স্টাফ রিপোর্টার : ডালিম ছাড়ানোর ঝামেলা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও এর লালচে রসালো দানাগুলোর স্বাদ ও স্বাস্থ্যগুণ সেই পরিশ্রমকে সার্থক করে তোলে। প্রাচীন এই ফলটি শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যও এক অসাধারণ পুষ্টির উৎস।
ডালিমে রয়েছে পলিফেনল নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকেলজনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এই যৌগগুলোর ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং সার্বিক সুস্থতাও বাড়ায়।
আঁশের চমৎকার উৎস
অর্ধেক কাপ ডালিমের দানায় থাকে প্রায় ৫ গ্রাম আঁশ, যা দৈনিক চাহিদার প্রায় ১৮ শতাংশ পূরণ করে। এই আঁশ হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে- ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি বজায় থাকে।
দুর্গন্ধ রোধে সহায়ক
ডালিমের প্রাকৃতিক উপাদান মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য উন্নত করে ও মুখের দুর্গন্ধ কমায়। নিয়মিত ডালিম খেলে মাড়ির রোগ ও দাঁতের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
ভিটামিন সি-তে ভরপুর
অর্ধেক কাপ ডালিমের দানায় থাকে প্রায় ৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে মৌসুমি অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। ভিটামিন সি প্রোটিন বিপাকেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর যত্নে
ডালিমের রস শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়ায়, যা রক্তনালী শিথিল করে রক্তপ্রবাহ উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডালিমের রস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।
ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ডালিম স্তন, মূত্রথলি, ফুসফুস ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব যৌগ কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, যদিও গবেষকরা এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন।
প্রদাহ কমায়
ডালিমের রস শরীরের প্রদাহজনিত সূচক কমাতে সহায়তা করে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ- তাই নিয়মিত ডালিম খেলে এসব রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
ডালিমের যৌগ মস্তিষ্কের কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি আলঝেইমার ও অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ায়।
পটাশিয়ামের ভাণ্ডার
এক কাপ ডালিমের রসে থাকে প্রায় ৫৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, যা হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে, স্নায়ু কার্যক্রম ও পেশি শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। ফলে এটি ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষায়ও কার্যকর।
কিডনি ও ডায়াবেটিসের যত্নে
গবেষণায় দেখা গেছে, ডালিমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে- প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার এক কার্যকর উপায় হতে পারে ডালিম।