ফুলকি ডেস্ক : ২০২৫ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। কোয়ান্টাম মেকানিকসের ক্ষেত্রে তাদের যুগান্তকারী গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কারের জন্য ব্রিটিশ জন ক্লার্ক, ফরাসি মিশেল ডেভোরে এবং মার্কিন জন মার্টিনিসের নাম ঘোষণা করেছে সুইডেনের স্টকহোমের নোবেল কমিটি।
জন ক্লার্কের জন্ম ১৯৪২ সালে, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে। তিনি ১৯৬৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন মিশেল এইচ. ডেভোরে। প্যারিস-সুদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (নিউ হ্যাভেন, কানেকটিকাট) এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
জন এম. মার্টিনিসের জন্ম ১৯৫৮ সালে। তিনি ১৯৮৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক হিসেবে আছেন।
১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালে জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরে ও জন এম. মার্টিনিস একসঙ্গে এমন একাধিক পরীক্ষা পরিচালনা করেন, যেখানে তারা অতিপরিবাহী পদার্থ (সুপারকণ্ডাক্টরস) দিয়ে তৈরি একটি ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্যবহার করেন—যে উপাদানগুলো কোনো বৈদ্যুতিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বিদ্যুৎ পরিবাহন করতে পারে।
এই সার্কিটে অতিপরিবাহী অংশগুলোকে একটি পাতলা অপরিবাহী স্তর দ্বারা আলাদা করা হয়েছিল, যা ‘জোসেফসন জাংশন’ নামে পরিচিত। সার্কিটটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিখুঁতভাবে পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা দেখতে পান, এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। সার্কিট জুড়ে প্রবাহিত চার্জযুক্ত কণাগুলো যেন একত্রে মিলে একটিমাত্র কণার মতো আচরণ করছিল, যা পুরো সার্কিটজুড়ে বিদ্যমান।
এই বৃহদাকার ‘কণাসদৃশ’ ব্যবস্থা শুরুতে এমন এক অবস্থায় থাকে যেখানে কারেন্ট প্রবাহিত হলেও কোনো ভোল্টেজ সৃষ্টি হয় না। সিস্টেমটি সেই অবস্থায় আটকে থাকে, যেন কোনো বাধার পেছনে আটকা পড়েছে।
কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায়—এই সিস্টেমটি তার কোয়ান্টাম স্বভাব প্রদর্শন করে ‘টানেলিং’-এর মাধ্যমে শূন্য ভোল্টেজ অবস্থার সেই বাধা অতিক্রম করে বেরিয়ে আসে। সেই অবস্থার পরিবর্তন শনাক্ত করা হয় ভোল্টেজের উদ্ভবের মাধ্যমে।
এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে এই সিস্টেমটি কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী আচরণ করে—অর্থাৎ এটি কোয়ান্টাইজড, যার মানে হলো এটি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি শোষণ বা নিঃসরণ করতে পারে।
নোবেল কমিটি ফর ফিজিক্সের চেয়ারম্যান ওলে এরিকসন বলেন, ‘এক শতাব্দী পুরোনো কোয়ান্টাম মেকানিক্স এখনও যেভাবে নতুন বিস্ময় উপহার দিচ্ছে, তা সত্যিই অসাধারণ। একই সঙ্গে এটি অত্যন্ত উপযোগীও, কারণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সই আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মূলভিত্তি।’চ
তারা তিন জন একত্রে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা) পুরস্কারের অর্থ পাবেন।