ফুলকি ডেস্ক : নোবেল শান্তি পুরস্কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো। চলতি বছর সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন ভেনেজুয়েলার এই বিরোধী নেত্রী। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বেশ আগ্রহী দেখা গেছে।
এমনকি তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি সাতটি যুদ্ধের ইতি ঘটিয়েছেন। সুতরাং নোবেল পুরস্কার তারই প্রাপ্য। যদিও নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি তার সঙ্গে একমত হতে পারেনি এবং এই পুরস্কারের যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মারিয়া কোরিনা।
দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য তার দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ৫৮ বছর বয়সী এই শিল্পপ্রকৌশলী বর্তমানে গোপনে বসবাস করছেন। ২০২৪ সালে আদালতের রায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
পুরস্কার পাওয়ার পর নোবেল কমিটির ক্রিশ্চিয়ান বার্গ হার্পভিকেনের সঙ্গে ফোনালাপে মাচাদো বলেন, আমি বাকরুদ্ধ... এটা কেবল আমার নয়, সমগ্র ভেনেজুয়েলার জনগণের অর্জন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, “আমি এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি ভেনেজুয়েলার দুঃখভোগী জনগণ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে, যিনি আমাদের আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে পাশে থেকেছেন।
নোবেল কমিটি তাদের বিবৃতিতে জানায়, যখন স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার সাহসী রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
অন্যদিকে হোয়াইট হাউজ এই পুরস্কার প্রদানের সময়সূচি নিয়ে সমালোচনা করেছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতির ঘোষণা দেওয়ার পরপরই নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে পুরস্কার ঘোষণা করে।
পুরস্কার ঘোষণার পরই হোয়াইট হাউজের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চিউং এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, নোবেল কমিটি আবারও প্রমাণ করেছে, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিচুক্তি সম্পাদন, যুদ্ধের অবসান এবং জীবন বাঁচানোর কাজ অব্যাহত রাখবেন। তার হৃদয় একজন মানবতাবাদীর মতো ও এমন কেউ আর নেই যিনি শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়েই পাহাড় সরাতে পারেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে জানুয়ারি থেকে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, তিনি বিশ্বজুড়ে একাধিক সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে নোবেল পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছেন। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই দাবি অনেকটাই অতিরঞ্জিত।
নোবেল ঘোষণার আগের দিনও ট্রাম্প পুনরায় বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যা তিনি নিজের ‘অষ্টম যুদ্ধের অবসান’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তবে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) তিনি যোগ করেন, তারা যা-ই করুক না কেন, আমার তাতে সমস্যা নেই। আমি এটা পুরস্কারের জন্য করিনি; করেছি কারণ এতে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে।
অসলোভিত্তিক নোবেল পুরস্কার বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, ট্রাম্পের নোবেল জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের মতে, তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালের উইলে নির্ধারিত শান্তির আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অপরদিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন, যদিও নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ ছয় মাসের বিতর্ক ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র মাদুরো সরকারের বৈধতা স্বীকার করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে মাদকবাহী জাহাজ আটক ও সামরিক অভিযান পরিচালনা নিয়েও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসব অভিযানে মাচাদো প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, এই অভিযান দুই দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
