বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

ডাকসু-জাকসুর পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বইছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের হাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে বইছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। আবার কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রয়েছে।

প্রায় ৩ যুগ পর আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন


১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও গঠনতান্ত্রিক সংশোধনের অজুহাতে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই নির্বাচন বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার একমাত্র বৈধ মঞ্চটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৩ যুগ পর আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। গত ৩১ জুলাই আচরণবিধি প্রকাশের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাকসু নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। শিক্ষার্থীদের আড্ডায় ফিরে আসছে রাকসু’র পুরোনো গল্প। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, দীর্ঘদিন পর গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ আসছে তাদের মাঝে। এই সুযোগ যেন কোনোভাবে বিতর্কিত না হয়। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চান।

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মো. আমজাদ হোসেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর ড. মো. সেতাউর রহমান জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনায় তারা বদ্ধপরিকর। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি চলছে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কেবল নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। মোট ভোটারের সংখ্যা ২৫ হাজার ১২৭ জন। এবারের নির্বাচনে রাকসুর ২৩টি পদে, প্রতিটি হল সংসদের ১৫টি পদে এবং সিনেটের ৫টি ছাত্র প্রতিনিধি পদে ভোট গ্রহণ হবে।

রাকসু নির্বাচনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে (১৯৮৯) সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী (বর্তমানে বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব) এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে রুহুল কুদ্দুস বাবু নির্বাচিত হন।

৩৫ বছর পর আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন

৩৫ বছর পর সপ্তম বারের মতো হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৫৯ বছরে মাত্র ছয় বার চাকসু নির্বাচন হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। গত ২৮ আগস্ট ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চাকসু নির্বাচন।

সপ্তম চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। তিনি গত ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪টি বিভাগ, ১৪টি হল ও ১টি হোস্টেলের ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে ভোটার তালিকায় রয়েছেন। নির্বাচনের জন্য ১৪টি কেন্দ্র করা হবে। ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে।

চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে, চাকসু হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম। বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাণবন্ত রাখতে ও শিক্ষার্থীদের অধিকার, ন্যায্যতা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিবছর চাকসু নির্বাচনের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ২৭ নভেম্বর

২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ২৭ নভেম্বর এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জকসু) বিধি শিগগিরই অনুমোদিত হবে। অনুমোদিত বিধি অনুসারে জকসুর নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম শুরু হবে ৮ অক্টোবর। এরপর ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জকসু নির্বাচনের নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন হবে ৯ থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে। তফসিল ঘোষণা করা হবে ১৮ অক্টোবর।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ অক্টোবর। ভোটার তালিকা সংশোধন (আপত্তি/অন্তর্ভুক্তিসহ) আগামী ২ নভেম্বর। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র জমা ১২ নভেম্বর; বাছাই করা হবে ১৪ নভেম্বর। মনোনয়নে আপত্তি (যদি থাকে) নিষ্পত্তিকরণ করা হবে ১৬ নভেম্বর। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৭ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৭ নভেম্বর।

এদিকে ৮ অক্টোবর (বুধবার) জকসু নির্বাচনের রূপরেখা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু এর আগের দিন ৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা হাসান। সদস্যসচিব ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা কাকলী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. জুলফিকার মাহমুদ।

৬ নভেম্বর হাকসু ছাত্র সংসদ নির্বাচন

প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (হাকসু) নির্বাচন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. খাদেমুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু হাসান জানান, বুধবার (৮ অক্টোবর) তার সই করা এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত সংবিধি চ্যান্সেলর অনুমোদন সাপেক্ষে, আগামী ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

চুয়েট ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই ২০ বছর

দুই দশক ধরে অচল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চুয়েটেকসু)। জানা যায়, ২০০২ সালের ৪ এপ্রিল চুয়েটেকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। ছাত্রদল–সমর্থিত শফিউল আজম সহ-সভাপতি ও নুরুল আজম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৩ ও ২০০৫ সালে ভোট ছাড়াই ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীদের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচন হয়নি।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ২০০৫ সালে গঠিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে চুয়েটেকসুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে নির্বাচন দাবি তুলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্তও হয়, তারিখও ঘোষণা করা হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু ছয় দিন যেতে না যেতেই প্রশাসন নির্বাচন স্থগিত করে।

২০০৩ সালের কমিটিতে ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মনসুর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের সমঝোতার ভিত্তিতেই ভোট ছাড়াই কমিটি গঠন হয়েছিল। এরপর আর নির্বাচনের আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সংসদ অচল থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর ১০০ টাকা করে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে চুয়েটে ৪ হাজার ৬২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

