বৃহস্পতিবার, 9 অক্টোবর 2025
MENU
daily-fulki

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাধ্যক্ষের ‘বাসার কাজে রাজি না হওয়ায়’ চাকরিচ্যুত ৩ কর্মচারীর অবস্থান কর্মসূচি

 

জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে রাজি না হওয়ায় আবাসিক হলের চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী চাকরি ফিরে পেতে টানা ছয় দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

বুধবার (০৮ অক্টোবর) সকাল থেকে ষষ্ঠ দিনের মতো ওই হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী হলেন- ফজিলতুন্নেসা হলের ডাইনিং অ্যাটেনডেন্ট মিরা রানী রায়, চম্পা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী সোমা। তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গত দেড় বছর ধরে হলটিতে কর্মরত ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট তাদের চাকরিচ্যুত করে নতুন করে সিতা রানী, রহিমা আক্তার ও সুমা বেগমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত হল প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এবং তাদের সংগঠন ‌‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের’ সঙ্গে সক্রিয় আছেন বলে জানা গেছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান বলেন, ‘হলের প্রাধ্যক্ষের (নজরুল ইসলাম) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।’

ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামের আউটসোর্সিং কোম্পানির আওতায় তারা ফজিলতুন্নেসা হলে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে আসছিলেন। তবে গত বছর হলটিতে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় গিয়েও আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বলা হয়। এতে কর্মচারীদের অনেকে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে গেলেও ওই তিন জন অস্বীকৃতি জানান। গত এপ্রিল মাসে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও তাদের হল প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে হলের এক ওয়ার্ডেনের মাধ্যমে সমাধান করা হয়। তবে নতুন করে তাদের গত ২৮ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপর চাকরি ফিরে পেতে গত ১ অক্টোবর থেকে তারা হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

ভুক্তভোগী ওই তিন কর্মচারী বলেন, আমাদের যে পদে নিয়োগ হয়েছে আমরা সে পদেই কাজ করবো। হলের সব কাজ আমরা করতে আগ্রহী। কিন্তু হলের প্রভোস্টের বাসায় কাজ করতে যাবো না। প্রভোস্টের বাসায় আমরা কাজ করতে যেতে রাজি না হওয়ার পর থেকেই হুমকি দিয়ে রাখছিল। পরে হঠাৎ শুনি চাকরি নেই। এই চারকির ওপর আমাদের সংসার চলে। এভাবে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, আমরা এখন খাব কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের অফিসে আমরা এটার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ফজিলতুন্নেসা হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ওই তিন কর্মচারী। একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা, বিনা কারণে চাকরিচ্যুত হওয়া মানি না, আমরা হারানো চাকরি ফেরত চাই, আমরা হলে কাজ করতে এসেছি, প্রভোস্ট নজরুল স্যারের বাসায় কাজ করতে নয়।

এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির ডিরেক্টর (অপারেশন) মিনারুল ইসলাম বলেন, মূলত ওই কর্মচারীরা হলের প্রভোস্টের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সেজন্য তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রভোস্টের বাসায় তারা কেন কাজ করবে, সেটা আসলে আমারও প্রশ্ন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও প্রভোস্টেরই আউটসোর্সিং কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা নেই। নিয়োগ, অব্যাহতি বা বদলির ক্ষমতা একমাত্র কোম্পানির। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি হলে সুইপার কম। তাই কোম্পানিকে অনুরোধ করি আরও একজন সুইপার দিতে। তারা পুরোনো কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে চায়নি, বরং তারা অন্যদের কাজেও বাধা দিচ্ছিল বলে জানতে পারি। কোম্পানি নিজ সিদ্ধান্তে তাদের সরিয়ে দেয়।

 

সর্বাধিক পঠিত