নীলফামারী সংবাদদাতা : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আকস্মিক ঝড়ের আঘাতে অন্তত ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডের ১১টি পাড়ায় এ ঝড় আঘাত হানে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারি বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ প্রবল ঝড় আঘাত করলে মুহূর্তের মধ্যে মাঝাপাড়া, বানিয়াপাড়া, হাজীপাড়া, পোদ্দারপাড়া, জিকরুল মেম্বারের পাড়া, বাবুপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, বৈরাগীপাড়া, মুন্সিপাড়া ও কালিরথানসহ অন্তত ১১টি পাড়া তছনছ হয়ে যায়। ঘরের টিন উড়ে গিয়ে গাছে ঝুলে থাকে।
তারা জানান, ঝড়ে অন্তত ৮টি গরু মারা গেছে এবং বহু গবাদিপশু আহত হয়েছে। প্রায় ১০ হেক্টর জমির ধান, সবজি ও কলার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের তার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিঁড়ে যাওয়ায় প্রায় এক হাজার পরিবার অন্ধকারে রয়েছে।
মাঝাপাড়া ডিসির মোড় এলাকার বাসিন্দা বিজলি বেগম বলেন, ‘সকাল ৮টার সময় ঝড়ে আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। এখন থাকার মতো কোনো জায়গা নেই, খোলা আকাশের নিচে আছি।’
মাঝাপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু বুঝে উঠার আগেই সব শেষ, আমি দিন আনি দিন খাই। ঘর বাড়ি কিভাবে ঠিক করবো আল্লাহ মাবুদ ছাড়া কেউ জানে না।’
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন লিডার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ অপসারণে স্থানীয়দের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। টর্নেডোয় ভেঙে পড়া গাছের কারণে দুর্গত এলাকায় প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
গাড়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. জোনাব আলী বলেন, ‘ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডে অন্তত ১২টি পাড়ায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে আছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নীল রতন দেব বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল টিম কাজ করছে। গুরুতর একজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, তিন হেক্টর কলা, দুই হেক্টর সবজি ও পাঁচ হেক্টর ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্তের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক নাইরুজ্জামান জানান, প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ২ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার ও আশ্রয়স্থল হিসেবে তিনটি প্রাইমারি স্কুলকে প্রস্তুত করে রেখেছি।