চুয়েট ছাত্রকল্যাণ অধিদফতরের পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে চুয়েটে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ আছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনও দীর্ঘ দিন ধরে নেই। আমি ছাত্রকল্যাণ অধিদফতরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছি এক বছর ধরে। আজ পর্যন্ত ছাত্র সংসদের দাবি নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেনি। এলে তখন দেখা যাবে।’

১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল কলেজ’ নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের অধীনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম রূপে উন্নীত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি সরকারি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) নামকরণ করা হয়। অন্যদিকে চুয়েটে ছাত্র সংসদ চালু হয় ১৯৭০ সালে। প্রথম ভিপি ছিলেন চুয়েটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোসাদেকুজ্জামান।

নোবিপ্রবি ছাত্র সংসদ চায় ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি)। তবে সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক জরিপে দেখা যায়, ৯১.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায়। অন্যদিকে, এই নির্বাচন না চাওয়ার মধ্যে রয়েছেন ৮.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

তবে জানা যায়, নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ। পাশাপাশি নোবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও নির্দেশনা না থাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘বর্তমানে নোবিপ্রবিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। পাশাপাশি নোবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশনা নেই। আমরা দ্রুত নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত রূপরেখা প্রণয়ন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। উক্ত কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে নোবিপ্রবি প্রশাসন কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।’

ইকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘মুভমেন্ট ফর ইকসু’ গঠন করেছে ইবির সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি’র করিডরে এ কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে ইকসু গঠনের দাবিতে গত ২১ আগস্ট রাতে 'ইকসু গঠন আন্দোলন' ব্যানারে বিভিন্ন বিভাগের ৮ জন শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তারা ইকসু গঠনের দাবিতে গণসই গ্রহণ ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ছাত্র সংসদ করা সহজ। কারণ তাদের গঠনতন্ত্রে আগে থেকেই আইন আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু আইনগত অনুমোদন নেই, সেহেতু এটা কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে আমি ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করবো বলেছিলাম। তবে ছাত্র সংসদ যদি আইনগতভাবে না হয় সেক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সেন্ট্রাল বাজেট হয়, সেখানে ডাকসুর বাজেট হয় এবং ডাকসুর প্রত্যেক সম্পাদকের বিপরীতে বাজেট আছে। এই বাজেট দেওয়ার জন্য একটা লিগ্যাল সেটেলমেন্ট দরকার। এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া।’

এদিকে ইকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলীনূর রহমান, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ মুহাম্মদ রেজওয়ান, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নজিবুল হক, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তফা আরীফ। সদস্য সচিব করা হয়েছে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসানকে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একরামুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ তালুকদার এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার ইমাম হোসেন সিডনী।

খুবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা

ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানান আলোচনা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অল্প সংখ্যক তাদের অধিকার ও দাবি আদায়ে ছাত্র সংসদ চাচ্ছে। অপরদিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ধারা ১৬ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের লিখিত অনুমতি ছাড়া অধ্যাদেশ বলে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল ছাত্র সংসদ, ডিসিপ্লিনের ছাত্র সমিতি ব্যতীত অন্য কোনও ক্লাব অথবা সমিতি অথবা ছাত্র সংগঠন গঠন করা যাবে না।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জানান, তাদের মতে ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম এবং এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টি হতে পারে, যা প্রতিনিধিত্বের বদলে সহিংসতার দিকে ধাবিত করার ঝুঁকি রাখে।

নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী উসামা মুসান্না চৌধুরী বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি উত্থাপনের কোনও অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্ম নেই। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সিনিয়রদের নেতৃত্বে বিভিন্ন ইস্যুর সমাধান করেছেন। তবে ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক অধিকার সচেতন হয়েছেন এবং যেহেতু বর্তমান প্রশাসন সেই আন্দোলনের ফল, তাই তাদের কাছে প্রত্যাশাও বেশি। এজন্য দাবি উত্থাপন ও প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনতে একটি দায়বদ্ধ প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রেজোয়ানুল হক রাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও প্রতিনিধিত্বমূলক প্ল্যাটফর্ম নেই। শিক্ষার্থীরা আবাসন সমস্যা, খাবারের সমস্যা, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াগুলো প্রশাসনের কাছে যথাযথভাবে উত্থাপনের কোনও মাধ্যম নেই। এ জন্য আমি মনে করি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রতিনিধিত্বমূলক প্ল্যাটফর্ম থাকবে, সেটা হতে পারে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা অন্য কোনও মাধ্যম।’

পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তনিমা জান্নাত হাসি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্যাম্পাস রাজনীতিকে খুব একটা পছন্দ করি না। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও একটা ছাত্রী প্রতিনিধিদল প্রয়োজন। আমাদের মেয়েদেরও নানা সমস্যা থাকে, যা সরাসরি প্রশাসনের কাছে বলতে পারি না। আমাদের হলে প্রধান সমস্যা পানি নিয়ে। তাছাড়া কিছু কিছু ডিসিপ্লিনের হলের সিট নিয়ে বৈষম্য দেখা যায়। এর একটা সমাধান দরকার। এজন্য একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম থাকলে মেয়েদের সুবিধা হয়।’

এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে যেহেতু কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কথা উল্লেখ নেই, তাই এ বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। তবে স্কুলের ডিন ও ডিসিপ্লিন প্রধানদের মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের ডিসিপ্লিনভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল। যেখানে প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্ধারণ করার বিষয়টিও আলোচনা হয়। এমন প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাজ করতে সুবিধা হবে। যারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরবে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এই সংক্রান্ত আইন বিষয়ে আমার খুব একটা ধারণা নেই।’

ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

২০০৬ সালের ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ হয়নি। ছাত্র সংসদের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্দোলন করে আসছেন। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের দাবিতে গত ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে কুকসু গঠনের প্রস্তাব ও সুপারিশ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে।

এদিকে কুকসু ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার দাবিতে এখনও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, কুকসুর পথনকশা ঘোষণা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে কালক্ষেপণ করছে। ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘কুকসু প্রতিষ্ঠা আন্দোলন’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র সংসদের বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে ছাত্র সংসদের বিধান নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও একই বিধান। তবে তারা ছাত্র সংসদের বিষয়টি তাদের আইনে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছি। এ ছাড়া আমাদের পাঁচ সদস্যের কমিটি ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেটি নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত বা পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।’

বাকসু গঠনের লক্ষ্যে ৩ সদস্যের কমিটি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রায় ১৫ বছর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। ছাত্র সংসদের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় আন্দোলন করেছেন, এমনকি গণভোটের আয়োজনও করেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) গঠনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত সোমবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্দেশ্যে গঠিত এই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন শিক্ষককে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা হলেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাজিজুর রহমান, আইন বিভাগের প্রভাষক ছোটন আলী এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ উদ্দিন (জাভেদ)।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাকসু গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করলেও কবে নাগাদ কমিটির কাজ শেষ হবে বা সংসদ গঠনের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা স্পষ্ট করেননি রেজিস্ট্রার ড. মো. মুহসিন উদ্দীন। তবে এই কমিটি এখন বাকসু গঠনের প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করবে বলে তিনি জানান।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। গত ১৫ বছর ধরে সেটি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়ে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরার দাবি জানান তারা।

ডুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ, নির্বাচনে আগ্রহ কম শিক্ষার্থীদের

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটি অমান্য করলে বিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

তবে এর মধ্যে সবকিছু উপেক্ষা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ডুয়েট ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে একদল পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, রাজনীতি তাদের অধিকার। তাছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে দলীয় রাজনীতির সম্পর্ক নেই। ছাত্র সংসদ হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সেতু নির্মাণের পন্থা।

ডুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এমন দাবি নিয়ে কোনও শিক্ষার্থী আসেনি। সবাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া ডুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ। আর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও কিছু উল্লেখ নেই।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচনি রোডম্যাপে বলা হয়েছে, গেজেট প্রকাশের পর ৩ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এরপর ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচনি আচরণবিধি প্রণয়ন, ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ১৬ কর্মদিবসের মধ্যে সংবিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিতরণ, দাখিল, যাচাই-বাছাই, আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশসহ সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। এরপর পরবর্তী ১০ কর্মদিবস পর্যন্ত চলবে নির্বাচনি প্রচারণা। রোডম্যাপ অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের সর্বোচ্চ ৫৪ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এতে সম্ভাব্য নির্বাচনের তারিখ ধরা হয়েছে ১১ ডিসেম্বর ২০২৫।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে ছাত্র সংসদের সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠানো হবে। পরবর্তীতে সরকার গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের গেজেট প্রকাশ জরুরি। গেজেট প্রকাশের পরই সম্ভাব্য রোডম্যাপ অনুযায়ী সব কার্যক্রম শুরু হবে। আমি আশা করি শিক্ষার্থীরাও ধৈর্য ধরবেন এবং দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত।

 

সর্বাধিক পঠিত