়ের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) আলী রেজা সিদ্দিকী।


সরকারের কোনো প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দেখভাল করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। আশুগঞ্জ-আখাউড়া মহাসড়ক প্রকল্প বিষয়ে আইএমইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব আমাদের হাতে আসেনি। প্রস্তাব পাওয়ার পর আমরা নিজেরাও একটি টিম প্রকল্প এলাকায় পাঠাবো। এরপর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এছাড়া বর্ধিত সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করতে পারবে—এমন শর্তেই মেয়াদ বাড়ানো হবে, অন্যথায় নয়।’


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পায়। ভারতীয় ঋণের শর্তই ছিল ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ দিতে হবে।

প্রকল্পের কাজ তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার, সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে ধরখার পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এবং ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩১ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ। সবগুলো প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ পায় ভারতীয় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০২২ সালের দিকে প্রকল্পের কাজে গতি আসে। দেশীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের পাশাপাশি তিনশ’র মতো ভারতীয় নাগরিক এ প্রকল্পে কাজ করতেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে ভারতে চলে যান। এতে পুরোপুরি থমকে যায় প্রকল্পের কাজ। ফলে সড়কটিতে দুর্ভোগ আরও বাড়ে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে সদর উপজেলার ধরখার পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে কোথাও বড় গর্ত, কোথাও পিচ উঠে গেছে, আবার কোথাও দেবে গেছে। পিচের ঢালাই ও ইট না থাকায় মাটি দেবে ভারী যান চলাচলের সময় আটকে যায়, মাঝেমধ্যে উল্টেও যায়। প্রায়ই লেগে থাকে যানজট। শুষ্ক মৌসুমে সড়কে ওড়ে ধুলা। ফলে যান চলাচলে ভোগান্তি আর জনদুর্ভোগ যেন এ সড়কের প্রতিদিনের চিত্র।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজে আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের ৪৫০ মিটার ও দ্বিতীয় প্যাকেজের সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে ধরখার পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার মিলিয়ে সড়কের সোয়া চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। চলতি বছরের গত ২৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক পরিদর্শন করেন সড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী। দীর্ঘ আলোচনার পর ওই বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভারত থেকে ফিরতে শুরু করেন। সম্প্রতি বেহাল অংশের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।


গত ৮ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহালদশা ও যানজট পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার পথে নিজেই তীব্র যানজটের কবলে পড়েন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরাইল উপজেলার বিশ্বরোড মোড়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর পর তিনি আশুগঞ্জ রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন।


সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথে আশুগঞ্জের সোনারামপুর এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা যানজটে আটকা ছিলেন। এরপর গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। একপর্যায়ে বাহাদুরপুর এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে করে বিশ্বরোডের দিকে রওয়ানা হন তিনি। দুপুর ১টার দিকে সরাইল বিশ্বরোডে পৌঁছান। পরে প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা ও যানজটের ভয়াবহতা দেখে ক্ষোভ ঝাড়েন সড়ক উপদেষ্টা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুটি সড়কে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পের পরিচালক, আশুগঞ্জ-আখাউড়া প্রকল্পের পরিচালকসহ ১২ জন কর্মকর্তাকে প্রকল্প এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ যাত্রীদের জন্য ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওই মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সড়কের বেহাল অংশে চলমান মেরামত কাজ দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথের ১২ জন কর্মকর্তাকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে অস্থায়ী কার্যালয়ে (ক্যাম্প অফিস) সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘যানজটের মূল কারণ ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। হাইওয়ে পুলিশের যে দায়িত্ব পালনের কথা সেটা পালন হচ্ছে না। যানবাহন ব্যবস্থাপনা আগে উন্নতি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ১২ জনকে বলেছি এটিই তোমাদের ক্যাম্প অফিস (সরাইল-বিশ্বরোড)। ঢাকায় সড়ক ও জনপথের অফিসে যাওয়া লাগবে না। এখানে থেকে এ সমস্যার (সংস্কার ও যানজট) সমাধান করতে হবে। এখানে যদি কোনো কর্মকর্তাকে না পাওয়া যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করা হবে।’

সম্প্রতি আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের খানাখন্দ অস্থায়ীভাবে মেরামতের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ কাজ তদারকিতে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে আছেন ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, সড়ক ও জনপথের কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক, ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক, সড়ক ও জনপথের কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথের মনিটরিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্যাকেজ-২) এবং ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্যাকেজ-৩)।

কাজে গতি ফেরাতে কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কেউ ঢাকায় আসবেন না, প্রকল্প এলাকায় থেকে দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু সমাধান করবেন। কমিটির এ ১২ জন কর্মকর্তাই ঢাকা ছেড়ে বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ঢাকা ছেড়ে ২৪ ঘণ্টাই প্রকল্প এলাকায় রয়েছি। প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে ১২ জন কর্মকর্তাই প্রকল্প এলাকায় রয়েছি। এটি ওপরের নির্দেশ। আগে চাকরি বাঁচাতে হবে, তারপর অন্যকিছু।’

 

সর্বাধিক পঠিত